কেন কমিটি? ‘নিমরাজি’ কৃষকদের গুরুত্ব বোঝাল সুপ্রিম কোর্ট
প্রধান বিচারপতি বলেন, "আমরা সমাধানের উপায় খুঁজছি। আপনারা যদি অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলন করতে চান, তবে করুন। তবে যাঁরা সত্যিই সমস্যার সমাধান চান, আশা করছি তাঁরা কমিটির সামনে হাজির হবেন। এই কমিটি কোনও নির্দেশ জারি করবে না বা আপনাদের শাস্তি দেবে না।"
নয়া দিল্লি: কেন্দ্র-কৃষক দ্বৈরথের মাঝে অবশেষে হস্তক্ষেপ করল শীর্ষ আদালত। মঙ্গলবার কৃষি আইন সংক্রান্ত একাধিক মামলার রায় ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। জানানো হল, আপাতত স্থগিত থাকবে কৃষি আইনের প্রয়োগ প্রক্রিয়া। একইসঙ্গে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও ঘোষণা করা হল।
গতকালই কেন্দ্রকে ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, “আইন কার্যকর করার সিদ্ধান্তে আপনারা স্থগিতাদেশ জারি করবেন কিনা বলুন, নয় তো আমরা করব।” ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই নিজেই স্থগিতাদেশ দিল। শীর্ষ আদালতের রায়ে বলা হয়, “আমরা, পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া অবধি তিনটি কৃষি আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ জারি করছি। এই সমস্যার সমাধানের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হবে।”
এর আগেও একাধিকবার কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট, কিন্তু প্রতিবারই তা নাকচ করে দেয় কৃষক সংগঠনগুলি। গতকালও সুপ্রিম কোর্ট যে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়, তাতেও ‘না’ করে দেয় কৃষক সংগঠনগুলি। কেন্দ্র ও কৃষক সংগঠনগুলির তরফে হাজির আইনজীবীদের কমিটির সদস্যদের নাম সুপারিশ করতেও বলা হয়।
আরও পড়ুন: কৃষি আইন প্রয়োগে স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের, সমাধান খুঁজতে গঠিত হবে কমিটি
কৃষকদের তরফে প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য হিসাবে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আরএম লোধার নাম সুপারিশ করেন আইনজীবী দুশ্যন্ত দাভে। কেন্দ্রের তরফে কমিটির সদস্যদের নাম সুপারিশের জন্য একদিনের সময় চেয়ে নেওয়া হয়। তবে আজ দুই পক্ষের সুপারিশের অপেক্ষা না করেই প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে (SA Bobde) কমিটির চার সদস্যের নাম ঘোষণা করেন। যাদের মধ্যে কৃষকদের প্রস্তাবিত সদস্য়ের নাম নেই। সুপ্রিম কোর্টের তৈরি করে দেওয়া কমিটির সদস্যরা হলেন কৃষি অর্থনীতিবিদ অশোক গুলাটি, হরসিমরত মান, প্রমোদ জোশি ও অনিল ঘানওয়াত।
কমিটি গঠনের ঘোষণা করে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি ভি রামাসুব্রহ্মণ্যম এবং বিচারপতি এ বোপান্নার বেঞ্চের তরফে বলা হয়, “এই সমস্যার সমাধানে আমরা একমাত্র কমিটির উপর ভরসা রাখতে পারি। বিচারপ্রক্রিয়ার একটি অংশ হবে এই কমিটি।” একইসঙ্গে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় যে, কৃষকরা কমিটির বৈঠকে যোগদান করতে চান না, এমন কোনও কথাই শুনবে না আদালত।
এই বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা সমাধানের উপায় খুঁজছি। আপনারা যদি অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলন করতে চান, তবে করুন। যাঁরা সত্যিই সমস্যার সমাধান চান, আশা করছি তাঁরা কমিটির সামনে হাজির হবেন। এই কমিটি কোনও নির্দেশ জারি করবে না বা আপনাদের শাস্তি দেবে না। আমাদের কাছে রিপোর্ট জমা করবে এই কমিটি। আমরা সংস্থাগুলির মতামতও নেব, সম্পূর্ণ বিষয়ের একটি স্পষ্ট চিত্র পাওয়ার জন্যই আমরা এই কমিটি গঠন করছি।”
গতকাল আদালতের শুনানির পর আন্দোলনরত “সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা”র তরফ থেকে রাতে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়, “তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের আইনে স্থগিতাদেশ জারির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও একক বা সংগঠিতভাবে সুপ্রিম কোর্টের গঠিত কমিটির সামনে উপস্থিত হতে চান না।” নিজেদের সিদ্ধান্তের পিছনেও কেন্দ্রকেই দোষারেপ করে তাঁরা বলেন, “আদালতে সরকারের মনোভাব ও ব্যবহার দেখেই স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে তাঁরা কমিটির সামনে আলোচনাতেও আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে রাজি হবেন না। সুতরাং এই কমিটি গঠনের মাধ্যমেও কোনও সুফল পাওয়া যাবে না।”
আরও পড়ুন:ভারতীয় জওয়ানদের হাতে আসছে উন্নত প্রযুক্তি! চিন, পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি সেনাপ্রধানের