Survey Report: বিমানের ককপিটেই ঘুম, অধিকাংশ ভারতীয় পাইলটই ক্লান্ত, যে কোনও সময়…

Safety Matters Foundation survey: গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পাইলটদের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়া, বিমান দুর্ঘটনার জন্য দায়ী অন্যতম প্রধান কারণ। কাদেই ককপিটে পাইলট ঘুমিয়ে পড়া অত্যন্ত বিপজ্জনক।

Survey Report: বিমানের ককপিটেই ঘুম, অধিকাংশ ভারতীয় পাইলটই ক্লান্ত, যে কোনও সময়...
প্রতীকী ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 25, 2022 | 9:40 PM

নয়া দিল্লি: উড়ানের ইতিহাসে অত্যন্ত বড় নাম চার্লস লিন্ডবার্গ। ১৯২৭ সালে তিনি প্রথম পাইলট হিসেবে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহর থেকে সরাসরি বিমানযাত্রায় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পৌঁছেছিলেন। সাড়ে তেত্রিশ ঘণ্টা একটানা বিমান চালিয়ে ৫৮০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। পরে চার্লস বলেছিলেন, “আমার মন এই সজাগ ছিল, আবার পর মুহূর্তেই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছিলাম। আমার একটি চোখের পাতা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, অপর পাতাটি আমি আমার সমস্ত ইচ্ছাশক্তি দিয়ে খোলা রেখেছিলাম। সমস্ত শরীর বলছিল, জীবনে ঘুমের মতো ভাল কিছু বনেই। আমি আমার মনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছিলাম।”

তাঁর এই বর্ণনাতেই স্পষ্ট, পাইলটদের ককপিটে ঠিক কতটা ধকল নিতে হয়। বর্তমানে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলিতে কর্মরত অধিকাংশ পাইলটের অবস্থাই চার্লস লিন্ডবার্গের মতো। এক নয়া সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অতিরিক্ত ক্লান্তির কারণে অধিকাংশ পাইলটই ককপিটে ঘুমিয়ে পড়েন। বিপদ ঘটে যেতে পারে যে কোনও দিন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পাইলটদের ক্লান্তি বিমান দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ।

সমীক্ষাটি করেছে অলাভজনক সংস্থা ‘সেফটি ম্যাটারস ফাউন্ডেশন’। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ ভারতীয় পাইলটই চরম ক্লান্তির কারণে, ‘দিনের ঘুমের’ সমস্যায় ভুগছেন। সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৫৪২ জন পাইলট। তাঁরা সকলেই হয় আঞ্চলিক বিমান ওড়ান, নয়তো চার ঘন্টার কম সময় লাগে এরকম অভ্যন্তরীণ বিমান ওড়ান। এঁদের ৬৬ শতাংশই স্বীকার করেছেন যে, ককপিটে তাঁদের শিফট চলাকালীন তাঁরা মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়েন। এমনকী সহকর্মী ক্রু সদস্যদের সতর্কও করার সুযোগ পান না। ৫৪.২ শতাংশ পাইলট জানিয়েছেন, তাঁরা গুরুতর ‘দিনের বেলার ঘুমের’ সমস্যায় ভুগছেন। প্রায় ৪১ শতাংশ জানিয়েছেন তাঁরাও দিনের বেলা ঘুমিয়ে পড়েন বটে, তবে তাঁদের সমস্যা ততটা গুরুতর নয়।

সমীক্ষায় আরও জানা গিয়েছে, ককপিটে পাইলটদের এই ঘুমের মূল কারণ ক্লান্তি। উড়ান সংস্থাগুলি মুনাফার লোভে পর্যাপ্ত কর্মশক্তির তুলনায় অনেক কম লোক নিয়ে কাজ পরিচালনা করছে। ফলে, অধিকাংশ পাইলটের উপরই কাজের চাপ বেড়েছে। সমীক্ষা অনুসারে, আগে পাইলটদের সপ্তাহে গড়ে ৩০ ঘন্টা বিমান ওড়াতে হত। কিন্তু, এখন প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার তাদের পরপর দুটি বিমান চালাতে হয়। এতে পাইলটদের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে, যার ফলে বেশি বেশি করে ক্লান্তি দেখা দিচ্ছে। ৭৪ শতাংশ পাইলটই ক্লান্তির প্রধান কারণ হিসাবে এই লাগতার বিমান চালানোকে দায়ী করেছেন।

এই সমীক্ষার ফলাফল যে অত্যন্ত উদ্বেগজনক, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে সমীক্ষার সময় ৩১ শতাংশ পাইলট জানিয়েছেন, বিমান চালানোর সময় ককপিটে ঘুমিয়ে পড়ায় দুর্ঘটনা ঘটার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বিমান সুরক্ষার জন্য ভারতের উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ‘ডিজিসিএ’-র অনেক বিধি রয়েছে। সমস্যা হল, পাইলটদের কতক্ষণ কাজ করানো যাবে, এই বিষয়ে তাদের স্পষ্ট কোনও নির্দেশ নেই। সেফটি ম্যাটারস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ক্যাপ্টেন অমিত সিং বলেছেন, ডিজিসিএ বাধ্যতামূলকভাবে ক্লান্তির ঝুঁকি মোকাবিলা ব্যবস্থা বা এফআরএমএস প্রয়োগ করেনি। এই ব্যবস্থার অধীনে ক্লান্তি মোকাবিলা করার জন্য কোনও নিয়মও তৈরি করা হয়নি। প্রচলিত নিয়মগুলি পরামর্শমূলক। তাই ডিউটি ​​টাইমের বিষয়টি বিতর্কিত থেকে গিয়েছে।”