Sri Lankan Economic Crisis: শ্রীলঙ্কাতে ভেঙেছে অর্থনীতির কোমর, ভারত কি এর থেকে শিক্ষা নেবে?

Economic Crisis: এদিকে দেশের ঘাড়ে রয়েছে বিপুল ঋণের বোঝা। এক কথায় বলা যায়, যা কিছু খারাপ হওয়ার ছিল, তা একসঙ্গেই হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। তবে এই পরিস্থিতিতেই প্রয়োজন শ্রীলঙ্কার আর্থিক সঙ্কট বিশ্লেষণ করার এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির মিল খোঁজার।

Sri Lankan Economic Crisis: শ্রীলঙ্কাতে ভেঙেছে অর্থনীতির কোমর, ভারত কি এর থেকে শিক্ষা নেবে?
ছবি: সংবাদ সংস্থা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 09, 2022 | 4:21 PM

কলম্বো: চরম আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির জেরে সঙ্কট দেখা দিয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর। তলানিতে ঠেকেছে দেশের অর্থভাণ্ডার, হু হু করে কমছে শ্রীলঙ্কার মুদ্রার দাম। কৃষিপণ্যের উৎপাদন থেকে রফতানি, ধস নেমেছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। এদিকে দেশের ঘাড়ে রয়েছে বিপুল ঋণের বোঝা। এক কথায় বলা যায়, যা কিছু খারাপ হওয়ার ছিল, তা একসঙ্গেই হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। তবে এই পরিস্থিতিতেই প্রয়োজন শ্রীলঙ্কার আর্থিক সঙ্কট বিশ্লেষণ করার এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির মিল খোঁজার। শ্রীলঙ্কার মতোই ভারতেরও যাতে একই পরিস্থিতি না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেবে এই বিশ্লেষণই।

কোথায় ভুল করল শ্রীলঙ্কা?

২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করার পরই গোতাবায়া রাজপক্ষ নিজের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছিলে। করের বোঝা কমিয়ে দেওয়ায় ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স বা ভ্যাট অর্ধেকে নেমে আসে। তবে এই সিদ্ধান্ত অর্থনীতির উপর প্রভাব নিয়ে চিন্তাভাবনা না করেই নেওয়া হয়েছিল। সেই কারণেই আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০ ও ২০২১ সালে জিডিপির ঘাটতি ১০ শতাংশেরও বেশি হয়েছিল। এছাড়া আন্তর্জাতিক নিয়মের উল্টোপথে হেঁটেই শ্রীলঙ্কা তার ঋণের অধিকাংশটাই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্পোরেট ও পিএসইউয়ের সার্বভৌম বন্ডে নিয়েছিল।

করোনা মহামারির কারণে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে দ্রুত পতন হয়। শ্রীলঙ্কার আয়ের প্রধান দুটি উৎস রফতানি ও পর্যটন থমকে দাঁড়ায়। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক সঙ্কট আরও চরমে ওঠে।

ঋণ পরিশোধ করতে শ্রীলঙ্কা তাদের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার প্রায় শেষ করে ফেলেছে। এর জেরে বর্তমানে মাত্র ২০ লক্ষ ডলারের কাছাকাছি বিদেশী মুদ্রা পড়ে রয়েছে শ্রীলঙ্কার পকেটে, যা একমাসও আমদানি ব্যবস্থা চালু রাখতে পারবে কিনা সন্দেহ। দেশের অর্থনীতি এতটাই বেসামাল হয়ে গিয়েছে যে দ্রুত শ্রীলঙ্কান মুদ্রার দাম কমতে শুরু করেছে। বাধ্য হয়েই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং সরকার ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়।

কী কারণে এই সঙ্কট দেখা দিল?

