সীমান্তে সেনা প্রত্যাহারে দুই দেশকেই মানতে হবে তিনটি শর্ত, জানালেন রাজনাথ

ভারতীয় সেনার প্রশংসা করে তিনি বলেন, "বর্তমানে আমাদের সেনা বহু দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে উপস্থিত রয়েছে। ভারতের অখণ্ডতা রক্ষা করতে তাঁরা ব্যস্ত।" সেনাবাহিনীর প্রশংসার পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশেও বলেন, "আমি মনে করি যে কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাই হোক না কেন, সকলেই দেশের সার্বভৌমতা ও ঐক্য রক্ষায় সহমত হবেন।"

সীমান্তে সেনা প্রত্যাহারে দুই দেশকেই মানতে হবে তিনটি শর্ত, জানালেন রাজনাথ
রাজ্যসভায় রাজনাথ সিং। ছবি:রাজ্যসভা টিভি
Follow Us:
| Updated on: Feb 11, 2021 | 11:56 AM

নয়া দিল্লি: দীর্ঘ নয় দফা বৈঠকের পর পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত ও চিন। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভাতে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath Singh) পূর্ব লাদাখের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরলেন। তিনি বললেন, “ভারত বরাবরই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখার উপর জোর দেয়।”

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “দুই দেশের সহযোগিতাতেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব। আমরা মনে করি, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সূত্র খুঁজে পাওয়া সম্ভব। চিনকেও জানানো হয়েছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় শান্তি বজায় রাখা প্রয়োজনীয়। বিগত কয়েক বছর ধরে চিন সীমান্তে যে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে, সেই কারণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও প্রভাব পড়েছে। পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সংঘর্ষের পর চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে আমার এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। আমরা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় শান্তি বজায় রাখতে সর্বদাই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “দেশের সার্বভৌমতা রক্ষা করতে আমাদের সেনাবাহিনী যেকোনও শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত।” সেনা প্রত্যাহার নিয়ে চিনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, “প্যাংগং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণ তীরগুলিতে সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী প্যাংগং হ্রদে সেনা প্রত্যাহারের পর দফায় দফায় নিয়ন্ত্রণ রেখার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারে রাজি হয়েছে দুই দেশ।”

আরও পড়ুন: অবস্থান বদলে মহুয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে মোদী সরকার

তিনি আরও বলেন, “প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় বেশ কয়েকটি সংঘর্ষস্থল তৈরি হয়েছে। চিন নিজেদের সীমান্তে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছিল। তবে আমাদের সেনাবাহিনীও এর যোগ্য জবাব দিয়েছে এবং মোকাবিলা করেছে।”

ভারতীয় সেনার প্রশংসা করে তিনি বলেন, “বর্তমানে আমাদের সেনা বহু দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে উপস্থিত রয়েছে। ভারতের অখণ্ডতা রক্ষা করতে তাঁরা ব্যস্ত।” সেনাবাহিনীর প্রশংসার পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশেও বলেন, “আমি মনে করি যে কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাই হোক না কেন, সকলেই দেশের সার্বভৌমতা ও ঐক্য রক্ষায় সহমত।”

সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয় নিয়ে রাজনাথ সিং বলেন,”গতবছর থেকে চিনের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সেনা প্রত্যাহার করা নিয়ে কূটনৈতিক ও সামরিকস্তরে বেশ কয়েকদফা আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনার সময় আমরা চিনকে জানিয়েছি তিনটি শর্তে সেনা প্রত্যাহার করা হবে। এগুলি হল- দুই পক্ষকেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখাকে মান্যতা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার অবস্থান বদল করার যেন কোনও প্রকার প্রচেষ্টা না করা হয় এবং দুই তরফের আলোচনায় যে শর্তগুলি রাখা হয়েছে, তার প্রতিটি পালন করা।”

সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “আলোচনায় দুই দেশের সেনাকেই পিছু হটতে বলা হয়েছে। প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণ ভাগ থেকে সেনা সরানোর প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্যাংগং হ্রদ থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হবে। চিনের তরফে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে প্যাংগং হ্রদের উত্তরভাগে ফিঙ্গার ৮-এ সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করা হবে, অন্যদিকে ভারতীয় সেনারা প্যাংগং হ্রদ থেকে সরে ফিঙ্গার ৩-তে অবস্থান করবে। এপ্রিল থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় দুই দেশের যে সেনা মোতায়েন রয়েছে, তা ধীরে ধীরে সরানো হবে। এখনও সেনা মোতায়েন নিয়ে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে, তবে দুই দেশই আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে সহমত হয়েছে।”

আরও পড়ুন: বন্ধ করতে হবে হাজারের বেশি অ্যাকাউন্ট, টুইটারের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে কেন্দ্র