Obese children in India: ২০৩০-এ ভারতে গিজগিজ করবে ‘স্থূল শিশু’, আপনার বাচ্চাও এই সমস্যায় ভুগছে না তো?

obese children in India: ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে ২ কোটি ৭০ লক্ষেরও বেশি স্থূল শিশুর জন্ম হতে চলেছে। কীভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করা যাবে?

Obese children in India: ২০৩০-এ ভারতে গিজগিজ করবে 'স্থূল শিশু', আপনার বাচ্চাও এই সমস্যায় ভুগছে না তো?
২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে ২ কোটি ৭০ লক্ষেরও বেশি স্থূল শিশুর জন্ম হতে চলেছে
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 12, 2022 | 10:20 AM

নয়া দিল্লি: সাধারণত, ১৬ বছর বয়সে প্রতিটি ছেলে-মেয়ের জীবনেই বসন্ত আসে। শরীর ও মন – দুই দিক থেকেই তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। কিন্তু, বর্তমানে ভারতীয় শিশু-কিশোরদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই বিষয়টা আলাদা হচ্ছে। তারা ১৬ বছর বয়স হওয়ার অপেক্ষা করছে, যাতে তারা প্রাণদায়ী ‘ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি’ (অল্পে ক্ষুধা মেটানোর জন্য পেট সঙ্কুচিত করা) করতে পারে। কারণ, স্থূলকায় হয়ে না জন্মেও, ১৬ বছর বয়স হওয়ার আগেই তারা ভুগছে অতিরিক্ত ওজন, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায়। যা বর্তমান ভারতের অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শৈশবকালের স্থূলতা, ভারতে একটা উদীয়মান মহামারিতে পরিণত হয়েছে। ইউনিসেফের ‘ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি অ্যাটলাস ২০২২’ অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে ২ কোটি ৭০ লক্ষেরও বেশি স্থূল শিশুর জন্ম হতে চলেছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একেবারে শৈশবে অধিকাংশ শিশুর ওজনই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু, স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সমবয়সীদের চাপ, সহজপাচ্য খাদ্যের প্রতি বিতৃষ্ণা এবং সর্বোপরি জাঙ্ক ফুডের প্রতি আসক্তি এবং বর্তমানে খাদ্য সরবরাহকারী অ্যাপগুলির মাধ্যমে খাবার অর্ডার করার সহজলোভ্যতার মতো সমস্যাগুলির কারণে শিশুদের ওজন বাড়তে থাকে। বিশেষ করে চিকিৎসকরা দেখেছেন, পারমাণবিক পরিবারগুলিতে (বাবা-মা ও সন্তান), কর্মরত বাবা-মায়েরা অফিসের দায়িত্ব সামলে বাড়িতে শিশুকে খুব বেশি সময় দিতে পারেন না। সেই সব বাড়ির শিশুদের মধ্যে খাদ্য সরবরাহকারী অ্যাপগুলি প্রায় জাদুকাঠিতে পরিণত হয়েছে। মোবাইল ফোনে খাবারের অ্যাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের খাবারের অর্ডার করা অধিকাংশের ক্ষেত্রে অভ্যাস, বা কারোর কারোর ক্ষেত্রে আসক্তিতে পরিণত হয়েছে।এই শিশুরা খুব বেশি বাইরেও বের হতে চায় না, খুব বেশি শারীরিক ক্রিয়াকলাপও পছন্দ করে না।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস বা এইমস-এর পেডিয়াট্রিক্স বিভাগের প্রাক্তন সিনিয়র ডায়েটিশিয়ান, ডা. অনুজা আগরওয়াল বলেছেন, “ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে (২০১৯-২১)-এ দেখা গিয়েছে যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৩.৪ শতাংশই অতিরিক্ত ওজনের সমস্যার ভুগছে। ২০১৫-১৬ সালে সংখ্যাটা ছিল ২.১ শতাংশে। আরেকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শহুরে উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবেশে বেসরকারি স্কুলগুলিতে ২০১২ সালের তুলনায় বর্তমানে, ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী ছাত্রছাত্রীদের স্থূলতার হার ২৫ শতাংশ থেকে দ্রুত বেড়ে ৩০ শতাংশ হয়েছে। কোনও স্থূল শিশু ভবিষ্যতে একজন স্থূল প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে এবং স্থূল প্রাপ্তবয়স্করা একটি অসুস্থ প্রজন্ম গঠন করে।”

