পাতিদার ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে ভূপেন্দ্র ব্রক্ষ্মাস্ত্রে কৌশলী বিজেপি!

Bhupendra Patel : ভূপেন্দ্র প্যাটেল পাতিদার গোষ্ঠী থেকে উঠে আসা গুজরাটের পঞ্চম মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে ছিলেন আনন্দীবেন প্যাটেল, কেশুভাই প্যাটেল, বাবুভাই প্যাটেল এবং চিমানভাই প্যাটেল।

পাতিদার ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে ভূপেন্দ্র ব্রক্ষ্মাস্ত্রে কৌশলী বিজেপি!
কেন ভূপেন্দ্র প্যাটেলকেই বেছে নেওয়া হল?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 14, 2021 | 7:51 PM

আমেদাবাদ : বিজয় রূপানির ছেড়ে যাওয়া আসনে বসেছেন ভূপেন্দ্র প্যাটেল। গুজরাটের ১৭ তম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি। গুজরাট বিজেপিতে ভূপেন্দ্র প্যাটেল খুব একটা হেভিওয়েট নাম নন। প্রথমবার বিধায়ক হয়েছেন। সেই তুলনায় আরও বেশ কয়েকজন হেভিওয়েটের নামে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল দলের অন্দরে। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, পরষোত্তম রুপালা কিংবা গুজরাটের বর্তমান উপমুখ্যমন্ত্রী নীতিন প্যাটেলের মধ্যে কেউ এগিয়ে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সবাইকে অবাক করে দিয়ে উঠে আসে ভূপেন্দ্র প্যাটেলের নাম। কিন্তু কেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, ৫৯ বছর বয়সি প্যাটেলের থেকে আরও দক্ষ বেশ কয়েকজনের নাম সরিয়ে রাখা হয়েছে। অনেকেই বিষয়টিকে রাজনৈতিক সমঝোতা হিসেবে দেখছেন।

পাতিদার ভোট ব্যাঙ্ক

গুজরাটে পাতিদার গোষ্ঠীর ভোট ব্যাঙ্কের উপর একচ্ছত্র রাজ বিজেপির। বছরের পর বছর থেকে এটাই চলে আসছে। পাতিদার মানেই বিজেপির ভোটার। এটাই গুজরাটের অলিখিত সত্য। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে গুজরাটে পাতিদারদের একটি অংশ গেরুয়া শিবির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছিল। ফাটল ধরেছিল পাতিদার ভোট ব্যাঙ্কে। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে গুজরাটের পৌর ভোট ও পঞ্চায়েত ভোটে। বিজেপি জিতেছে বটে, কিন্তু চিন্তার ভাঁজ পড়েছে নেতৃত্বের কপালে। দলের রাজ্য সভাপতি সি আর পাটিলের দুর্ভেদ্য সুরাটে আম আদমি পার্টির দমকা হাওয়া বয়ে গিয়েছে। পৌরসভায় এখন মূল বিরোধী আসনে কেজরিওয়ালের দল। আর এই গোটা বিষয়টিই হয়েছে বিজেপি বিরোধী পাতিদার ভোটের উপর দাঁড়িয়ে।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেশুভাই প্যাটেল গতবছর প্রয়াত হওয়ার পর থেকেই পাতিদার ভোটব্যাঙ্কের মধ্যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। বিজেপির কোনও নীতির বিরুদ্ধে সওয়াল তোলার সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। ২০১২ সালে পাতিদারদের নিয়ে একটি ফ্রন্টও তৈরি করেছিলেন। এখন বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে তরুণ পাতিদার নেতারা দাবি তুলে আসছিলেন, তাঁদের গোষ্ঠীর মধ্যে থেকে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করা হোক।

তার উপর বিজেপির জন আশীর্ব্বাদ যাত্রায় দলের শীর্ষ নেতারা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা ওবিসিদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এতে বিজেপির সঙ্গে পাতিদারদের দূরত্ব আরও বেড়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে।

