AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

দিল্লিতে প্রতি ঘণ্টায় ১৪ জন প্রাণ হারাচ্ছেন! ‘বাঁচতে হলে টিকা নিন’, দাওয়াই বিশেষজ্ঞদের

বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে সর্বাধিক দ্রুত টিকাকরণ করোনাকে প্রতিরোধ করতে পারে।

দিল্লিতে প্রতি ঘণ্টায় ১৪ জন প্রাণ হারাচ্ছেন! 'বাঁচতে হলে টিকা নিন', দাওয়াই বিশেষজ্ঞদের
ফাইল ছবি- পিটিআই
| Updated on: Apr 24, 2021 | 5:25 PM
Share

জ্যোতির্ময় রায়: দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে। সংক্রমণের গতি হু হু করে বাড়ছে। দেশের রাজধানীতে প্রতি ঘণ্টায় ১৪ জন প্রাণ হারাচ্ছেন। কয়েকদিন আগেই ভারতের মতো একই অবস্থা ছিল বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলির। এক সময় ব্রিটেন, স্পেন, ইজরায়েল, ইতালি, আমেরিকার মতো দেশগুলিতে করোনা সংক্রমণের গতি আজকের ভারতের মতই প্রখর ও সঙ্কটপূর্ণ ছিল। এই দেশগুলিতেও চিকিৎসা পরিকাঠামো করোনাভাইরাসের কাছে লুটিয়ে পড়েছিল। সেখানেও মাস্ক, শয্যা, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, পিপিই কিটের সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। তবে এখন এই দেশগুলির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত। করোনা যুদ্ধ জয় করতে না পারলেও, টিকাকরণের মাধ্যমে অনেকটা নিয়ন্ত্রনে সংক্রমণ। বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে সর্বাধিক দ্রুত টিকাকরণ করোনাকে প্রতিরোধ করতে পারে। ইতিমধ্যে বিশ্বের ৬ টি দেশে টিকাকরণের ইতিবাচক ফলাফল দেখা গিয়েছে।

ব্রিটেনের ৪৯% জনগণকে টিকা দেওয়ার ফলে সংক্রমণ ৯৭% হ্রাস পায়

টিকা দেওয়ার ইতিবাচক ফলাফলের সবচেয়ে বড় উদাহরণ ব্রিটেন। গত বছর ৮ ডিসেম্বর সেখানে টিকাকরণ শুরু হয়েছিল। তখন সেখানে দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছিলেন। হাসপাতালে শয্যার অভাব দেখা গিয়েছিল। প্রতিদিন ১,০০০ থেকে ১.২০০ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছিলেন। টিকাকরণের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে সংক্রমণের গতি ক্রমাগত হ্রাস পায়। এখন প্রতিদিন কেবল এক থেকে দুই হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন এবং ১৫ থেকে ২০ জন প্রাণ হারাচ্ছেন। করোনা রুখতে জারি হওয়া প্রায় সকল বিধিনিষেধ বর্তমানে প্রত্যাহার করে নিয়েছে সে দেশের সরকার। আগের মতোই স্কুল ও কলেজে আবার পঠন-পাঠন শুরু হয়েছে।

ইজরায়েলে ৬১ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছেন

ইজরায়েল এখন মাস্ক বাধ্যতামূলক নয়। স্কুল-কলেজ, ব্যবসা আবার চালু হয়েছে। বাজার খোলা হচ্ছে, পর্যটকরা আসছেন। ইজরায়েল করোনাকে প্রায় হারিয়েই ফেলেছে। এই সব সম্ভব হয়েছে, কারণ এ পর্যন্ত সেখানকার ৬১% মানুষ করোনা টিকা পেয়ে গিয়েছেন। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ৯০% মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে এখানে প্রতিদিন ১০ থেকে ১১ হাজার মানুষ সংক্রমিত হতেন, যেখানে এখন স্রেফ ১০০ জন সংক্রমিত হচ্ছেন। প্রাণ হারাচ্ছেন ১-২ জন।

আমেরিকাতে টিকাকরণের পর সংক্রমণ ৮০% কমেছে

যুক্তরাষ্ট্রে সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারী মাস পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের অবস্থা বর্তমান ভারতের মতোই ছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন ১ থেকে ৩ লক্ষ মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় একের পর এক জনসভায় মাস্কহীন জনসমাগমের ফলে প্রতিদিন ২ থেকে ৬ হাজারের মত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে বাইডেন প্রশাসন। মোট জনসংখ্যা ৩৯.৫৬ শতাংশ মানুষ করোনা টিকা পেয়ে গিয়েছেন। এই দ্রুত টিকাকরণের ফলে সংক্রমণের গতি ৮০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ১-৩ লক্ষ মানুষ করোনা আক্রান্ত হতেন, এখন সেখানে দৈনিক সংক্রমণ ৫০ থেকে ৬০ হাজারে নেমে গিয়েছে।

স্পেন, ফ্রান্স এবং জার্মানিতেও উন্নতি

টিকাকরণের ফলে স্পেন, ফ্রান্স এবং জার্মানিতেও করোনা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হয়েছে। জানুয়ারিতে স্পেনে ২৫-৩০ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছিলেন যা এখন ৮-১০ হাজারে নেমে গিয়েছে। সেখানে ২০% মানুষ করোনা টিকা পেয়েছেন। একইভাবে, ফ্রান্সের ১৮.৭৩% মানুষ করোনা টিকা পেয়েছেন। সেখানেও দৈনিক সংক্রমণ প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। জার্মানিতে ২০ শতাংশের বেশি মানুষ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর মৃত্যুহার কমেছে। জানুয়ারিতে যেখানে রোজ এক থেকে দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছিলেন এখন তা ২০০-৪০০ হয়েছে।

ভারতের টিকার ফল ভাল

দেশে এখন দু’টি প্রতিষেধকের মাধ্যমে টিকাকরণ হচ্ছে। কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের মাধ্যমে দেশে মোট করোনা প্রতিষেধক পেয়েছেন ১৩ কোটিরও বেশি মানুষ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পরে ১৭,১৪৫ জন এ পর্যন্ত করোনার শিকার। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন স্রেফ ৫০১৪ জন।

দিল্লিতে করোনা সুনামি আছড়ে পড়বে মে মাসের মধ্যে, এমনটাই অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞরা। দিল্লিতে এ পর্যন্ত মাত্র ২৮,৯২,০০ জন করোনা টিকা পেয়ছেন এবং অধিকাংসশই প্রথম ডোজ়। সম্ভাব্য সুনামি থেকে বাঁচতে গেলে দ্রুত টিকাকরণের পথে হাঁটতে হবে দিল্লিকে। কেন্দ্রীয় সরকার ভ্যাকসিন সরবরাহ করলেও টিকাকরণের দায়িত্বে রাজ্য সরকারের। তাই দিল্লিকে দ্রুত টিকাকরণের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

আরও পড়ুন: সঙ্কটময় পরিস্থিতি, ভ্যাকসিন-অক্সিজেন ও স্বাস্থ্য সরঞ্জামকে নিঃশুল্ক করল কেন্দ্র