এ্যাপোলো হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ডা. প্রিয়াঙ্কা রোহাতগি জানিয়েছেন, স্থূলতার সমস্যার পিছনে শিক্ষা-অশিক্ষার কোনও ভূমিকা নেই। তাঁর মতে আগে কোনও ক্লাসে একজন বা দুইজন স্থূল শিশুকে দেখা যেত। বর্তমানে ক্লারে রোগা শিশুরাই ব্যতিক্রম। তাঁর দাবি, খাদ্য সরবরাহকারী অ্যাপগুলির প্রলোভন, কিশোর-তরুণদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। তিনি বলেছেন, “ধরুন আপনি পিজ্জা অর্ডার করছেন। এই অ্যাপগুলিতে সেই সময়ে পপ-আপে অতিরিক্ত কোকা-কোলা, সানডে বা চকোলেট কেকের প্রলোভন দেখানো হয়। যেগুলি অতিরিক্ত ৩০ থেকে ৫০ টাকা দিয়ে অর্ডার করা যেতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে এই অফারগুলি পকেট-বান্ধব। কিন্তু, আসলে আপনার প্লেটে প্রয়োজন নেই এমন খাবার তুলে দেয়। সবচেয়ে বড় ভুল হল ‘স্বাস্থ্য সচেতন খাদ্য’ নামক বিভাগটি। ক্লাউড কিচেনের স্বাস্থ্যবিধির মাত্রা কি কখনও পরীক্ষা করা হয়?”

অ্যাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের খাবারের অর্ডার করা অধিকাংশের ক্ষেত্রে আসক্তিতে পরিণত হয়েছে

আগে বাচ্চাদের কাছে খাবার কেনার সময় প্রক্রিয়াজাত খাবারের অনেক বিকল্প ছিল না, তাই তারা খুব বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করত না। আজকের ছবিটা বদলে গিয়েছে। এইমস-এর পক্ষ থেকে ভারতীয়দের পপকর্ন বা ভুট্টার খই খাওয়ার অভ্যাস কীভাবে বদলেছে সেই বিষয়ে গবেষণা করা হয়েছে। সব বয়সের জন্যই সহজ জলখাবার হল এই পপকর্ন। এইমস-এর গবেষণা বলছে ২০ বছর আগেও কোনও পরিবার একসঙ্গে বসে পাঁচ কাপ পপকর্ন বা প্রায় ২৭০ ক্যালোরি পর্যন্ত গ্রহণ করত। বর্তমানে সেই জায়গায় ১১ কাপ পপকর্ন বা ৬৩০ ক্যালোরি গ্রহণ করা হয়। আরও সমস্যার হল যে, ভারতীয় শিশুরা পেশীর চেয়ে বেশি চর্বি নিয়ে জন্মায়। তাহলে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে?

ডা. প্রিয়াঙ্কা রোহাতগি জানিয়েছেন শিশুদের জীবনের প্রথম এবং দ্বিতীয় বছরে লবণ ছাড়া সমস্ত ফল এবং সবজির স্বাদের সংস্পর্শে আনতে হবে। তাহলেই তাদের অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবারের প্রতি আসক্তি তৈরি হবে না। তিনি বলেছেন, “বাচ্চারা খুব দ্রুত তাদের ফ্লেভার প্রোফাইল বাছাই করে। তাই বাড়িতে রান্না করলেও, কী খাবার তাকে দেওয়া হচ্ছে, সেই সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। জটিল স্বাদ মানেই পছন্দ বিবর্তিত হবে। এমন খাবার তৈরি করুন, যা পরিবারের প্রত্যেকে খাবে। ব্যক্তিগত ভোগের পরিবর্তে খাওয়াকে একটি অংশগ্রহণমূলক পারিবারিক আচরণে পরিণত করুন।”

ডা. অনুজা আগরওয়াল বলেছেন, “স্থূলতায় আক্রান্ত অধিকাংশ শিশুর ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাদের বাবা-মায়েরাও অত্যন্ত আরামের জীবন এবং ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য পছন্দ করে। বাচ্চাদের ওজন কমাতে গেলে, তাদেরকেও সেই প্রক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে। মনে করুন আমাদের খাবারের প্লেটটি একটি পাই চার্ট। এর অর্ধেক ফল এবং সবজি দিয়ে ভর্তি করতে হবে, মূলত উদ্ভিদজাত খাদ্য দিয়ে। এক চতুর্থাংশ হবে প্রোটিন এবং বাকি এক চতুর্থাংশ কার্বোহাইড্রেট। স্বাদযুক্ত জল খাওয়া বন্ধ করুণ। পরিবর্তে ফোটানো জল বেছে নিন। এমনকি রিভার্স অসমোসিস বা আরও ফিল্টারও জল থেকে বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকর খনিজ সরিয়ে দেয়। বাচ্চাদের পেটে কিছু জায়গা রেখে খাওয়ান। একেবারে পেট ভর্তি করে খাওয়াবেন না। পুরস্কার হিসেবে ভাল খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করুন। বদলে একসঙ্গে অল্প হেঁটে আসা বা কিছু মজার আউটডোর কার্যকলাপ করুন।”