আর সেই কারণেই একজন পাতিদার নেতাকে সামনে আনা দরকার ছিল বিজেপির। যাকে সামনে রেখে আসন্ন নির্বাচনের ময়দানে নামা যাবে। ভূপেন্দ্র প্যাটেল পাতিদার গোষ্ঠী থেকে উঠে আসা গুজরাটের পঞ্চম মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে ছিলেন আনন্দীবেন প্যাটেল, কেশুভাই প্যাটেল, বাবুভাই প্যাটেল এবং চিমানভাই প্যাটেল।

বিতর্ক থেকে দশ হাত দূরে

ভূপেন্দ্র প্যাটেল গুজরাতের রাজনীতিতে সেই অর্থে ‘হেভিওয়েট’ বলা চলে না। ২০১৭ সালেই প্রথমবার বিধানসভা ভোটে দাঁড়ান। ঘাটলোধিয়া আসনে কংগ্রেস প্রার্থী শশীকান্ত পটেলকে এক লক্ষের চেয়েও বেশি ভোটে জিতেছিলেন তিনি।

বিধায়ক হওয়ার আগে দীর্ঘ সময় তিনি আহমেদাবাদ নগরোন্নয়ন দফতরের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমদাবাদ পৌরসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির দায়িত্বভারও সামলিয়েছেন তিনি। রয়েছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমাও। বিগত ২৫ বছর ধরে ভূপেন্দ্র প্যাটেলের কর্মজীবনও অবাক করে দেওয়ার মতো। আতস বাজির ছোট্ট একচিলতে দোকান থেকে এখন রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা। গুজরাটের বাণিজ্য নগরী আমেদাবাদ থেকে তিনিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। ব্যক্তিগত জীবনে নিজের লক্ষ্যে ভীষণ স্থির। আর কোনওরকম বিতর্কও নেই নামের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর জন্য বিজেপির কাছে এর থেকে ভাল সুযোগ আর কী বা থাকতে পারে।

গুজরাট বিধানসভা নির্বাচন ২০২২

ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে বিধানসভা নির্বাচন। আর এক বছরও বাকি নেই। এর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বদলের কী দরকার ছিল? রাজনৈতিক বিশ্লষকরা বলছেন, রাজ্যে সরকার বিরোধী যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল, তা প্রশমিত করার জন্য এর থেকে মোক্ষম চাল আর হতে পারত না।

আর বিজেপির লোকসভার ভোটের কথা মাথায় রাখলে, গুজরাটকে নিজেদের দখলে রাখাটা অনেকটা প্রেস্টিজ ফাইটের মতো। বিজেপি যাকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ করে ২০২৪ সালের ভোট প্রচারে নামবে, তাঁর নিজের রাজ্যেই যদি বিজেপি ক্ষমতা ধরে রাখতে না পারে, তা খুব লজ্জার বিষয় তো বটেই। আর সেই কারণেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে একাধিক নতুন মুখ জায়গা পেয়েছে গুজরাট থেকে।

বিশেষ করে মিম বা আম আদমি পার্টি একটু একটু করে জমি দখল করতে শুরু করেছে গুজরাটে। রাজনীতির সংজ্ঞা বদলাতে শুরু করেছে মোদীর রাজ্যে। বিশেষ করে সুরাট এবং আমেদাবাদ পৌর ভোটে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। একদিকে যেমন কংগ্রেস শক্তি হারাচ্ছে, অন্যদিকে সেই জায়গায় ঢুকে পড়ছেন কেজরিওয়াল এবং আসাদউদ্দিন ওয়াইসিরা। এই পরিস্তিতিতে সরকার বিরোধী ক্ষোভকে সামাল দিতে নতুন মুখ সামনে আনা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল বিজেপির।

আরও পড়ুন : পাখির চোখ বিধানসভা: ২০২২ পর্যন্ত কংগ্রেস কর্মীদের দিন-রাত পরিশ্রম করতে বললেন প্রিয়াঙ্কা