ভিডিয়ো: প্রবল গতিতে ধেয়ে আসছে জল, উদভ্রান্ত দৌড়ই সার, নিমেষে সলিল সমাধি তপোবনের শ্রমিকদের

রবিবার সকালে নন্দাদেবী হিমবাহের একাংশ ভেঙে পড়ায় অলকানন্দা নদীতে যে হড়পা বান এসেছিল, তাতে প্রায় ২০০-র বেশি শ্রমিক ও গ্রামের বাসিন্দা ভেসে গিয়েছেন। সরকারি হিসাবে এখনও নিখোঁজ ১৯৭ জন।

ভিডিয়ো: প্রবল গতিতে ধেয়ে আসছে জল, উদভ্রান্ত দৌড়ই সার, নিমেষে সলিল সমাধি তপোবনের শ্রমিকদের
ভেসে যাওয়ার সেই মুহূর্ত।
Follow Us:
| Updated on: Feb 10, 2021 | 3:35 PM

জোশীমঠ: বাকি পাঁচটা দিনের মতোই সকালে জোশীমঠের তপোবনে অবস্থিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধের উপর কাজ করছিলেন ১০-১২জন শ্রমিক। আচমকাই বিকট শব্দে চমকে উঠলেন তাঁরা। পিছন ফিরে দেখলেন, পাহাড়ের গা বেয়ে হুড়মুড়িয়ে বাঁধের দিকেই এগিয়ে আসছে জল। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পালাবার চেষ্টা করলেও ততক্ষণে অনেকটাই দেরী হয়ে গিয়েছে। একপ্রকার নিরুপায় হয়েই বাঁধের এক কোণে চলে যান তাঁরা। কিন্তু চোখের পলকেই শেষ হয়ে গেল সবকিছু, জলের তোড়ে ভেসে গেলেন বাঁধের উপর উপস্থিত শ্রমিকরা। উপর থেকে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার উপায় ছিল না গ্রামবাসীদেরও। হাড়হিম করা এই ভিডিয়োই সামনে এল উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ের দু’দিন পরে।

রবিবার সকালে নন্দাদেবী হিমবাহের একাংশ ভেঙে পড়ায় অলকানন্দা নদীতে যে হড়পা বান এসেছিল, তাতে প্রায় ২০০-র বেশি শ্রমিক ও গ্রামের বাসিন্দা ভেসে গিয়েছেন। এখনও অবধি ১৮জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার, ৩২টি মৃতদেহ উদ্ধার হলেও সরকারি হিসাবে নিখোঁজ ১৯৭ জন। বিপর্যয় নেমে আসার কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই উদ্ধারকার্যে লেগে পড়েছিল সেনাবাহিনী, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ ও আইটিবিপির জওয়ানরা। ৬০ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও উদ্ধারকার্য চালানো হচ্ছে।

বিপর্যয়ের পরেরদিন বায়ুসেনার তরফে তপোবন বাঁধের ধ্বংসাবশেষের চিত্রও তুলে ধরা হয়। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে কী হয়েছিল, তা অনেকেই জানেন না। হড়পা বানের ভয়াবহতা কতটা, সেটাই স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, পাহাড় ভেঙে হুড়মুড়িয়ে কাদা মাখা জল নেমে আসছে। বিকট শব্দ শুনেই বাঁধের উপর কাজে ব্যস্ত শ্রমিকেরা পিছনে ফিরে তাকান, দেখেন জলের রাশি এগিয়ে আসছে তাঁদের দিকেই। ওই মুহূর্তে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে বাঁধের উপরেই এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করলেও নীচে নামার রাস্তা ততক্ষণে নদীর গ্রাসে চলে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন: বেআইনি মদ খুঁজতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের মারে মৃত কনস্টেবল, পাল্টা এনকাউন্টার যোগীর পুলিশের

নিরুপায় হয়ে তাঁরা বাঁধের ধারে এসে দাঁড়ান। ভেবেছিলেন, হয়তো জল ধারগুলিতে এসে পৌঁছবে না। কিন্তু এক মুহূর্তেই ভেঙে গেল সেই ভুল ধারণা। জলের তোড়ে বাঁধের উপর থেকেই নীচে পড়ে গেলেন কয়েকজন। উপস্থিত বাকি কয়েকজন ভেসে গেলেন স্রোতে। পাহাড়ের উপরিভাগে দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয় বাসিন্দারা চিৎকার করলেও বাঁধে কর্মরত শ্রমিকদের প্রাণ বাঁচাতে কিছুই করার ছিল না তাঁদের।

অলকানন্দা নদীতে হড়পা বানে আশেপাশের বহু গ্রামেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তাঁদের কাছে ত্রাণসামগ্রী ও ওষুধ পৌঁছতে আইটিবিপির জওয়ানরা পায়ে হেঁটে ও হেলিকপ্টারের সাহায্যে দুর্গম অঞ্চলগুলিতে যাচ্ছেন। সেখানেও শোনা যাচ্ছে স্বজনহারা মানুষের কান্না। ভিন রাজ্য থেকে কাজ করতে এসে যাঁরা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন, তাঁদের খোঁজেও ক্রমাগত হেল্পলাইনের ফোন নম্বরগুলি বেজে যাচ্ছে, তবে সঠিক জবাব দিতে পারছেন না উদ্ধারকারী দল কিংবা প্রশাসন।

উদ্ধারকারী দলগুলি জানিয়েছে, প্রথম সুড়ঙ্গ থেকে ১৬জন শ্রমিককে উদ্ধার করা হলেও দ্বিতীয় সুড়ঙ্গ, যেখানে ৩০-৩৫ জন আটকে থাকার আশঙ্কা, সেখানে এখনও কারোর সাড়াশব্দ মেলেনি। পরশু থেকেই সুড়ঙ্গের মুখ পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়। আজ সকালে সেই সুড়ঙ্গে প্রবেশ করেন আইটিবিপি (ITBP) ও সেনাবাহিনীর জওয়ানরা। তবে সুড়ঙ্গের ভিতরে জমে থাকা জল বেরোতে শুরু হওয়ায় কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে উদ্ধারকার্য। এখনও অবধি মাত্র ২০০ মিটার প্রবেশ করা সম্ভব হলেও দ্রুত উদ্ধারকার্য শেষ করা যাবে বলেই মনে করছেন এনডিআরএফ (NDRF)-র কর্মীরা।

আরও পড়ুন: উদ্ধারকার্যে বাধ সাধছে সুড়ঙ্গে জমে থাকা জল, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩২, এখনও নিখোঁজ ১৯৭