Statue of Equality: সন্ত রামানুচার্যের ১০০০ তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার্ঘ, বিশ্বজুড়ে সাম্যের বার্তা ছড়াবে ‘স্ট্যাচু অব ইকুয়্যালিটি’

Statue of Equality: ভক্তদের বিশ্বাস, যে ভগবান আদিষা নিজেই রামানুচার্যের অবতার গ্রহণ করেছেন।

Statue of Equality: সন্ত রামানুচার্যের ১০০০ তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার্ঘ, বিশ্বজুড়ে সাম্যের বার্তা ছড়াবে ‘স্ট্যাচু অব ইকুয়্যালিটি’
স্ট্যাচু অব ইক্যুয়ালিটি। ছবি: টুইটার।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 30, 2022 | 10:30 AM

হায়দরাবাদ:  দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে। অবশেষে গোটা বিশ্বের সামনে আসতে চলেছে সন্ত রামানুচার্যের ২১৬ফুটের বিশালাকার মূর্তি, যা “স্ট্যাচু অব ইক্যুয়ালিটি” (Statue of Equality) নামেই পরিচিত। একাদশ শতকে ভারতে জন্ম নেওয়া হিন্দু ধর্মতত্ত্ববিদ এবং দার্শনিক ছিলেন শ্রী রামানুচার্য স্বামী (Ramanujacharya Swami)। তাঁরই ১০০৩ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে এই “স্ট্যাচু অব ইক্যুয়ালিটি” স্থাপন করা হচ্ছে। হায়দরাবাদের নিকটস্থ সামশাবাদে ৪৫ একর জমির উপর ত্রিদন্ডী চিন্না জিয়ার স্বামী যে মন্দির স্থাপন করেছেন, সেখানেই এই মূর্তি স্থাপিত করা হয়েছে। এটিই বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম মূর্তি হতে চলেছে।

সন্ত রামানুচার্যের সহস্রাব্দী সমারোহ উপলক্ষ্যে ১৪ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি যজ্ঞের মাধ্যমে এই শুভ অনুষ্ঠানের সূচনা করা হবে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি তেলঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও ও  চিন্না জিয়া স্বামীর উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই মূর্তির উদ্বোধন করবেন। উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও, তিনি আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ত রামানুচার্যের ১২০ কেজি সোনার মূর্তির উন্মোচন করবেন।

কোথায় রয়েছে এই স্ট্যাচু অব ইক্যুয়ালিটি?

তেলঙ্গনার সামশাবাদে ৪৫ একর জমির উপর এই বিশালাকার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। এখানে প্রবেশের মূল চারটি ফটক থাকব এবং একসঙ্গে প্রায় ৩ হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রবেশদ্বারের নকশা তেলঙ্গনার বিখ্যাত ‘কাগাদিয়া’ শৈলীর অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে। প্রধান প্রবেশদ্বারেই ১৮ ফুট উচ্চতার হনুমান ও গড়ুড়ের মূর্তিও স্থাপন করা হবে।

মন্দির প্রাঙ্গণ।

প্রধান আকর্ষণ:

সামশাবাদের এই  প্রাঙ্গণের প্রধান আকর্ষণ অবশ্যই ২১১৬ ফুট উচ্চতার শ্রী রামানুচার্য স্বামীর মূর্তি। পদ্মফুলের উপর উপবিষ্ট অবস্থায় রামানুচার্যের মূর্তিটি পঞ্চধাতু দিয়ে তৈরি। এছাড়াও ৪২ ফুট উচ্চতার তামার তৈরি একটি মিউজিকাল ঝর্ণাও স্থাপন করা হয়েছে। ভিতরে ৫৪ ইঞ্চি উচ্চতার ১২০ কেজি সোনার তৈরি শ্রী রামানুচার্যের অপর একটি মূর্তিও স্থাপিত থাকবে।  সন্ত রামানুচার্যের মূর্তির চারপাশে ১০৮টি কালো পাথরে খোদাই করা ছোট মন্দির স্থাপন করা হয়েছে, যা দিব্য দেশম নামে পরিচিত। এগুলি বদ্রীনাথ, মুক্তিনাথ, অযোধ্যা, বৃন্দাবন, তিরুমালার মন্দিরের আদলে তৈরি। ভিতরে দেবগ্রহও সেই মন্দিরে পুজ্য দেবতার আদলেই তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও অনলাইন ডিজিটাল লাইব্রেরি ও ওমনিম্যাক্স থিয়েটারও তৈরি করা হয়েছে।

