কৃষি আইন কার্যকর হওয়ার পরও চালু রয়েছে মান্ডি, এমএসপি ব্যবস্থা: প্রধানমন্ত্রী

কৃষক আন্দোলনে বিশৃঙ্খলার পিছনে "আন্দোলনজীবী"দের দায়ী করে তিনি বলেন, "আন্দোলনজীবীরা নিজেদের লাভের জন্য কৃষক আন্দোলনের পবিত্রতা নষ্ট করছে। কৃষক আন্দোলনে জেলবন্দিদের মুক্তির দাবি কী সঠিক? টোলপ্লাজা ভাঙচুর কি নায্য? এভাবে আন্দোলনের পবিত্রতা রক্ষা সম্ভব?"

কৃষি আইন কার্যকর হওয়ার পরও চালু রয়েছে মান্ডি, এমএসপি ব্যবস্থা: প্রধানমন্ত্রী
লোকসভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সৌ: লোকসভা টিভি।
Follow Us:
| Updated on: Feb 11, 2021 | 12:45 PM

নয়া দিল্লি: “কৃষক আন্দোলন পবিত্র, তবে আন্দোলনজীবীরা এই আন্দোলনকে কলুষিত করছে”, লোকসভায় ভাষণ রাখতে গিয়ে এমনটাই বললেন প্রধানমন্ত্রী। রাজ্যসভার পর লোকসভাতেও বিরোধীদের ফের একবার আন্দোলনজীবী বলে বিধলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “সময়ের সঙ্গে কৃষিক্ষেত্রে সংশোধন অত্যন্ত জরুরি। বিরোধীরা আইনের ভাল-মন্দ নিয়ে আলোচনার বদলে আইনের রঙ সাদা নাকি কালো-তা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত।”

আজ লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দিল্লির সীমান্তে বসে থাকা কৃষকদের মধ্যে ইচ্ছে করে ভুল ধারণা তৈরি করা হচ্ছে। সরকার আন্দোলনকারী কৃষকদের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। যখন কেবলমাত্র পঞ্জাবে আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল, তখনও তাঁদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। এখনও আলোচনা করা হচ্ছে। কৃষকদের সমস্যাগুলি বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি আইনের প্রতিটি ধারা অনুযায়ী আলোচনার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। বিরোধীদেরও বলছি, যদি কোনও ভুল থাকে, তবে বলুন। সংসদে আলোচনার পরই আইন লাগু করা হয়েছে। এই আইন কার্যকর হওয়ার পর কোনও মান্ডিও বন্ধ হয়নি, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যও বন্ধ হয়নি। বরং এই আইন কার্যকর হওয়ার পরই এমএসপির বৃদ্ধি হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধিতা করে বিরোধীরা ওয়াকআউট করলে তিনি সরাসরি আক্রমণ করে বলেন, “আইন প্রয়োগে বাধা দেওয়ার এই প্রচেষ্টা পরিকল্পিত। কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের মধ্যে যে মিথ্যা ছড়ানো হয়েছে, তার পর্দা ফাঁস যাতে না হয়, সেই জন্যই হই-হট্টগোল করা হচ্ছে। যেকোনও কৃষককেই জিজ্ঞাসা করুন, নতুন আইনে তাঁদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে কিনা! কেউ সেই বিষয়ে কথা বলছে না। এই আইন কাউকে বেঁধে দেয়নি। বরং ফসল বিক্রির একটি অতিরিক্ত সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”

আরও পড়ুন: লালকেল্লা কাণ্ডে অভিযুক্ত দীপ সিধুর পর গ্রেফতার অন্যতম ‘চক্রী’ ইকবাল সিং

বিরোধীদের “আন্দোলনজীবী” বাণে বিদ্ধ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে আন্দোলনের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা এইধরনের বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটায় না, উলটে আন্দোলনজাবীরাই অলীক কল্পনা করে আন্দোলনে উসকানি দেয়। পুরনো মান্ডি ব্যবস্থা যেমন তুলে দেওয়া হয়নি, তেমনই কোনও নিয়ম জারি করা হয়নি। বরং মান্ডি সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।” তিনি আরও যোগ করে বলেন, “কংগ্রেস ও আরও কয়েকটি দল, যাঁরা কৃষি আইনের বিরোধিতা করছে, তাঁরা আসল আইন নিয়েই কথা বলেন না। এই প্রথম শুনলাম যে কেউ বলছে, চাইনি তবুও কেন দেওয়া হল? প্রথমেই বলি, এই আইন আবশ্যক নয়, কেবলমাত্র একটি অতিরিক্ত সুযোগ। তিন তালাকের বিরুদ্ধেও কেউ আইন চাননি, তবুও এই প্রথা রুখতে আইন আনা হয়েছে। কেবলমাত্র দেশের প্রগতির কথা ভেবেই মেয়েদের সম্পত্তিতে অধিকার, বাল্য বিবাহ নিষিদ্ধ করার মতো নানা আইনব্যবস্থা আনা হয়েছে।”

