অপচয় নাকি কেন্দ্রের অসহযোগিতা, কোন কারণে দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে করোনা ভ্যাকসিনের আকাল?
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, তামিলনাড়ুতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভ্যাকসিন নষ্ট হয়েছে। এরপরেই রয়েছে হরিয়ানা, পঞ্জাব, তেলঙ্গনা। অন্যদিকে কেরল, পশ্চিমবঙ্গ, হিমাচল প্রদেশ, মিজোরাম, গোয়া সহ একাধিক রাজ্যে অপচয় নেই বললেই চলে।
জ্যোতির্ময় রায়: করোনা সংক্রমণের ভয়ে দেশের চারিদিকে ফুটে উঠছে হতাশার ছবি। আশার আলো একমাত্র দেশে তৈরি দুটি করোনা ভ্যাকসিন। যদিও এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে নানা সময়ে নানান প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দল। করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বেড়েছে ভ্যাকসিনেরও। দেশের করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন ভ্যাকসিন এবং ওষুধের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, সেইসময়ই অনেকগুলি রাজ্যে করোনা ভ্যাকসিনের ব্যাপক অপচয় হচ্ছে। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে দেশে টিকা অভিযান শুরুর দিন থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ৪৪ লক্ষ ডোজ়েরও বেশি ভ্যাকসিন নষ্ট হয়েছে। এই তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে তামিলনাড়ু।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১১ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যগুলিতে প্রায় ১০.৩৪ কোটি ডোজ় ভ্যাকসিন পাঠানো হয়েছে, এর মধ্যে ৪৪.৭৮ লক্ষেরও বেশি ডোজ় বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে যায়। তামিলনাড়ুতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভ্যাকসিন নষ্ট হয়, মোট অপচয়ের ১২ শতাংশই নষ্ট হয়েছে এই রাজ্যে। এর পরে রয়েছে হরিয়ানা, যেখানে ৯.৭৪ শতাংশ, পঞ্জাবে ৮.১২ শতাংশ, মণিপুরে ৭.৮ শতাংশ এবং তেলঙ্গনায় ৭.৫৫ শতাংশ ভ্যাকসিনের ডোজ় নষ্ট হয়েছে।
কেরল, পশ্চিমবঙ্গ, হিমাচল প্রদেশ, মিজোরাম, গোয়া, দমন ও দিউ, আন্দামান ও নিকোবর এবং লক্ষদ্বীপ সহ একাধিক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভ্যাকসিনের অপচয় প্রায় শূন্য। উল্লেখ্য, অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি এবং কেন্দ্রের মধ্যে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে চলছে রাজনীতি। সম্প্রতি মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব এবং দিল্লি সরকার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে, তাদের রাজ্যে গুজরাটের তুলনায় কম পরিমাণ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরাসরি আঙুল তুলে অভিযোগ করে যে, গুজরাটের চেয়ে অনেক বেশি জনবহুল হওয়া সত্ত্বেও মহারাষ্ট্রকে কম পরিমাণে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
আগামী ১ মে থেকে কেন্দ্রীয় সরকার ১৮ বছরের বেশি বয়সী সমস্ত ব্যক্তিকে করোনা টিকা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এই অনুমতি দেওয়ার ফলে টিকা কর্মসূচি আরও গতি লাভ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশে ভ্যাকসিনের বিপুল চাহিদার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশে ব্যবহৃত ভ্যাকসিনকেও জরুরিভিত্তিতে ভারতে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। পাশাপাশি ভারতে ভ্যাকসিনের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে কেন্দ্রের তরফে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা ভারত বায়োটেক ও সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়াকে যথাক্রমে ১৫০০ কোটি ও ৩,০০০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। ভারত বায়োটেক ‘কোভ্যাক্সিন’ এবং সেরাম ইনস্টিটিউট ‘কোভিশিল্ড’ ভ্যাকসিন তৈরি করছে।
বিগত কয়েকদিনে বহু রাজ্যই ভ্যাকসিনের ঘাটতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছে। তবে কেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছে যে, রাজ্যগুলির অব্যবস্থাপনার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ গত সপ্তাহেই বলেছিলেন যে, এই মুহুর্তে ভ্যাকসিনের অভাব নেই। তবে এই পরিস্থিতি তৈরির প্রধান কারণ হল, কোনও সুগঠিত পরিকল্পনা ছাড়াই রাজ্যগুলি টিকা কর্মসূচি শুরু করেছিল। আমরা বড় বড় রাজ্যে একসঙ্গে চার দিনের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। চতুর্থ এবং পঞ্চম দিনে প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের ফের ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হচ্ছে এবং ছোট রাজ্যগুলিতে একবারে সাত থেকে আট দিনের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, তাদের আবার সপ্তম বা অষ্টম দিনে প্রয়োজন অনুযায়ী ভ্যকসিন সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে রাজ্যগুলি নির্ধারিত ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে পারছে না। রাজ্যগুলির উচিত, কোল্ড চেইন স্তরেই অব্যবহৃত ভ্যাকসিন কত মজুত রয়েছে, তা জানানো।