১২০ কেজির যে স্বর্ণমূর্তিটি মন্দিরের গর্ভগৃহে স্থাপিত থাকবে, তা সন্ত রামানুচার্যের জীবনের ১২০ বছরকেই সম্মান জানাবে। এই মূর্তির নিত্য়দিন অভিষেক, আরাধনা, রাজভোগ প্রদানের মতো যাবতীয় সেবা করা হবে।

কে সন্ত রামানুচার্য?

১০১৭ সালে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরামবুদুরে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে তাঁর জন্মের এক হাজার বছর পূর্ণ হয়। তিনি গোটা ভারত ঘুরে সমাজের সমস্ত শ্রেণীর মানুষদের জীবনযাত্রাকে বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। ভক্তদের বিশ্বাস, যে ভগবান আদিষা নিজেই রামানুচার্যের অবতার গ্রহণ করেছেন। তিনি কাঞ্চি অদ্বৈত পণ্ডিতদের অধীনে বেদান্তে শিক্ষিত। দেশজুড়ে তিনি বিশিষ্ট দ্বৈত চিন্তাধারার প্রসার ঘটান এবং মন্দিরগুলিকে ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন। তার কৃপাতেই সকলে মুক্তি অষ্টাক্ষরী মন্ত্র “ওম নমো নারায়ণ”-র সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন।

সাম্য, স্নেহ এবং ভক্তির মার্গই হল ঈশ্বরপ্রাপ্তির শ্রেষ্ঠ পন্থা, এই মন্ত্রই আজীবন অনুসরণ করেছেন তিনি। চিন্না জিয়ার স্বামীও রামানুজের এই আদর্শের উপর ভর করেই এই সাম্যের মূর্তি তৈরির কাজে হাত দেন।

কেন তৈরি করা হল স্ট্যাচু অব ইক্যুয়ালিটি?

স্ট্যাচু অব ইকুয়্যালিটি গোটা বিশ্বে আধ্যাত্মিকতা, সমতা এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব নিয়ে একটি বিশেষ বার্তা দেয়। ২১৬ ফুট লম্বা রামানুজের মূর্তি, এবং ১০৮ টি মন্দির, দুই ক্ষেত্রেই সংখ্যাগুলির যোগফল হয় ৯। এমনকি, এই মূর্তি তৈরির কাজে ১৮০০ টন পঞ্চধাতু ব্যবহার করা হচ্ছে।  এ ক্ষেত্রেও সংখ্যাগুলির যোগফল ৯। যেহেতু ৯ সংখ্যাটিকে নানাভাবে শুভ বলে মনে করা হয়। সেই কারণেই এই সংখ্যা নানাভাবে মেলানো হয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে।

রামানুজাচার্যই জাতি, বর্ণ এবং ধর্মের নামে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেন এবং প্রস্তাব করেন যে সবার মধ্যেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বিরাজমান। এ জন্যই এই বিশালাকার নামকরণ করা হয়েছে ‘স্ট্যাচু অফ ইকুয়্যালিটি।’ জাতপাতের ভেদাভেদেও বিশ্বাসী ছিলেন না সন্ত রামানুচার্য, সেই কারণেই এই মন্দিরে কোনও জাতপাতের ভেদাভেদ থাকবে না। সন্ত রামানুজ মানুষের মধ্যে দুটি যোগ্যতাই বিচার করতেন, নিষ্ঠা ও শেখার আগ্রহ। সেই মন্ত্রই অনুসরণ করা হচ্ছে এই মন্দিরেও।