TV9 Explained on Joshimath Sinking: প্রাচীন যুগের ধ্বংসস্তূপের উপরে তৈরি জোশীমঠ, ১৮৮৬-তে বিপদঘণ্টার পরও কেন টনক নড়ল না?
Joshimath Land Sinking: প্রাচীন যুগে এক ভয়াবহ ভূমিধস হয়েছিল উত্তরাখণ্ডে। সেই ধ্বংসস্তূপের ঠিক উপরেই তৈরি হয় জোশীমঠ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জোশীমঠের ভিত দুর্বল।
দেহরাদুন: উন্নয়নের নামে প্রতিনিয়ত ভাঙছে প্রকৃতির নিয়ম। পাহাড় কেটে তৈরি হচ্ছে সড়কপথ, চলছে যথেচ্ছ নির্মাণ। মানবজাতির এই দীর্ঘ অত্যাচার মুখ বুজে সয়ে আসছে প্রকৃতি। মাঝেমধ্যে ভূমিকম্প, হিমবাহে ধস, হড়পা বানের মাধ্যমে পাল্টা জবাব দেয় প্রকৃতিও। সময়ের সঙ্গে যত দূষণ বেড়েছে, ভৌগলিক প্রাকৃতিক গঠন পরিবর্তন হয়েছে, সেই সবকিছুরই জবাব এবার একসঙ্গে মিলতে শুরু করেছে। প্রকৃতির নিয়ম ভাঙার ভয়ঙ্কর জবাব মিলছে একসঙ্গে। ভাঙন ধরেছে জোশীমঠে (Joshimath)। সেখানে ক্রমশ বসে যাচ্ছে মাটি। ফাটল (Crack) ধরছে বাড়িঘর থেকে রাস্তাঘাটে। জোশীমঠের এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন থেকে পরিবেশবিদরা। ইতিমধ্যেই সেখানে শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ৬০০ পরিবারের। উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) ওই জেলায় মোতায়েন রয়েছে এনডিআরএফ, এসডিআরএফের বাহিনী। কিন্তু প্রশ্নটা হল, কেন এমন পরিস্থিতি হল জোশীমঠের?
ধসে যাচ্ছে জোশীমঠ-
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত জোশীমঠ উত্তরাখণ্ডের ছোট্ট একটি শহর। শান্ত, নিরিবিলি এই শহরের ধর্মীয় মাহাত্ম্য রয়েছে। শীতকালে যখন বদ্রীনাথের মন্দির বন্ধ থাকে, তখন জোশীমঠই ভগবান বিষ্ণুর ঠিকানা হয়। তবে বিগত দুই দশক ধরে এই শহরে যেমন জনসংখ্যা বেড়েছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নির্মাণকাজ। ইন্দো-চিন সীমান্তের কাছে অবস্থিত হওয়ায়, এখানে বিপুল পরিমাণ সেনাও মোতায়েন থাকে, রয়েছে সেনা ক্যাম্প। হিমালয় অভিযানে যারা যান, তাদের বেস ক্যাম্প হয় এই জোশীমঠ। কিন্তু বিগত কয়েকদিন ধরেই খবরের শিরোনামে জোশীমঠ রয়েছে তার ভাঙনের কারণে।
দীর্ঘদিন ধরেই জোশীমঠের বাসিন্দারা দাবি করছিলেন, শহরের ভিত বসে যাচ্ছে, বাড়িতে ফাটল ধরছে। এখনও অবধি জোশীমঠের কমপক্ষে ৬০০ বাড়িতে ফাটল ধরেছে বলে জানা গিয়েছে। সম্প্রতিই বিশেষজ্ঞের একটি দল জোশীমঠে সমীক্ষা করেন। তারা দেখতে পান, এলাকাবাসীর দাবি সম্পূর্ণ সত্য, জোশীমঠের ভিত সত্যিই মাটিতে বসে যাচ্ছে। যেকোনও মুহূর্তেই বড় কোনও বিপর্যয় ঘটতে পারে।
বিপদঘণ্টা বেজেছিল অনেক আগেই-
জোশীমঠ নিয়ে এখন উদ্বেগ তৈরি হলেও, বিপদঘণ্টা বেজে গিয়েছিল অনেক আগেই। বিজ্ঞানী থেকে জিওলজিস্ট, অনেকেই জোশীমঠের অবস্থান ও নির্মাণকাজের জন্য কী কী বিপদ ঘটতে পারে, তা নিয়ে সতর্ক করেছেন। প্রথমবার জোশীমঠ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল ১৮৮৬ সালে। এরপরে ১৯৭৬ সালে সরকারের নিয়োগ করা মিশ্র কমিশনের রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, জোশীমঠের অবস্থান অদ্ভুত। প্রাচীন যুগে এক ভয়াবহ ভূমিধস হয়েছিল উত্তরাখণ্ডে। সেই ধ্বংসস্তূপের ঠিক উপরেই তৈরি হয় জোশীমঠ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জোশীমঠের ভিত দুর্বল। এর একটি নির্দিষ্ট সহনশীলতা রয়েছে। কিন্তু লাগাতার নির্মাণকাজ, হাইড্রো প্রকল্প ও জাতীয় সড়ক নির্মাণের কারণে জোশীমঠের ভিত ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
আলগা হচ্ছে মাটি-
এছাড়া বিষ্ণুপ্রয়াগের উষ্ণ প্রস্রবণের কারণেও মাটির নীচে জলীয় বাষ্প জমে থাকে। ভূমিধসের কারণে পাথর, মাটির ভাঙা টুকরো, বোল্ডারের সঙ্গে এই বাষ্প মিশ্রিত হয়ে মাটি আরও আলগা হতে থাকে। বিশেষ করে বর্ষাকালে পাহাড় থেকে মাটি ধুয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা দেখা যায়। হিমালয় থেকে নেমে আসা খরস্রোতা নদীগুলি যেমন ঋষিগঙ্গা, ধৌলিগঙ্গায় হড়পা বান নামায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল জোশীমঠ-
সিসমিক জ়োন ৫-র উপরেও অবস্থিত জোশীমঠ। ফলে এই অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ। সেখানেই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে হোটেল, রেস্তোরাঁ। কেদারনাথ, বদ্রীনাথ যাত্রার ক্ষেত্রেও যেমন পুণ্যার্থীদের মাথা গোঁজার ঠাই হয়ে উঠেছে জোশীমঠ, তেমনই আউলিতে যারা স্কি করতে আসেন, তারাও জোশীমঠেই এসে ওঠেন। এমনিতেই বিগত এক দশকে ব্যাপক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে জোশীমঠে, তার উপরে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের ভিড়ে এই অঞ্চলের উপরে আরও চাপ বেড়েছে।
জিওলজিস্টদের মতে, যেভাবে ফাটল ধরছে এবং মাটি বসে যাচ্ছে, তাতে শুধু জোশীমঠই নয়, উত্তরাখণ্ডের একাধিক শহরই টিকে থাকতে পারবে না। বড় কোনও বিপর্যয় ঘটার আগেই এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।