Sedition Law: ‘রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে’ 124 A ধারায় আপাতত করা যাবে না মামলা, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
Sedition Law: ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪-এর ক ধারা পুনর্বিবেচনার কাজ চলাকালীন, এই আইনের অধীনে হওয়া মামলাগুলি স্থগিত রাখা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টে জানালো কেন্দ্র।
নয়া দিল্লি: ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪-এর ক ধারার বৈধতা পুনর্বিবেচনা করা না পর্যন্ত নতুন করে কারোর বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা দায়ের করা যাবে না। যাঁদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই এই আইনে মামলা রয়েছে, তাঁরাও জামিনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আজ বুধবার, এমনটাই জানাল সুপ্রিম কোর্ট। গত সোমবারই আদালতে এই বিতর্কিত আইন পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল কেন্দ্র। মঙ্গলবার, আইন পুনর্বিবেচনার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত, এই আইনের অধীনে হওয়া মামলাগুলি আপাতত স্থগিত রাখার বিষয়ে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেওয়ার সুপারিশ করেছিল শীর্ষ আদালত। তবে, এদিন আদালতে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনওভাবেই আইনটির অনুশীলন স্থগিত রাখা যাবে না। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের এবং দ্রুত জামিনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। তারপরও, আইনটির অনুশীলন আপাতত স্থগিত রাখল আদালত। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের অন্যান্য ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করতে পারে কেন্দ্র। শুধুমাত্র ১২৪-এর ক ধারাটির কেন্দ্র পুনর্বিবেচনা করা না পর্যন্ত নতুন করে এফআইআর না হওয়ার পরামর্শ দেন বিচারপতিরা।
ভারতীয় দণ্ডবিধিতে রাষ্ট্রদ্রোহ বিষয়ে অনেকগুলি ধারার উল্লেখ থাকলেও, ১২৪-এর ক ধারাটিই সবথেকে বিতর্কিত এবং বেশি আলোচিত। এই ধারা অনুযায়ী কেউ যদি স্লোগানে, লেখায় বা দৃশ্য-উপস্থাপনায় সরকারের অবমাননা করে বা সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণার সৃষ্টি করে বা জনরোষ উসকে দেয়, তাহলেই তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসাবে ধরা হবে। সমালোচকদের দাবি, ব্রিটিশ আমলের এই আইন ভারতীয় সংবিধানের বাক-স্বাধীনতার অধিকারের বিরোধী। এই বিতর্কিত আইনটির বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। প্রধান বিচারপতি এনভি রামানার নেতৃত্বে তিন বিচারকের বেঞ্চ-এ তার শুনানি চলছে।
এদিন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ভারত এই আইন পুনর্বিবেচনা করবে। আবেদনকারীরা বলেছেন, আইনটির অপব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যাটর্নি জেনারেলও হনুমান চালিশা মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। পুনর্বিবেচনা না হওয়া পর্যন্ত আইনের এই ধারাটি ব্যবহার না করাই উপযুক্ত হবে। আমরা আশা করি পুনর্বিবেচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলি ১২৪-এর ক ধারার অধীনে কোনও এফআইআর নথিভুক্ত করা থেকে বিরত থাকবে।’
মঙ্গলবারই, ১২৪-এর ক ধারা পুনর্বিবেচনা চলাকালীন এই ধারার অধীনে ইতিমধ্যেই হওয়া মামলাগুলি স্থগিত রাখা এবং ভবিষ্যতে এই ধারায় আর মামলা দায়ের না করার বিষয়ে কেন্দ্রের মতামত জানতে চেয়েছিল শীর্ষ আদালত। এদিন কেন্দ্র আদালতকে জানায়, তা সম্ভব নয়। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ইতিমধ্যেই দায়ের হওয়া মামলাগুলি স্থগিত রাখার বিষয়টি পুলিশ বা সরকারের এক্তিয়ারে নেই। কারণ, এই মামলাগুলির শুনানি চলছে আদালতে। আদালতই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার মেহতা আরও বলেন, ‘সারা ভারতের অপরাধের তীব্রতা আমরা জানি না। এই মামলাগুলির ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদের মতো গুরুতর অভিযোগও থাকতে পারে’। তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে আইন স্থগিত না রেখে, এই মামলায় অভিযুক্তদের জামিনের আদেশের সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে। আইনটির সাংবিধানিক বৈধতা অতীতেও বিচার করা হয়েছে, উল্লেখ করে আইনটির অনুশীলন স্থগিত রাখার বিরোধিতা করেন তিনি।
সম্প্রতি একের পর এক রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। শীর্ষ আদালতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪-এর ক ধারা বা রাষ্ট্রদ্রোহ আইন’কে চ্যালেঞ্জ করে একাধীক মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এক সপ্তাহ আগেই মোদী সরকার আদালতে জানিয়ে দিয়েছিল, এই আইন পুনর্বিবেচনা করার কোনও পরিকল্পনা নেই তাদের। গত সোমবার অবশ্য এই বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে মোদী সরকার। ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ পালনের অংশ হিসাবে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আইনের হ্যাংওভার থেকে মুক্ত হওয়ার প্রয়াসেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বলে জানিয়েছিল কেন্দ্র।