বিশ্লেষণ: রক্ষাকবচহীন টুইটার! এ বার কেন্দ্র চাইলেই…

এ বার কোনও তৃতীয় ব্যক্তি টুইটারে আইনবিরুদ্ধ কোনও পোস্ট করলে আইনের জালে জড়াতে হবে টুইটারকে।

বিশ্লেষণ: রক্ষাকবচহীন টুইটার! এ বার কেন্দ্র চাইলেই...
গ্রাফিক্স- অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Updated on: Jun 17, 2021 | 1:58 PM

নয়া দিল্লি: নয়া ডিজিটাল আইন নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলির একটা সিংহভাগ মতবিরোধ ছিল। কু, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এই আইন অনুযায়ী হাঁটলেও নিয়ম মানতে অরাজি ছিল কেন্দ্র। তবে আসতে আসতে পরিস্থিতি বদলায়। কেন্দ্রের ডিজিটাল আইনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেয় টুইটার (Twitter)। সংস্থার তরফে কেন্দ্রকে জানানো হয়, কমপ্লায়েন্স অফিসার নিয়োগ করেছে তারা। কিন্তু কেন্দ্রের হাতে সে তথ্য পৌঁছয়নি। তাই কেন্দ্র টুইটারের রক্ষাকবচ তুলে নিয়েছে। এর ফলে কী কী সমস্যার মুখে পড়তে পারে কেন্দ্র? কোন কোন ক্ষেত্রেই বা আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়তে পারে জ্যাক ডোরসের সংস্থা। তার জন্য প্রথমে বুঝতে হবে এই আইনি রক্ষাকবচ কী?

তথ্য ও প্রযুক্তি আইন, ২০০০-এর ৭৯ ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি যদি সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কোনও অপরাধ করেন, সেক্ষেত্রে ওই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডারের বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ হবে না। পদক্ষেপ হবে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এতদিন এই রক্ষাকবচ পাচ্ছিল টুইটার। কেন্দ্র সেই রক্ষাকবচ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় প্রথম কোনও মার্কিন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে কেন্দ্র চাইলেই এখন আইনি পদক্ষেপ করতে পারে। ধরা যাক, আপনার টুইটারে কোনও পোস্ট আইনবিরুদ্ধ। সেক্ষেত্রে রক্ষাকবচ থাকায় এতদিন মামলা দায়ের হত স্রেফ আপনারই বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন রক্ষাকবচ প্রত্যাহার হয়ে যাওয়ায় প্ল্যাটফর্মে কোনও আইনবিরুদ্ধ কাজ হলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে টুইটার কর্তৃপক্ষকেও।

কোত্থেকে উৎপত্তি আইনি রক্ষাকবচের?

আইটি আইন,২০০০-এর মূল কাঠামোয় আইনি রক্ষাকবচ ছিল না। ২০০৪ সালে এই আইনে সংযুক্ত হয় রক্ষাকবচ। ২০০৪ সালে এক পড়ুয়া bazee.com ওয়েবসাইটে অশ্লীল ভিডিয়ো পোস্ট করে। অনলাইনে পর্নোগ্রাফি ছড়ানোর অপরাধে এরপর ওই পড়ুয়া ও bazee.com-এর সিইও অবনীশ বজাজের বিরুদ্ধে দায়ের হয় মামলা। পাল্টা বজাজ চ্যালেঞ্জ করেন যে ওই এমএমএস সরাসরি দু’জনের মধ্যে লেনদেন হয়েছিল, সেখানে ওয়েবসাইটের কোনও নিজস্ব ভূমিকা নেই। তারপর থেকেই আইটি আইন,২০০০-এ যুক্ত হয় ৭৯ নং ধারা। যেখানে প্ল্যাটফর্মগুলিকে আইনি রক্ষাকবচ দেয় কেন্দ্র।

কেন টুইটার এই আইনি রক্ষাকবচ হারিয়ে ফেলল?

