ভোটের আগে কি ভাইরাসের অস্তিত্ব টের পায়নি বিরোধীরা?

মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র সরকারকে দোষারোপ করলে এখন আর সংক্রমণ থামবে না। বর্তমানে প্রয়োজন সরকারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা।

ভোটের আগে কি ভাইরাসের অস্তিত্ব টের পায়নি বিরোধীরা?
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 13, 2021 | 7:37 PM

জ্যোতির্ময় রায়: করোনা সংক্রমণে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ আজ ত্রস্ত। বিশ্বের কোনও দেশই প্রস্তুত ছিল না শতাব্দীর এই মহামারির জন্য। এমনকি, বিশ্বের উন্নত দেশগুলির স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থাও অচল হয়ে পড়ে মারণ ভাইরাসের কাছে।

দেশে করোনা সংক্রমণের মাঝে আক্সিজেন আর প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাবে প্রাণ হারাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। আক্রান্তদের সরকারি পরিকাঠামোয় পর্যাপ্ত এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। দেশের বিশাল জনসংখ্যা, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অদূরদর্শিতা ও পরস্পর সামঞ্জস্যতার অভাব, করোনা নিয়ে বিরোধীদের রাজনীতি আর সাধারণ জনগণের উদাসীনতা, গোটা পরিস্থিতিকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে।

সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের পাশাপাশি আইসিইউ আর অক্সিজেন শয্যার অভাব, অক্সিজেন ও ওষুধের কালোবাজারি, শ্মশান ঘাটে বা কবরখানায় ফেলে আসা পিপিই কিটকে পুনরায় বিক্রি, অ্যাম্বুলেন্সের মর্জিমতো টাকা আদায়ের জেরে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে বেঘোরে মারা পড়ছে সাধারণ মানুষ।

কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের কাছে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, চাহিদার তুলনায় অক্সিজেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের অপ্রতুল সরবরাহ, এবং তার ফলে রমরমিয়ে বাড়তে থাকা কালোবাজারি। সরকার যুদ্ধকালীন তৎপরতায় অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করলেও কিছু বিবেকহীন ব্যক্তির অমানবিক লালসা এই প্রচেষ্টাকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ নিত্য কালোবাজারি করা পাণ্ডাদের ধরপাকড় করলেও দ্রুত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবে এতে লাগাম টানা যাচ্ছে না।

কিন্তু এই অতিমহামারি কালে কালোবাজারি রোখা সম্ভব কীভাবে? প্রথমত, অক্সিজেন সিলিন্ডারের কালোবাজারি থামাতে হলে সরকারের উচিত নিয়ম করে প্রতিটি সরকারি এবং বেসরকারি অক্সিজেন সিলিন্ডারের গায়ে জিপিএস চিপ লাগানো। তাহলে প্রতিটি সিলিন্ডারের উপর ২৪ ঘণ্টা নজর রাখা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে অন্যান্য আরও অনেক উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে যার মাধ্যমে প্রতিটি রেমডেসিভির ইঞ্জেকশন বা অন্যান্য জীবনদায়ী ওষুধের উপর নজর রাখা সম্ভব।

এর জন্য প্রয়োজন রাজ্যস্তরে একটি পোর্টাল বা অ্যাপ্লিকেশন। যার মাধ্যমে প্রতিটি জিনিসের বিস্তারিত তথ্য-সহ উল্লেখ করা থাকবে আধিকারিকের নাম, চিকিৎসকের নাম, রোগীর নাম, হাসপাতালের নাম। যাবতীয় তথ্য সেই অ্যাপ বা ওয়েবসাইটেই পাওয়া যাবে। এতে যেমন সরকার এবং আমজনতা লাভবান হবেন, তেমনই কালোবাজারি রুখতে এই অ্যাপের একটা বড় ভূমিকা নিতে পারে। সাধারণ মানুষ চাইলে যাতে নিজের নাম গোপন রেখে এখানে কালোবাজারির সন্ধান দিতে পারে, এমন প্রযুক্তিও রাখা দরকার এই অ্যাপে। ডিজিটাল ভারতে এই অভাবনীয় সঙ্কটের মোকাবিলায় ডিজিটাল প্রযুক্তির সদ্বব্যবহার করা উচিত সরকারের।

মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র সরকারকে দোষারোপ করলে এখন আর সংক্রমণ থামবে না। বর্তমানে প্রয়োজন সরকারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা। সীমিত সঙ্কুলানের মধ্যে কীভাবে সংক্রমণ রোখা যায় তার জন্য হাত বাড়িতে দিতে হবে সকলকে।

আরও পড়ুন: বড় খবর: অন্তঃসত্ত্বা কিংবা সদ্যোজাত সন্তানের মায়েরা কি আদৌ করোনার টিকা নিতে পারবেন? প্রকাশ্যে সত্যতা

দেশে করোনা সংক্রমণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দোষারোপ করছে বিরোধীরা। সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য দেশের নির্বাচনী জমায়েত ও ধর্মানুষ্ঠানকেও দোষারোপ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু এটা ভুললে চলবে না যে, সময়মতো নির্বাচন করানো প্রত্যেকটি সরকারের সাংবিধানিক কর্তব্য এবং ভোট দেওয়া জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার। ভোটের প্রাক্কালে কেন বিরোধীরা নির্বাচন স্থগিত রাখার দাবী নিয়ে শীর্ষ আদালতে গেল না, এই ক্ষেত্রে সেই প্রশ্নেও তোলা যেতেই পারে। তখন কি করোনা সংক্রমণ নিয়ে অবগত ছিল না বিরোধী দলগুলি?

এটা ঠিক যে সরকার কুম্ভমেলার মতো ধর্মীয় সমাবেশে বাধা দেয়নি, সরকার এখানে কর্তব্যচ্যুত, তাই বিষয়টি নিয়ে সরকারকে এখন কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। সঙ্গে এটাও ঠিক যে, সরকার আমাকে বা আপনাকে বাধ্য করেনি সেই সমস্ত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। জনগণ স্বেচ্ছায় সেখানে গিয়েছেন। তাই অভিযোগের আঙুলটা সমানভাবে নিজেদের দিকেও তোলা যেতে পারে। সাধারণ মানুষ তাহলে কবে নিজের ভালোটা বুঝবে? রাজনীতিকদের প্রলোভনে পা না দিয়ে নিজের অধিকারের জন্য দেশের আইন আর সংবিধানের ওপর কবে আস্থা রাখবে মানুষ!

আরও পড়ুন: ‘কাজ নেই, টাকা নেই কীভাবে বাঁচবে ওরা?’ পরিযায়ীদের সাময়িক ভরনপোষণের দায়িত্ব নিক কেন্দ্র: সুপ্রিম কোর্ট