কৃষক আইনের সঙ্গেই দেশের অন্যান্য সংস্কারগুলির তুলনা টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পেনশন যোজনার কথাই ধরুন। ২০১৪ সালের আগে এক একজনকে পেনশন হিসাবে ৭টাকা, ২৪ টাকা দেওয়া হত। আমরাই সাধারণ মানুষের কথা ভেবে কমপক্ষে ১০০০টাকা পেনশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ছোট কৃষকদের সুবিধার জন্যও কৃষক সম্মান নিধি যোজনা আনা হয়েছে। এইধরনের সিদ্ধান্তে প্রথমে অনেকেই বিরোধিতা করে। তবে আমরা বৃহত্তর চিত্র পরিকল্পনা করে সকলের শুভকামনা করেই আমরা কাজ করি। চাইলে তবেই পাবে- এটা লোকতন্ত্রের প্রতীক হতে পারে না। সরকারের সংবেদনশীল হওয়া উচিত। কেউ বলেনি, তবুও আমরা জনধন যোজনা, স্বচ্ছ ভারত অভিযান, আয়ুষ্মান ভারতের মতো নানা প্রকল্প এনেছি। আমরা দেশের নাগরিকদের অধিকার, সামর্থ্য বৃদ্ধি করতে চাই। যাঁরা সংস্কার চান না, তাঁরা পুরনো ব্যবস্থা অনুসরণ করুন। তবে আমার মতে, প্রবাহমানতাই জীবন। দেশের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী দায়িত্ব নিন।”

কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষক-বান্ধব প্রকল্পের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের পরিবর্তনের জন্য কাজ করা উচিত। কৃষিকাজ আমাদের দেশের সংস্কৃতির একটি অংশ। কৃষিকাজ নিয়ে বিভিন্ন গ্রন্থও লেখা হয়েছে। এমনকি জনক রাজাও কৃষিকাজ করতেন। আমাদের দেশে ধন ও ধান্য একসঙ্গে বলা হয়, এতটাই গুরুত্ব কৃষিকাজের। কৃষকদের নামে যেভাবে তাঁদের উপেক্ষা করা হয়েছে, তাও আগে বলেছি। স্বাধীনতার পর চুক্তিভিত্তিক কৃষকের সংখ্যা ছিল ২৮ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে তা বেড়ে ৫৫ শতাংশে পৌঁছেছিল। কৃষকাজ পদ্ধতি আধুনিক না হলে, কৃষকরা আত্মনির্ভর হতে পারবেন না।”

তিনি আরও বলেন, “কৃষকরা কেবল ধান-গম চাষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে কেন, বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী চাষ করা উচিত। উদাহরণ হিসাবে বলি, স্ট্রবেরি ফলকে আমরা বিদেশী ভাবতাম। এখন কচ্ছ, বুন্দেলখণ্ডের মতো জায়গা, যেখানে জলের অভাব, সেখানেও স্ট্রবেরির চাষ হচ্ছে। করোনাকালেও আমরা কৃষিক্ষেত্রে রেকর্ড উৎপাদন করেছি। কৃষি আইনের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে আমরা একইসঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি ও সমান অধিকারের সুযোগ দিয়েছি। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ১৮ দশকের ধারণা দিয়ে দেশ চালানো যায় না। কৃষিক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন এনেই কৃষকদের যাত্রাপথ মসৃণ করতে হবে। বিগত ছয় বছরে এমন অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা ছোট কৃষকদের পক্ষে উপকারী। কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আজকাল কৃষকরা অনলাইন ও অফলাইন- দুটি মাধ্যমেই ফসল বিক্রি করছেন। কৃষাণ রেলের মাধ্যমে ছোট ছোট গ্রামের সঙ্গে দেশের অন্যান্য প্রান্তের বড় বাজারের সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে, কৃষকরা নায্যদামে ফসল বিক্রি করতে পারছেন।”

কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “একসময় শরদ পাওয়ার নিজেই এপিএমসি নিয়ে কথা বলেছিলেন। আজ আইনের বিরোধিতা করছেন। এভাবেই কৃষকদের ভুলপথে পরিচালন করা হচ্ছে। দেশের জন্য সরকারি ক্ষেত্র যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনই বেসরকারি বিনিয়োগও প্রয়োজনীয়। করোনার ভ্যাকসিন নির্মাতারাও তো বেসরকারি সংস্থা। আমি মনে করি, দেশের যুব সম্প্রদায়ের উপর ভরসা রাখা উচিত। তাঁদের যত সুযোগ দেওয়া হবে, ততই দেশের উন্নয়ন হবে।”

কৃষক আন্দোলনে বিশৃঙ্খলার পিছনে “আন্দোলনজীবী”দের দায়ী করে তিনি বলেন, “আন্দোলনজীবীরা নিজেদের লাভের জন্য কৃষক আন্দোলনের পবিত্রতা নষ্ট করছে। কৃষক আন্দোলনে জেলবন্দিদের মুক্তির দাবি কী সঠিক? টোলপ্লাজা ভাঙচুর কি নায্য? এভাবে আন্দোলনের পবিত্রতা রক্ষা সম্ভব? আবারও বলছি, দেশকে আন্দোলনজীবীদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এরা কেবল মুখে বলায় বিশ্বাসী, কাজে নয়। মুখে মহিলাদের সমান অধিকারের কথা বললেও এরাই তিন তালাকের বিরোধিতা করেন। দিল্লির দূষণ নিয়ে কথা বলেন, এদিকে দিওয়ালিতে বাজি পোড়ানোর সমর্থন করেন।”

বিরোধীদের সঙ্গে তুলনা টেনে প্রধানমন্ত্রী এও বলেন যে, ” একসময় আমরাও বিরোধী ছিলাম। তখন আমরা দেশের বিকাশের জন্য কথা বলতাম। এখন আমি আশা করে বসে থাকলেও কেউ বিকাশের কথাই বলেন না। আমি অবাক হয়ে যাই।”

আরও পড়ুন: রমানির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা আকবরের, তথ্য জমায় বিলম্ব, পিছল রায়