Modi-Imran: ফোন ধরেননি ইমরানের, সেই রাতে মোদীর লালচোখে কেঁপে গিয়েছিল পাকিস্তান…

Modi-Imran: সেটা ছিল ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির রাত। পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়েছিলেন বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। পরের রাতেই তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু, ওই এক রাতেই পর্দার আড়ালে ঘটে গিয়েছিল বেশ কিছু নাটকীয় ঘটনা।

Modi-Imran: ফোন ধরেননি ইমরানের, সেই রাতে মোদীর লালচোখে কেঁপে গিয়েছিল পাকিস্তান...
ইমরানের ফোন ধরতে রাজি হননি মোদীImage Credit source: Twitter
Follow Us:
| Updated on: Jan 08, 2024 | 9:50 PM

নয়া দিল্লি: নয়-নয়টা ক্ষেপণাস্ত্র তাক করা ছিল পাকিস্তানের দিকে। চাইলেই যে কোনও মুহূর্তে উড়ে যেত সেগুলি। কড়া ভারতীয় পদক্ষেপের আশঙ্কায় কেঁপে গিয়েছিল পাকিস্তান। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে একবার ফোনে কথা বলার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কিন্তু, তাঁর সেই আগ্রহে জল ঢেলে দিয়েছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। সেটা ছিল ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির রাত। ঠিক তার আগের রাতেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে অবস্থিত জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে আকাশপথে হামলা চালিয়েছিল ভারত। তার প্রতিক্রিয়ায় ২৭ ফেব্রুয়ারি, ভারতের আকাশসীমায় উড়ে এসেছিল পাক বিমানবাহিনীর এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। মিগ নিয়ে সেগুলিকে তাড়া করে পাকিস্তানে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বায়ুসেনার তখনকার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। পরের রাতেই তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু, ওই এক রাতেই পর্দার আড়ালে ঘটে গিয়েছিল বেশ কিছু নাটকীয় ঘটনা।

সেই সময় ইসলামাবাদে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ছিলেন অজয় বিসারিয়া। সম্প্রতি, ভারত-পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে একটি বই লিখেছেন তিনি। আর সেখানেই জানিয়েছেন অভিনন্দনের মুক্তির পর্দার আড়ালের কাহিনি। জানিয়েছেন, পুলওয়ামা-পরবর্তী সময়ে ভারতের দমনমূলক কূটনীতির চাপে, কীভাবে ভয়ে গুটিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। যার জেরে, জঙ্গিদের নিয়ে তাদের নীতি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হয়েছিল ইসলামাবাদ। অজয় বিসারিয়া জানিয়েছেন, ওই রাতে ঠিক মধ্যরাত নাগাদ তাঁকে ফোন করেছিলেন পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের কর্তা সোহেল মাহমুদ। বর্তমানে তিনি ভারতে পাক রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত আছেন। সোহেল মাহমুদ জানিয়েছিলেন, পাক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, ফোনে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলতে চান। দিল্লি বিসারিয়াকে জানিয়েছিল, মোদী কথা বলতে নারাজ। সোহেল মাহমুদকে, অজয় বিসারিয়া জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীকে পাওয়া যাবে না। কোনও জরুরি দরকার থাকলে, ভারতীয় হাই কমিশনারকেই জানাত হবে। সেই রাতে সোহেল মাহনুদ আর ফোন করেননি।

আসলে কী করবে, সেই চিন্তায় পাগল হওয়ার দশা হয়েছিল পাক সরকারের। ঘন ঘন কথা হয়েছিল মার্কিন, ফরাসি এবং ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে। তাঁরা পাক সরকারকে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, অভিনন্দন বর্তমানের কোনও ক্ষতি হলে কিন্তু ভারত ছেড়ে কথা বলবে না। অজয় বিসারিয়াকে তাঁরা পরে জানান, সেই রাতে ভারতীয় হুমকির মুখে সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। যার প্রতিফলন ঘটেছিল, তাদের পরবর্তী পদক্ষেপগুলিতে। পরদিন পাক সংসদে অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শান্তির জন্য এই পদক্ষেপ বলে পাকিস্তান দাবি করলেও, এর পিছনে ছিল ভয়। ভারতের দাবি নিয়ে বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন তৎকালীন আইএসআই-এর ডিজি অসিম মুনির (বর্তমান পাক সেনা প্রধান) এবং পাকিস্তানের তৎকালীন বিদেশ সচিব তেহমিনা জানজুয়া। বৈঠকের মধ্যেই, সকলকে থামিয়ে সেনার থেকে পাওয়া এক বার্তা পড়ে শুনিয়েছিলেন জানজুয়া। তিনি জানান, ভারত ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র তাক করে আছে পাকিস্তানের দিকে।

আর এই বার্তাই বদলে দিয়েছিল পরিস্থিতি। তার আগে পর্যন্ত বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযানকেই অস্বীকার করার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু, এই বার্তা আসার পরই বদলে গিয়েছিল সুর। ভারত যাতে কিছু না করে বসে, তার জন্য বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে বার্তা পাঠানো শুরু করেছিল পাকিস্তান। বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা জানাজুয়াকে বলেন, ভারতের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করতে। আর, তারপরই অজয় বিসারিয়াক ফোন করে জানানো হয়েছিল, ইমরান কথা বলতে চান মোদীর সঙ্গে। তবে, শুধু অভিনন্দনকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়াই নয়, পাকিস্তানের নীতিই বদলে দিয়েছিল সেই রাত। এই বিষয়ে দুই মাস পরের আরও এক ঘটনার উল্লেখ করেছেন বিসারিয়া।

তিনি জানিয়েছেন, দুই মাস পরের সেই রাতে, রাত ২টোর সময় ফোন এসেছিল আইএসআই-এর এক ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে। অবিলম্বে আল কায়েদার হামলা চালাতে চলেছে ভারতে বলে ভারতীয় হাইকমিশনকে সতর্ক করেছে সূত্র। অসিম মুনিরের আইএসআই শুধু সেনা স্তরেই নয়, ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে এই খবরটি ভারত সরকারের কাছেও পৌঁছে দিতে চেয়েছিল। সেই খবরের ভিত্তিতে হামলাটি ব্যর্থ করে দিয়েছিল ভারত। আসলে, সামনেই ছিল এসসিও গোষ্ঠীর সম্মেলন। বিসারিয়ার মতে, পাকিস্তান হয়তো আরও একটা পুলওয়ামা হোক তা চায়নি, অথবা এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের আগে পাকিস্তানের মুখ রক্ষা করতে চেয়েছিল। কূটনৈতিক স্তরে এই যোগাযোগ বজায় রাখতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন সেনা প্রধান কামার বাজওয়া। কিন্তু, ইমরান খান এবং রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে সেই পতে হাঁটতে চাননি ইমরান খান। বাধা দিয়েছিল, আইএসআই এবং পাক সেনা কর্তাদের একাংশও।