মহুয়াকে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস বিজেপির

লোকসভায় মহুয়ার মন্তব্য ছিল, সে দিনই ভারতীয় বিচারব্যবস্থা তার পবিত্রতা হারিয়ে ফেলেছিল যখন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যৌন নির্যাতন মামলায় অভিযুক্ত হন এবং নিজের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তের দায়িত্ব নিজেই নেন

মহুয়াকে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস বিজেপির
অলংকরণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Mar 09, 2021 | 12:12 AM

নয়া দিল্লি: সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে লোকসভায় মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra) কে স্বাধিকার ভঙ্গের (Privilege Motion) নোটিস পাঠালেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে (Nishikant Dubey)। আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে তাঁর প্রতিক্রিয়া চাওয়া হয়েছে এই নোটিসে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাজেট অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণের আলোচনার সময় মহুয়া দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করেন। এক জায়গায় তিনি বলেন, সে দিনই ভারতীয় বিচারব্যবস্থা তার পবিত্রতা হারিয়ে ফেলেছিল যখন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যৌন নির্যাতন মামলায় অভিযুক্ত হন এবং নিজের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তভার নিজেই নেন। এদিকে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির (CJI) বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার প্রসঙ্গ তোলায় মহুয়ার বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী (Pralhad Joshi)। অন্যদিকে তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় কৃষ্ণনগরের সাংসদের পাশে দাঁড়িয়ে দাবি করেন, মহুয়া মৈত্র শুধু প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বলেছেন, কারও নাম উনি করেননি। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে কোনও মন্তব্য করা আইনত অসঙ্গত নয় বলে দাবি করেন তিনি। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদও তাঁর অবস্থানে অনড় থাকেন। এই প্রেক্ষিতে জানা যায় মহুয়ার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করছে না কেন্দ্র। কিন্তু পরে ১০ ফেব্রুয়ারি মহুয়ার বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ দায়ের করেন ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে।

ভারতীয় সংবিধানে পর ১২১ অনুচ্ছেদ তুলে ধরে নিশিকান্ত অভিযোগ করেছেন, দেশের প্রধান বিচারপতি বা হাইকোর্টের বিচারপতিকে নিয়ে লোকসভায় অভিযোগ করতে পারেন না কোনও সাংসদ। কিন্তু প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে মহুয়া একাধিকবার মন্তব্য করে লোকসভা কার্যপ্রণালীর ৩৫৬ ধারা লঙ্ঘন করেছে বলে নোটিসে উল্লেখ করেন বিজেপি সাংসদ। তাঁর আরও অভিযোগ, লোকসভার কার্যবিবরণী থেকে মহুয়ার এই বক্তব্য মুছে দেওয়া হলেও বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় এবং একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়। তাই মহুয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা ও তাঁর সদস্যপদ বাতিলের আর্জি জানান বিজেপি সাংসদ।

প্রসঙ্গত, শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির পদে থাকাকালীন ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল রঞ্জন গৈয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ প্রথম সামনে আসে। জুনিয়র হিসেবে কাজ করার সময় ২০১৮-র অক্টোবরে গগৈ তাঁর উপর যৌন নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ করেন ওই মহিলা। সংবাদমাধ্যমে রিপোর্টটি যে দিন প্রকাশিত হয়, সে দিন আদালতর কাজকর্ম বন্ধ ছিল। কিন্তু রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার পরই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলার শুনানি শুরু করে গগৈ, বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং সঞ্জীব খন্নার ডিভিশন বেঞ্চ এবং যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে। লোকসভায় মহুয়ার মন্তব্যের পর এই সংক্রান্ত একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। তা খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনার পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। আদালতের দাবি, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং কিছু প্রশাসনিক বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গগৈ। তার জন্য তাঁকে ফাঁসানো হয়ে থাকতে পারে।

আরও পড়ুন:যৌন হেনস্থা প্রসঙ্গ তুলে সংসদে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিশানা মহুয়ার

এদিকে তাঁকে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস দেওয়ার প্রেক্ষিতে এপর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি তৃণমূল সাংসদ।