বিশ্ব জুড়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব পেয়েছে টুইটার। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশের মন্ত্রী-আমলারা এখন বড় বড় ঘোষণা করেন টুইটারেই। রাজনৈতিক দলেরও মুখপত্র হয়ে উঠেছে টুইটার। তাই সত্যি-মিথ্যের ফারাক করতে হয় টুইটারকে। সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে, এমন কোনও টুইটে গ্রাহকদের সতর্ক করা বা সেই পোস্ট মুছেও ফুলে টুইটার। সম্প্রতি উস্কানিমূলক টুইট করার অভিযোগে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্ল্যাটফর্ম থেকে সম্পূর্ণ ব্যান করেছে টুইটার। জ্যাক ডোরসের সংস্থার এই পদক্ষেপ প্রশ্নের মুখে পড়ছে। আবার ফেক নিউজে ল্যাবেলিং করার পদক্ষেপ প্রশংসা পেয়েছে। ভারতেও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অপরাধ রোখার জন্য কেন্দ্র নয়া ডিজিটাল আইন এনেছে। গত বছর ডিসেম্বরে কেন্দ্রের আনা আইনের প্রয়োগ হয়েছে চলতি বছরের মে মাসে। যেখানে কেন্দ্র একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে নির্দেশ দিয়েছে একজন চিফ কম্প্লায়েন্স অফিসার, একজন নোডাল অফিসার ও একজন রেসিডেন্স গ্রিভেন্স অফিসার নিয়োগ করার জন্য। যার মাধ্যমে কেন্দ্রের কোনও প্রশ্নের উত্তর টুইটার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিতে পারবে। কেন্দ্রের কোনও টুইট নিয়ে সমস্যা থাকলে তার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ হবে। নয়া ডিজিটাল আইনে মানবধিকার বিঘ্নিত হবে, এই যুক্তিতে নয়া ডিজিটাল আইনের বিরোধিতা করেও ‘শেষ নোটিসে’ নিয়ম মানতে বাধ্য হয়েছে সংস্থা। কিন্তু ডেডলাইন পেরিয়ে যাওয়ার পরও কেন্দ্রের কাছে এসে পৌঁছয়নি তথ্য। তাই টুইটার রক্ষাকবচ হারিয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের। খোদ তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ টুইট করে দাবি করেছেন, নিজেদের ভুল ঢাকতে ডিজিটাল আইন নিয়ে ভারতের প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্য করেছে টুইটার।

আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: ভেনেজুয়েলায় ১ টাকায় পেট্রল, ভারতে ১০২! নেপথ্যে কার কারসাজি?

কী কী সমস্যায় পড়তে পারে টুইটার?

রক্ষাকবচ হারিয়ে ফেলার পর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে যে কোনও আইনবিরুদ্ধ কাজের জন্যই দায়ী হবে টুইটার। অর্থাৎ এ বার কোনও তৃতীয় ব্যক্তি টুইটারে আইনবিরুদ্ধ কোনও পোস্ট করলে আইনের জালে জড়াতে হবে টুইটারকে।

কী পর্যবেক্ষণ বিশেষজ্ঞদের?

এ বিষয়ে সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, আইন যেমন আছে তেমন আইনের ফাঁকও আছে। তবে এই আইন আরও আগে আসা উচিত ছিল বলে মত তাঁর। কারণ কোনও অপরাধের মামলা সমাধান করতে গিয়ে আগে অনেক ক্ষেত্রেই সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলির কাছ থেকে সহযোগিতা মেলেনি। অনলাইনেও উত্তর মেলে না। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় অফিসার থাকলে সে বিষয়ে সুবিধা হবে তদন্তের। রক্ষাকবচ প্রত্যাহার নিয়ে তাঁর দাবি একাধিক নোটিসের পর এই পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ সুশোভন মুখোপাধ্যায়ও কেন্দ্রের নয়া ডিজিটাল আইনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আইনি রক্ষাকবচ তুলে নিয়ে কেন্দ্র টুইটারের ওপর চাপ তৈরি করতে চাইছে।” নয়া ডিজিটাল আইন সম্পর্কে তাঁর মত, আইসোলেটেড হয়ে না থেকে গেলে এই আইন কার্যকরী হবে। নয়তো এটা একটা মিথ। কারণ এর আগে কেবল অপারেটরদের ওপর এইরকম চেষ্টা করে লাভ হয়নি।

আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: কোভ্যাক্সিন তৈরিতে বাছুরের প্লাজমা? আসল সত্যিটা জানুন