Udaipur Chintan Shivir: পরিবর্তন কিছু হল, তবে গান্ধী পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্তি পেল কি কংগ্রেস?

Udaipur Chintan Shivir: উদয়পুরের চিন্তন শিবিরের শেষে কংগ্রেসে আনা হল বেশ কিছু বদল। তবে গান্ধী পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ ঝেড়ে ফেলতে পারল কি?

Udaipur Chintan Shivir: পরিবর্তন কিছু হল, তবে গান্ধী পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্তি পেল কি কংগ্রেস?
'চিন্তন শিবিরে' আলোচনায় রাহুল গান্ধী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 15, 2022 | 6:13 PM

উদয়পুর: আজ রবিবার, রাজস্থানের উদয়পুরে শেষ হল জাতীয় কংগ্রেসের তিন দিনের ‘চিন্তন শিবির’। ২০১৩ সালে জয়পুরে যে ‘চিন্তন শিবির’ আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে কংগ্রেস দল তাদের নীতিগত পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেছিল। তবে, উদয়পুরের শিবির থেকে একটি স্বল্পমেয়াদী এবং কর্মমুখী সংস্কারের দিশা দেখা যাবে, এমনটাই মনে করেছিল রাজনৈতিক মহল। শেষ পর্যন্ত সংস্কার হল বটে, তবে গান্ধী পরিবারতন্ত্রের পাকচক্র থেকে কি বের হতে পারল কংগ্রেস? শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নিল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি?

‘ওয়ান-ম্যান-ওয়ান পোস্ট’

এক সূত্রের দাবি, তিন দিনের ‘চিন্তন শিবিরে’ যে ‘ওয়ান-ম্যান-ওয়ান পোস্ট’, অর্থাৎ ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নিয়মের দাবি উঠেছিল, তাতে সিলমোহর দিয়েছে সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস কার্যকরি কমিটি। তবে, পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার যে প্রস্তাব ছিল, তা মেনে নেয়নি ওয়ার্কিং কমিটি। একই সঙ্গে কংগ্রেসের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অন্যতম দাবি ছিল, কংগ্রেসের নির্বাচনী কমিটির বদলে সংসদীয় বোর্ড গঠন করা হোক। জি২৩ গোষ্ঠীর নেতাদের সেই প্রস্তাবও মেনে নেয়নি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। পরিবর্তে, কেন্দ্রে এবং প্রতিটি রাজ্যে একটি করে রাজনীতি বিষয়ক কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত কয়েক বছরে বারংবার বিজেপির পক্ষ থেকে জাতীয় কংগ্রেসকে এক পরিবার ভিত্তিক দল বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, গান্ধী পরিবারই এই দলের নিয়ন্ত্রক। গান্ধী-নেহরু ছাড়া আর কোনও নেতাকেই প্রাপ্য সম্মান দেয়নি শতাব্দী প্রাচীন দলটি। জনমানসে এই অভিযোগকে ভোঁতা করে দিতেই, ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ এবং ‘এক পরিবার, এক প্রার্থী’র নিয়ম লাগু করার প্রস্তাব এসেছিল ‘চিন্তন শিবিরের’ আলোচনায়। অর্থাৎ, এক ব্যক্তি দলে একটিই পদের অধিকারী হতে পারবেন এবং এক পরিবার থেকে একজনই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। কংগ্রেসের প্রায় সব নেতাই এই নিয়ম জারির বিষয়ে সহমত হয়েছেন। ৫ বছরের বেশি কোনও নেতা এক পদে থাকতেও পারবেন না।

গান্ধীদের বিশেষ সুরক্ষা

শেষ পর্যন্ত, এদিন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতেও এই প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়েছে। তবে, তার সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে একটি ব্যতিক্রমও। যাঁরা ৫ বছরের বেশি দলের কাজে যুক্ত আছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম লাগু হবে না। ফলে, সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা – কারোরই প্রার্থী হতে বাধা রইল না। গান্ধী পরিবারের তিন সদস্যই ৫ বছরের বেশি সময় ধরে দলীয় কাজে যুক্ত আছেন। ইতিমধ্যেই, রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন উঠতে শুরু করেছে, শুধুমাত্র গান্ধী পরিবারের প্রার্থীপদ পাওয়া সুরক্ষিত করতেই এই ব্যতিক্রম যুক্ত করা হয়েছে। বিরোধীদের আরও অভিযোগ, গান্ধীদের কথা ভেবেই বয়সের সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়নি।

হবে না পার্লামেন্টারি বোর্ড 

তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, পার্লামেন্টারি বোর্ড বা সংসদীয় বোর্ড গঠনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। একের পর এক নির্বাচনে ভরাডুবির প্রেক্ষিতে এই বোর্ড গঠনের জোরালো দাবি তুলেছিল কংগ্রেসের বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তাদের প্রবল চাপের মুখেও, বোর্ড গঠন না করার সিদ্ধান্তেই অটল থাকল জাতীয় কংগ্রেসের কার্যকরী কমিটি।

বর্তমানে, লোকসভা ও বিধানসভায় কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা তৈরির দায়িত্ব সামলায় কংগ্রেসের নির্বাচনী কমিটি। তবে বিদ্রোহী জি২৩ নেতাদের অভিযোগ, এটি নামেই কমিটি। সব সিদ্ধান্ত নেন সনিয়া এবং রাহুল গান্ধীই। প্রার্থী তালিকা গঠন প্রক্রিয়াকে আরও গণতান্ত্রিক করে তুলতেই একটি নয়া পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠন করে, সেই বোর্ডের হাতেই প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ার দায়িত্ব তুলে দেওয়ার দাবি করেছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তবে, কার্যকরী কমিটিতে তো বটেই, এমনকী চিন্তন শিবিরের আলোচনাকেও বোর্ড গঠন করার বিপক্ষেই বেশি মত এসেছে বলে সূত্রের খবর। অধিকাংশ কংগ্রেস নেতাই মনে করছেন, সংসদীয় বোর্ড গঠন হলে অনেকটাই ক্ষমতা হারাবেন দলের সভানেত্রী।

বস্তুত, কংগ্রেস দলের সংবিধানেই সংসদীয় বোর্ড গঠনের নির্দেশ রয়েছে। দলীয় সংবিধান অনুযায়ী কংগ্রেস সভাপতি এবং আরও নয়জন সদস্যকে নিয়ে সংসদীয় বোর্ড গঠন করার দায়িত্ব ওয়ার্কিং কমিটির। সংসদে কংগ্রেসের দলনেতাকেও এই বোর্ডে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। কংগ্রেস সভাপতিই হবেন এই বোর্ডের চেয়ারম্যান। কংগ্রেসের সংসদীয় কার্যক্রম পরিচালনা এবং তার নিয়মকানুন প্রণয়নের কাজ করবে এই বোর্ড। তবে, পিভি নরসিমা রাও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় থেকেই এই বোর্ড গঠনের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত আর এই বোর্ড গঠন করা হয়নি।