আদালতের প্রতি সরকারের কোনও সম্মান নেই! ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছে? কেন্দ্রকে ‘সুপ্রিম’ ভর্ৎসনা
Supreme Court : নির্দেশ না মানলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
নয়াদিল্লি : দেশের বিভিন্ন ট্রাইবুনালে পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। বারবার বলা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর এই নিয়েই এবার সুপ্রিম কোর্টের রোষানলে পড়তে হল কেন্দ্রকে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামন বলেন, “আমাদের মনে হচ্ছে, আদালতের প্রতি সরকারের কোনও সম্মান নেই।” কিছুটা ধমকের সুরেই বলেন, ” কেন্দ্র আমাদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছে।”
দেশের ট্রাইবুনালগুলিতে যে ফাঁকা পদ পড়ে রয়েছে, সেগুলিতে নিয়োগের জন্য কেন্দ্রকে এক সপ্তাহের সময় দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এই মর্মে নোটিসও পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রকে। ১৩ সেপ্টেম্বর এই সংক্রান্ত বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করা হয়েছে।
তবে একাধিকবার বলার পরেও কেন্দ্রের থেকে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট। আজ প্রধান বিচারপতি এন ভি রামন, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওয়ের ডিভিশন বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। প্রধান বিচারপতি এন ভি রামন জানিয়েছেন, ” আমরা বীতশ্রদ্ধ। আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে কোনও সংঘাতে যেতে চাই না।” কেন্দ্রও যে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে কোনও সংঘাত চায় না, সেই কথাও সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।
প্রসঙ্গত, গতকালই কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজুজুর সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি এন ভি রামন। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এন ভি রামনকে বলতে শোনা গিয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগের সময় একেবারেই দেরি করে না। চটজলদি নিয়োগ প্রক্রিয়া সেরে নেয়। আর এরপরেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাহলে ট্রাইবুনালগুলিতে এত শূন্য়পদ কেন রয়ে গিয়েছে। যদিও তখন সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর করেননি তিনি।
ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইবুনাল এবং ন্যাশনাল কোম্পানি ল অ্যাপিলেট ট্রাইবুনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ট্রাইবুনালে এখনও পদ ফাঁকা রয়ে গিয়েছে। এই ট্রাইবুনালগুলি জাতীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপভোক্তা বিষয় ট্রাইবুনাল এবং সশস্ত্র বাহিনীর ট্রাইবুনালেও শূন্যপদ রয়ে গিয়েছে। ফলে অনেক মামলা আটকে থাকছে। আর এই নিয়েই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আজ একের পর এক ক্ষোভ উগরে দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।
কেন্দ্রের হয়ে সলিসিটর জেনারাল সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে দুই মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলবে। সলিসিটর জেনারেলের এই বক্তব্য শোনার পর আরও বিরক্ত হয়ে যায় আদালত। বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও বলেন,”এই শূন্যপদগুলি দুই বছর ধরে ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তাহলে এতদিন কেন নিয়োগ করা হয়নি। এভাবে ফাঁকা রেখে রেখে আপনারা ট্রাইবুনালগুলিকে তুলে দিতে চাইছেন।”
নতুন ট্রাইবুনাল সংশোধনী আইন নিয়েও আজ সুপ্রিম কোর্টের রোষানলে পড়লে হয় কেন্দ্রকে। বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, এটিই এখন একটা ‘প্যাটার্ন’ হয়ে গিয়েছে। আমরা একটি আইন বাতিল করি, তো নতুন একটা নিয়ে আসা হয়। এর আগেও এই একইধরনের একটি আইন সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দিয়েছিল ‘অসাংবিধানিক’ বলে।
প্রধান বিচারপতি এন ভি রামন এদিন সলিসিটর জেনারেলের কাছে তিনটি প্রস্তাবের মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নেওয়ার কথা বলেন। হয়, ট্রাইবুনাল সংশোধনী আইন রদ করা হোক, নাহলে সব ট্রাইবুনাল বন্ধ করে দেওয়া হোক। আর তাও নাহলে, সুপ্রিম কোর্টই ট্রাইবুনালগুলির জন্য নিয়োগ করবে। আর এই তিনটির মধ্যে কোনওটিই যদি না হয়, তাহলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে বলেও ধমক দিয়ে রাখেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। আরও পড়ুন : তদন্তে কটা পাশ, কটা ফেল? সিবিআইয়ের ‘মার্কশিট’ দেখতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট