Uddhav Thackeray: আলোকবৃত্তে উদ্ধবই, এমভিএ জোট বুঝিয়ে দিল কে আসল নেতা
Uddhav Thackeray MVA main leader: ক্ষমতা হারানোর পরও মহারাষ্ট্রে শিবসেনা (ইউবিটি)-কংগ্রেস-এনসিপির মহারাষ্ট্র বিকাশ আগাড়ি বা এমভিএ জোট এখনও অটুট। শুধু তাই নয়, দলের নাম এবং নির্বাচনী প্রতীক হারানোর পরও, জোটের নেতা হিসেবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকেই বেছে নেওয়া হল।
মুম্বই: ভারতের আর কোনও রাজ্যে বিরোধী জোট দানা না বাঁধলেও, ক্ষমতা হারানোর পরও মহারাষ্ট্রে শিবসেনা (ইউবিটি)-কংগ্রেস-এনসিপির মহারাষ্ট্র বিকাশ আগাড়ি বা এমভিএ জোট এখনও অটুট। শুধু তাই নয়, দলের নাম এবং নির্বাচনী প্রতীক হারানোর পরও, জোটের নেতা হিসেবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকেই বেছে নেওয়া হল। রবিবার (২ এপ্রিল), ছত্রপতি সম্ভাজি নগরে প্রথম যৌথ সমাবেশ করে এই বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে এমভিএ জোট। প্রায় এক লক্ষ লোকের এই জনসভায় উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অশোক চভন এবং বালাসাহেব থোরাট। জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি বা এনসিপি-র পক্ষে ছিলেন অজিত পওয়ার এবং রাজ্য সভাপতি জয়ন্ত পাটিলও। তবে, সভার মধ্যমণি ছিলেন অবশ্যই উদ্ধব ঠাকরে। তিনি আসার আগে সভা শুরুই করা হয়নি। তাছাড়া, সভামঞ্চের একেবারে মাঝখানে একটি বড় কাঠের চেয়ার রাখা হয়েছিল তাঁর জন্য। একমাত্র তিনিই ওই বিশেষ আসন পেয়েছিলেন, বাকি নেতাদের তুলনামূলকভাবে ছোট চেয়ার দেওয়া হয়েছিল। এমনকি, শেষ আকর্ষণ হিসেবে সবার শেষে বক্তৃতা দিতেও ডাকা হয় উদ্ধব ঠাকরেকেই।
সভামঞ্চ থেকে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন উদ্ধব। তিনি হিন্দুত্বের পথ ত্যাগ করেছেন, বিজেপির এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি, গুজরাটের এক আদালত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা জানার দাবি করায়, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালকে জরিমানা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যে কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছেন, তাদের গর্ব করে ঘোষণা করা উচিত ছিল যে তাদের ছাত্র এখন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু হায়! এই ধরনের গর্বের দাবি নিয়ে কেউ এগিয়ে আসছে না।” তাঁর বক্তৃতায় উঠে আসে ভারতীয় সেনা জওয়ান আওরঙ্গজেবের কথাও। বছর তিনেক আগে জম্মু ও কাশ্মীরে, এই জওয়ানকে সন্ত্রাসবাদীরা অপহরণ করে হত্যা করেছিল। সমাবেশের উদ্দেশ্যে উদ্ধব প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “তিনি একজন মুসলমান ছিলেন বলে, আমরা কি তার আত্মত্যাগ ভুলে যেতে পারি?” প্রসঙ্গত, মাস দুই আগে একনাথ শিন্ডে ও বিজেপির জোট সরকার ঔরঙ্গাবাদ শহরের নাম বদলে ছত্রপতি সম্ভাজি নগর করেছে। এই নিয়ে শহরে বিক্ষোভ রয়েছে। সেই পটভূমিতে সম্ভাজি নগরে দাঁড়িয়েই তাঁর এই শহিদ স্মরণ, বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তাঁদের মতে, এমভিএ জোটের নেতা হিসেবে উদ্ধব ঠাকরেকে বেছে নেওয়ার পিছনে বেশ কিছু অঙ্ক রয়েছে। রাজ্যে কংগ্রেসের অস্তিত্ব সঙ্কটে, এনসিপির ভোটও ক্রমে কমছে। এই অবস্থায় উদ্ধব ঠাকরে ভোটারদের ব্যাপক সহানুভূতি পেতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে। আর, দলের নাম ও প্রতীক খোয়ানোর পর, এখন তিনি আগের থেকে অনেক বেশি আক্রমণাত্বকও বটে। উদ্ধব ঘনিষ্ঠ এক শিবসেনা নেতা বলেছেন, “উদ্ধবজি একজন আহত বাঘ। তিনি পাল্টা আক্রমণ চালানোর জন্য সঠিক সুযোগের অপেক্ষা করছেন। যাই হোক না কেন, এটা তার বাবার প্রতিষ্ঠা করা দল। এই দলের উপর অন্য কারোর দাবি তিনি সহ্য করতে পারছেন না। আমাদের প্রচারের মূল বিষয়ও এটাই থাকবে।”
শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একের পর এক কংগ্রেস এবং এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ উঠছে। কিন্তু, উদ্ধব ঠাকরের বিরুদ্ধে সেই ধরনের কোনও অভিযোগ এখনও পর্যন্ত ওঠেনি। যা অবশ্যই তাঁর পক্ষে গিয়েছে। পাশাপাশি, বিজেপির সঙ্গে জোট সম্পর্ক ছিন্ন করার পর, অপ্রত্যাশিত ভাবে মুসলিম সমাজের মধ্যে তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের মুসলিম ভোট কংগ্রেস, এআইমিম এবং সমাজবাদী পার্টির মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যেত। কিন্তু , মুসলিম সমাজ উদ্ধব ঠাকরের মধ্যে একজন শক্তিশালী নেতাকে খুঁজে পেয়েছে, যিনি তাদের স্বার্থে লড়াই করবেন। তাই, সেই বিচারেও জোটের নেতা হিসেবে উদ্ধবই সবথেকে ভাল বিকল্প।
আগামী নির্বাচনগুলিতে শিবসেনা (ইউবিটি), কংগ্রেস এবং এনসিপি, এমভিএ জোট হিসেবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করছে। গত মাসে পুনের কসবা পেঠের উপনির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবেই লড়েছিল তারা। যার জেরে ২৭ বছর পর ওই আসনে পরাজিত হয় বিজেপি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, জোট অক্ষত রাখতে পারলে, পুরসভা-পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপিকে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। জোট অক্ষত থাকলে তা যে উদ্ধব ঠাকরেকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে, তা এখনই বলে দেওয়া যায়।