১ টাকা-২ টাকা দাম বৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না, আসলে কতটা ঠকছেন জানেন?
Product Price: তখন আমার আপনার সেক্রেড প্রাইস পয়েন্টটাই ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা থেকে হয়ে যাবে ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৩০ টাকা। মার্কেট সার্ভে বলছে টানাটানির সংসারে এখন বহু মানুষ বড় প্যাকেটের চেয়ে ছোট প্যাকেটের জিনিস বেশি করে চাইছেন।
কখনও কি খেয়াল করে দেখেছেন, কিছু জিনিসের দাম কখনও বাড়ে না। শুনে যদি অবাক লাগছে তো? তাহলে খেয়াল করিয়ে দিই। ২ টাকার শ্যাম্পুর পাতা। ৫ টাকার ছোট সাবান। কিংবা ১০ টাকার চিপসের প্যাকেট। বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। দাম তো বাড়ে না। সব জিনিসের দাম বাড়ছে। যারা এইসব সাবান, শ্যাম্পু তৈরি করে তাদের প্রডাকশন কস্টও বাড়ছে। তাহলেও দাম বাড়ে না কেন।
সাম্প্রতিক একটা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ভারতে FMCG কোম্পানিগুলো কীভাবে তাদের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি বদলাচ্ছে, তা নিয়ে খুব ডিটেলে স্টাডি করা হয়েছে। আর এইসব বিজনেস ম্যানেজমেন্টের নামদার লোকেরা বুদ্ধি খাটিয়ে যা বের করছে, তা ওই নামমাত্র পড়াশোনা জানা লিচুওয়ালা অনেকদিন আগে থেকেই হাতে কলমে করে দেখাচ্ছে। বিষয়টা হলো, মার্কেটিংয়ের ভাষায় ভারতে তিনটে সেক্রেড প্রাইস পয়েন্ট আছে। সংখ্যায় যাঁরা সবচেয়ে বেশি সেই গরিব, নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে এটা হল ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা। এর চেয়ে বেশি দামের জিনিসে দাম বাড়ানো যায়। কারণ, অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছলরা সেসব কেনেন। কিন্তু, ৫ টাকার জিনিস কখনও ৬ টাকা করা যায় না। করলেই বিক্রি লাফিয়ে নেমে যাবে। কারণ, গরিব ও নিম্নবিত্তরা ওই বাড়তি ১ টাকা কিছুতেই খরচ করতে চাইবেন না।
১ টাকার মূল্য বড়লোকদের তুলনায় তাঁদের কাছে অনেক বেশি। সেই কারণে FMCG কোম্পানিগুলো এখন দাম এক রেখে প্যাকেটে কোয়ান্টিটি কম করে দিচ্ছে। তার মানেও কিন্তু আসলে দামই বাড়ল। চা, কফি, বিস্কুট, চকোলেট, প্যাকেটের চাল-তেল, মশলার পাউচ – সবেতেই এরকম প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যেমন, কফির প্যাকেটে ৫০ গ্রামের জায়গায় এখন মিলছে ৪৫ গ্রাম। ১০০ গ্রামের জায়গায় ৯০ গ্রাম। দাম একই থাকায় বুঝতেই পারছি না যে আসলে দাম বেড়ে যাচ্ছে। এটাই হল শ্রিঙ্কফ্লেশন। কোয়ান্টিটি শ্রিঙ্ক করায় পরোক্ষে ইনফ্লেশনের এফেক্ট আসছে। আমরা তা ধরতে পারছি না। এবার প্রশ্ন হলো, এটা হচ্ছে কেন। আমরা ঠকছি তার কারণ আমরা এই ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা সেগমেন্টে কখনও প্রডাক্টের ওজন কত তার হিসেব করি না। শুধু টাকার অঙ্কটা হিসেব করি। আপনি জানতেনই না যে কফির পাউচে আগে ৫০ গ্রাম কফি থাকতো। তাহলে বুঝবেন কি করে যে সেটা ৫ গ্রাম কমে গেছে। মুশকিল হল, এ ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো বেআইনি কিছু করছে না। তারা বিজ্ঞাপন দিয়ে আপনার মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে, বিস্কুটের দাম পাঁচ টাকা। তাতে প্রভাবিত হয়ে আমরা যে ওজন লেখা থাকলেও তা দেখছি না, সে দোষ তো আমাদের।
ওষুধের ক্ষেত্রে ইদানিং আবার আরেকভাবে মানুষের গাঁটকাটার ব্যবস্থা হয়েছে। দশটা ট্যাবলেটের পাতার বদলে বাজারে আসছে পনেরো ট্যাবলেটের পাতা। দরকার না থাকলেও আপনাকে বেশি ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এসব নিয়ে জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনে গুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়ে। কমিশন সাধারণ মানুষকে জিনিসের ওজন ও দাম বুঝে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। কারণ, ওই যে বললাম। উপায় কী। তারা তো প্যাকেটের গায়ে ওজন লিখেই দিচ্ছে। আমি-আপনি যে খেয়াল করছি না সে দায় তো আমাদের। এপর্যন্ত শুনে আপনাদের মনে হতে পারে যে ওজন কমিয়ে কমিয়ে কতদিন চলবে।
মানুষকে তো আর খালি প্যাকেট দেওয়া যাবে না। এখানেও দুটো পলিসি আছে। প্রথম ৫ টাকার বিস্কুট ৫ টাকাই রইল। কোম্পানি সেই বিস্কুটই নতুন প্যাকেজিংয়ে ৭ টাকা দামের নতুন প্যাকেটে নিয়ে এলো। তখন ক্রেতারা ভাববেন ৫ টাকা ও ৭ টাকা দামের জিনিসগুলো আলাদা। ফলে, ৭ টাকার প্যাকেটেরও চাহিদা তৈরি হবে। ওই প্যাকেটের বাড়তি লাভ, ৫ টাকার প্যাকেটের কম লাভকে কমপেনসেট করে দেবে। আর, দ্বিতীয়টা হল সব কোম্পানি একসঙ্গে দাম বাড়িয়ে দিলো। যা সফ্ট ড্রিঙ্কের ক্ষেত্রে খুব হয়।
তখন আমার আপনার সেক্রেড প্রাইস পয়েন্টটাই ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা থেকে হয়ে যাবে ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৩০ টাকা। মার্কেট সার্ভে বলছে টানাটানির সংসারে এখন বহু মানুষ বড় প্যাকেটের চেয়ে ছোট প্যাকেটের জিনিস বেশি করে চাইছেন। যাতে একলপ্তে খরচ কম হয়। আর বাজারে যতো ছোট প্যাকেট আসছে ততই শ্রিঙ্কফ্লেশনের প্রবণতাও বাড়ছে। আমি একটা কথা বলতে পারি। এরপর যখন চিপস কিনতে যাবেন, তখন আমার ওই লিচুওয়ালাকে মনে করে যাবেন। দেখবেন, আসলে ১০ টাকা দিয়ে আপনি ১ প্যাকেট হাওয়া কিনেছেন। সঙ্গে ফ্রি পেয়েছেন ক’টা চিপস।