আমেরিকার ভোট আসে মহাকাশ থেকে, আর ভারতকে যেতে হয় হিমালয়ে!

তবে মহাকাশচারীদের ভোট দেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। বিগত মার্কিন নির্বাচনগুলিতেও (Election) মহাকাশ থেকে ভোট এসেছে।

আমেরিকার ভোট আসে মহাকাশ থেকে, আর ভারতকে যেতে হয় হিমালয়ে!
প্রতীকী চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Nov 27, 2020 | 10:01 AM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: করোনা অতিমারির ফলে বদল এসেছে মার্কিন ভোট প্রক্রিয়ায় (US Election)। বিগত বছরগুলির তুলনায় সংখ্যা বেড়েছে আগাম ভোটের। আগাম ভোট এসেছে মহাকাশ থেকেও। আন্তর্জাতিক স্পেশ স্টেশন থেকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন মার্কিন মহাকাশচারী কেট রুবিনস। যা থেকে স্পষ্ট নির্বাচনে প্রত্যেকটি ভোট ঠিক কতটা মূল্যবান।

তবে মহাকাশচারীদের ভোট দেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। বিগত মার্কিন নির্বাচনগুলিতেও (Election) মহাকাশ থেকে ভোট এসেছে। কিন্তু যেখানে আমেরিকায় ইমেল মারফত আগাম ভোট হচ্ছে। ভোট আসছে মাহাকাশ থেকে, সেখানে কতটা এগিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের ভোট পরিকাঠামো?

তবে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার ভোট পরিকাঠামোর তুলনা কোনও অংশেই খাটে না। কারণ ২০১৯ সালের নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী ভারতে ভোট দেওয়ার যোগ্যতা ছিল ৯০ কোটি মানুষের। সেখানে মার্কিন নির্বাচন ২০২০ তে সর্বোচ্চ ভোট পড়ার সম্ভাবনা ১৯ কোটি। তবে আমেরিকায় যেমন মহাকাশ থেকে ভোট আসে, তেমনই ভোটগ্রহণে ভারতের অত্যন্ত অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পন্ন স্থানেও পৌঁছে যায় ইভিএম।

US Election

কেট রুবিনস

আমেরিকার মহাকাশ, ভারতের তসিগাং:

বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতম ভোটগ্রহণ কেন্দ্র তসিগাং ভারতেই। সমতল থেকে ১৫ হাজার ২৫৬ ফুট উঁচু বুথে ভোটার সংখ্যা ৪৯। হিমালয়ের গা বেয়ে সেখানে পৌঁছে যান প্রিসাইডিং অফিসাররা। সমতল থেকে ৯ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে কা গ্রামের ভোট গ্রহণ কেন্দ্র। সেই বুথে ভোটার সংখ্যা ১৬। সেখানেও ভোট নিতে পৌঁছে যায় নির্বাচন কমিশন।

India Election

ছবি- সংগৃহীত

গুজরাটের গির অরণ্যের মধ্যে অবস্থিত বানেজ বুথে ভোটার সংখ্যা মাত্র এক। একমাত্র ভোটার দর্শানন্দের জন্য সিংহ, কুমিরের ভয়কে সঙ্গী করেই ভোট গ্রহণের দিন সেখানে পৌঁছন পোলিং অফিসাররা। প্রত্যেক বছর ভোট দেন দর্শানন্দ। সেই বুথে ভোট পড়ে ১০০ শতাংশ। অরুণাচল প্রদেশের মালোগাম গ্রামের একটি বুথেও ভোটার সংখ্যা এক। সেখানে একমাত্র ভোটটি দেন একজন মহিলা। পোলিং অফিসাররা প্রায় ১ দিনের লম্বা রাস্তা অতিক্রম করে পৌঁছন সেই বুথে।

মার্কিন হাইস্পিড ইন্টারনেট, ভারতের রানার:

ভারতের এমন অনেক ভোট গ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে যেখানে না আছে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা, না রেল। ভরসা বায়ু সেনার হেলিকপ্টার কিংবা লম্বা ট্রেক। অরুণাচল প্রদেশের গান্ধীগ্রাম বুথ গ্রহণ কেন্দ্রেই পৌঁছতে পোলিং অফিসারদের হাঁটতে হয় টানা ৮ ঘন্টা। ছত্তীসগঢ়ের অবুজমর ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছতে পোলিং অফিসারদের হেঁটে পেরতে হয় মাওবাদী অধ্যুষিত বিস্তর এলাকা। অসমের বিভিন্ন কেন্দ্রে পৌঁছতে অতিক্রম করতে হয় ঘন জঙ্গল। এত প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করেই সম্পন্ন হয় ভারতের নির্বাচন প্রক্রিয়া। যেখানে মার্কিন ভোটে ভোট গ্রহণের অন্যতম ব্যবস্থা ইমেল। ভারতের রয়েছে পোস্টাল ব্যালট। তবে সেই পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুবিধা নির্দিষ্ট ব্যক্তিরাই পান।

ভারতে (Indian Election) কারা পান পোস্টাল ব্যালটের সুবিধা?

সেনাবাহিনীর সদস্যরা কিংবা রাজ্য পুলিসের কোনও আধিকারিক কর্মসূত্রে বাইরে রয়েছেন, তাঁরা পান পোস্টাল ব্যালটের সুবিধা। ভারত সরকারের যেসব কর্মীরা বিদেশে রয়েছেন তাঁরাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারেন। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী পোস্টাল ব্যালটের সুবিধা পাবেন সে সব আধিকারিকের স্ত্রীরাও। পোস্টাল ব্যালটের সুবিধা পান ভোট প্রক্রিয়া সঙ্গে যুক্ত কর্মীরাও। জেলে থাকা বন্দিরা ভোট দিতে পান না তবে পোস্টাল ব্যালটের সুবিধা পান আটক থাকা ব্যক্তি।

উল্লেখ্য, গত বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে সংশোধিত হয় ১৯৬১ সালের নির্বাচনী আইন। যেখানে বলা হয়, ৮০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিরা পোস্টাল ব্যালটের সুবিধা পাবেন। কিন্তু ভারতে এই বদল যখন ২০১৯ সালে আসছে, তখন ১৯৯৭ সাল থেকেই আমেরিকায় মহাকাশ থেকে ভোট গ্রহণের আইন রয়েছে।

করোনা অতিমারির সময় ভারতের নির্বাচন কমিশন বিহার ভোটে বুথ সংখ্যা বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছে। আমেরিকায় বুথ সংখ্যা কমিয়ে ইমেলের মাধ্যমে ভোট গ্রহণে জোর দিয়েছে। আগাম ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক পরিকাঠামো তৈরির অন্যতম অন্তরায় জনসংখ্যা এবং শিক্ষার হার। প্রতি বছর বাড়ি থেকে দূরে থাকার জন্য ভারতে ভোট দিতে পারেন না প্রায় ১৯ কোটি মানুষ। আমেরিকায় এবছর সর্বোচ্চ ভোট পড়ার সংখ্যাই ১৯ কোটি। তাই ইমেলে ভারতের ভোট অনেকাংশেই সমস্যার। এছাড়াও ভারতের একাধিক অঞ্চল রয়েছে যেখানে ইন্টারনেট উপলব্ধ নয়, সে সব স্থানে ইভিএম ছাড়া সম্ভব নয় ভোট গ্রহণ। তাই আমেরিকায় যখন ইমেল, ভারতের মূল ভরসা ইভিএম।