এই সঙ্কট যে দেখা যাবে, তা আগে থেকেই আশঙ্কা করা হলেও, বর্তমান রাজাপক্ষ সরকারের একাধিক সিদ্ধান্তের জেরেই অর্থনীতির এই দুর্দশা হয়েছে। ২০২০ সালে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছিল রাজাপক্ষ পরিবার। বিশেষজ্ঞরা প্রথমেই রাজাপক্ষ সরকারকে সাংগঠনিক পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিয়েছিল। সরকারের প্রথম পদক্ষেপই হওয়া উচিত ছিল দেশের ঋণের বোঝা কমানো এবং জিডিপির বৃদ্ধি, বিদেশি বিনিয়োগ ও রফতানি বাড়ানো। তবে রাজাপক্ষ সরকার সেই পরামর্শ কানে না দিয়ে নিজেদের নির্বাচনী ইস্তেহার অনুযায়ী, বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে রাজ্যের মালিকানায় থাকা বিভিন্ন সংগঠনে ব্যয় বৃদ্ধি করে। একইসঙ্গে কমিয়ে দেওয়া হয় করের হার। সরকারের তরফে একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পও চালু করা হয়। নিয়োগ করা হয় ৫০ হাজার শিক্ষককে। একাধিক নতুন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার পাশাপাশি পড়ুয়াদের জন্য সুদহীন ঋণের ব্যবস্থাও চালু করা হয়।

ভারতের সঙ্গে মিল কোথায়?

শ্রীলঙ্কার সরকারের ক্ষমতায় আসার পরই রাজাপক্ষ সরকার সেদেশের কর পরিকাঠামোতে আমূল বদল এনেছিল। জনগণকে খুশি রাখতে করের হারে ব্যপক ছাড় দেওয়া হয়েছিল। কীটনাশক ও অ্যাগ্রোকেমিক্যাল সামগ্রী আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সরকার, পাশাপাশি জৈব কৃষিকাজকেই প্রধান গুরুত্ব দিয়েছিল সরকার। করে ছাড় দেওয়ার কারণে করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয় পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। সেই সময় সরকারের আয় একদম তলানিতে গিয়ে পৌঁছয়। কীটনাশক নিষিদ্ধ করার কারণে দেশের কৃষিকাজেও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। ফলে সব দিক থেকেই সরকারের আয় বৃদ্ধি হচ্ছিল। অর্থনীতির বেহাল দশা অবশ্যম্ভাবী হয়েছিল।

শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির সঙ্গে ভারতে বেশ কিছু রাজ্যের সাদৃশ্য

শ্রীলঙ্কার বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে বিরোধী শাসিত ভারতের বেশ কিছু রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতির সাদৃশ্য রয়েছে। পঞ্জাব, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলাঙ্গানা ও ছত্তীসগঢ়ের পরিস্থিতি অনেকেটা একই রকম। সেদেশের ভোটার তথা সাধারণ মানুষের মনজয়ে রাজনৈতিক দলগুলি এমন বেশি কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যাঁর ফলে রাজ্যগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমশই দুর্বল হয়ে গিয়েছে। ফলে ঋণের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে।

সেন্ট্রাল ডেপুটেশনে চলে যাওয়ার আগে এই রাজ্যগুলিতে কাজ করে আসা বেশ কিছু আমলা জানিয়েছেন, এই রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ, তারা যদি দেশের অঙ্গ না হত, তবে এতদিন ধুলিসাৎ হয়ে যেত। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বেশ কয়েকটি রাজ্য সম্পর্কে সচেতন করেছেন বেশ কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় আমলা। এই রাজ্যগুলির শাসক দল, জনগণকে খুশি রাখার জন্য দান-খয়রাতির রাজনীতিতে এতটাই জোর দিয়েছে, যে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ দিকে এগিয়ে গিয়েছে। ফলে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে অর্থের অভাব প্রকট হয়েছে। জানা গিয়েছে, রাজ্য জিডিপি ও ঋণের অনুপাতে পঞ্জাব, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্ধ্র প্রদেশ সব থেকে বেশি খারাপ অবস্থায় রয়েছে।

আরও পড়ুন Sri Lanka Ecomonic Crisis: শ্রীলঙ্কার সঙ্গে রয়েছে সাদৃশ্য, একই পরিণতি হতে পারে ভারতের বেশ কিছু রাজ্যের