Uttarkashi Tunnel Rescue: নিষিদ্ধ পদ্ধতিই শেষ হাতিয়ার, ইঁদুরের মতো গর্ত খুঁড়ে এগোল উদ্ধারকারীরা
Uttarkashi Tunnel Rescue: মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই ৪১ শ্রমিককে সুড়ঙ্গের বাইরে বের করে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এই সাফল্য এল 'ব়্যাট-হোল মাইনিং' নামে এক বেআইনি পদ্ধতি ব্যবহার করে। কী এই খনন পদ্ধতি? কেন এই পদ্ধতিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে? কেনই বা এই নিষিদ্ধ পদ্ধতিই উত্তরাখণ্ডের উদ্ধারকাজে ব্যবহার করা হল?
দেরাদুন: উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা-বারকোট সুড়ঙ্গে ধসের জেরে আটকে পড়া ৪১ শ্রমিকদের উদ্ধারে প্রাথমিকভাবে যন্ত্রে উপরই ভরসা রেখেছিলেন উদ্ধারকারীরা। কিন্তু, একের পর এক ড্রিল মেশিন ব্যর্থ হয়েছে। ভেঙ্গে গিয়েছে আমেরিকায় তৈরি অগার মেশিনও। তারপরই যন্ত্রনির্ভরতা থেকে সরে ম্যানুয়াল ড্রিলিং, অর্থাৎ, হাতে হাতে খননের রস্তায় হাঁটেন উদ্ধারকারীরা। আর তাতেই সাফল্য এসেছে। নতুন করে কোনও বিপত্তি না ঘটলে, মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই ৪১ শ্রমিককে সুড়ঙ্গের বাইরে বের করে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এই সাফল্য এল ‘ব়্যাট-হোল মাইনিং’ নামে এক বেআইনি পদ্ধতি ব্যবহার করে। কী এই খনন পদ্ধতি? কেন এই পদ্ধতিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে? কেনই বা এই নিষিদ্ধ পদ্ধতিই উত্তরাখণ্ডের উদ্ধারকাজে ব্যবহার করা হল? আসুন জেনে নেওয়া যাক –
ব়্যাট-হোল মাইনিং কী?
নাম থেকেই স্পষ্ট, ব়্যাট-হোল মাইনিং হল ইঁদুর যেভাবে মাটিতে গর্ত খোঁড়ে, সেই ভাবে খনন চালানোর পদ্ধতি। এই প্রাচীন এবং বিপজ্জনক খনন পদ্ধতি, ভারতে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বের রাজ্য মেঘালয়ে বহুল প্রচলিত। এই খনন কৌশলে মাটিতে সরু গর্ত খোঁড়া হয়। গর্তটি মাত্র একজন ব্যক্তি নামার পক্ষে উপযুক্ত হয়। সাধারণত কয়লা খনি থেকে কয়লা তোলার কাজে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হত। ওই গর্তটি দিয়ে দড়ি বা বাঁশের মই ব্যবহার করে নেমে, বেলচা দিয়ে ঝুড়িতে কয়লা তুলে আনেন খনি শ্রমিকরা।
এর দুটি ভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রথমত, সাইড-কাটিং পদ্ধতি। এই ক্ষেত্রে পাহাড়ের ঢাল বরাবর একটি সরু সুড়ঙ্গ খনন করা হয়। কয়লার স্তর পর্যন্ত না পৌঁছন পর্যন্ত সুড়ঙ্গটি খনন করা হয়। মেঘালয়ের পাহাড়ে সাধারণত, ২ মিটার খনন করলেই কয়লা পাওয়া যায়। দ্বিতীয় পদ্ধতি হল বক্স-কাটিং পদ্ধতি। এই ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১০০ বর্গ মিটারের একটি আয়তাকার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়। এরপর ওই খোলা আয়তাকার জায়গাটিতে উল্লম্বভাবে গর্ত খনন করা হয়। এই গর্ত সাধারণত ১০০ থেকে ২০০ ফুট গভীর হয়। কয়লার স্তর শনাক্ত করার পর, ছোট ইঁদুরের গর্তের আকারে একাধিক অনুভূমিক সুড়ঙ্গ খনন করা হয়। ওই সুড়ঙ্গগুলি দিয়ে শ্রমিকরা কয়লা তোলার জন্য নামেন।
কেন নিষিদ্ধ ব়্যাট-হোল-মাইনিং?
এই খনন পদ্ধতির ক্ষেত্রে কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই নিরাপত্তাগত উদ্বেগ থাকে। ২০১৪ সালে, বর্ষাকালে বন্যার কারণে সুড়ঙ্গ প্লাবিত হয়ে প্রাণহানির ঘটনা উল্লেখ করে, ব়্যাট-হোল-মাইনিং পদ্ধতির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল জাতীয় গ্রীন ট্রাইব্যুনাল। তবে এই প্রক্রিয়াটি শুধু খনি শ্রমিকদের জন্যই বিপজ্জনক নয়, পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। ভূমি ক্ষয়, বনভূমি ধ্বংস, স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের ব্যাঘাতের মতো পরিবেশগত বিপদ জড়িত এই খনন পদ্ধতির সঙ্গে। এই খনন পদ্ধতিকে অ্যাসিড মাইন ড্রেনেজ বলেও ডাকা হয়। মেঘালয়ের খনি থেকে ব়্যাট-হোল মাইনিং-এর ফলে অ্যাসিডের স্রোত ভারতের সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশের নদীগুলিরও ক্ষতি করেছে।
কেন উত্তরাখণ্ডে ব্যবহার করা হল এই পদ্ধতি?
উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গে উদ্ধার অভিযানে, মার্কিন অগার ড্রিলিং মেশিন ভেঙে যাওয়ার পর ব়্যাট-হোল-মাইনিং পদ্ধতি অবলম্বন করার প্রয়োজন পড়ে। দিল্লি থেকে এই কৌশলে দক্ষ বিশেষজ্ঞদের ডেকে আনা হয়। সোমবার ক্ষতিগ্রস্ত অগার ড্রিলিং মেশিনের চূড়ান্ত অংশটি, ৮০০ মিমি চওড়া পাইপটির ভিতরে হস্তচালিত সরঞ্জাম ব্যবহার করে ভেঙে বের করে আনেন তাঁরা। তারপর, ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে ব়্যাট-হোল-মাইনিং পদ্ধতিতে ম্যানুয়াল ড্রিলিং করা শুরু হয়েছিল। একটু একটু করে ড্রিল করা হয়েছে আর লোহার পাইপটি তার ভিতরে বসানো হয়।