আইভারমেকটিন প্রয়োগে ‘না’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার, সস্তার ওষুধ বলেই কি আপত্তি?

৩১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল, আইভারমেকটিন করোনার বিরুদ্ধে কার্যকরী, এমন কোনও তথ্য নেই। তাই শুধুমাত্র ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেই এর ব্যবহার করে দেখা হোক।

আইভারমেকটিন প্রয়োগে 'না' বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার, সস্তার ওষুধ বলেই কি আপত্তি?
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: May 13, 2021 | 2:20 PM

কলকাতা: ভারতকে হু-র হুল! আইভারমেকটিন নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবস্থানকে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করছে ভারত। করোনা চিকিত্‍সায় বহুল ব্যবহৃত এই ওষুধ প্রয়োগ না করার জন্যই সুপারিশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু। বলা হয়েছে, এই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে শুধু ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ক্ষেত্রেই।

তবে প্রশ্ন উঠছে কেন এই সুপারিশ করা হল? তবে কি সস্তার ওষুধে করোনাকে বাজিমাত করা সম্ভব হচ্ছে বলেই হু-র কুনজরে পড়ে গেল আইভারমেকটিন? তুলনায় অনেক বেশি দামি ওষুধ রেমডেসিভিরও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার “সলিডারিটি ট্রায়াল”-এ এই অষুধের অনুরূপ কাজ করে দেখাতে পারেনি। কিন্তু তার ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইভারমেকটিনের মতো কড়া অবস্থান নিতে দেখা যায়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে।

এর আগে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছিল হু। লোপিনাভির, রিটোনাভিরের মতো ওষুধ নিয়েও একই অবস্থান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। এক সূত্রের বক্তব্য, আমেরিকার জিলিড সায়েন্স রেমডেসিভির বিক্রি করে লাভের গুড় নিজেদের ঘরে তুলছে। সেই কারণেই রেমডেসিভির নিয়ে হু এতটা বিরোধী নয়। আইভারমেকটিনের জোড়া ট্যাবলেটের দাম ৮০ টাকার আশপাশে, সেখানে রেমডেসিভির ইঞ্জেকশনের সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ৮৯৯ টাকা থেকে ৩,৪৯০ টাকার মধ্যে।

৩১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল, আইভারমেকটিন করোনার বিরুদ্ধে কার্যকরী, এমন কোনও তথ্য নেই। তাই শুধুমাত্র ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেই এর ব্যবহার করে দেখা হোক। বুধবারের বিতর্ক শুরু হয়, হু-র প্রধান বৈজ্ঞানিক সৌম্য স্বামীনাথনের একটি টুইট। ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার বিবৃতি তুলে ধরে সৌম্য লিখেছেন, “ওষুধের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা দুটিই অত্যন্ত জরুরি। সদ্য গোয়া আইভারমেকটিনকে করোনার প্রতিরোধক ওষুধ হিসেবে মান্যতা দিয়েছে। গোয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন, জাপানের ক্লিনিকাল ট্রায়ালে দেখা গিয়েছে, তাত্‍পর্যপূর্ণভাবে মৃত্যু কমাতে সক্ষম এই ওষুধ। তাড়াতাড়ি সেরে ওঠার প্রবণতাও দেখা গিয়েছে, শরীর থেকে দ্রুত কমছে ভাইরাস”। এরপরই সৌম্যর টুইট ঘিরে আলোড়ন পড়ে যায় দেশ জুড়ে। কী বলছেন শহরের চিকিত্‍সকরা?

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা রোগী সামলিয়েছেন চিকিত্‍সক শিবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “করোনা নতুন রোগ। তাই সবাই খড়কুটোর মতো ওষুধ খুঁজে বেড়াচ্ছে। আইভারমেকটিন সেই ভাবেই ব্যবহার করা হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের একটি গবেষণাতেও আইভারমেকটিন মান্যতা পেয়েছে। এখানেও আমরা যখন করোনা রোগীকে স্টেরয়েড দিচ্ছি, তখন স্ট্রনগিলয়েড স্টেরকোরালিস (Strongyloides stercoralis) নামক প্যাথোজেনের পরিমাণ শরীরে বেড়ে যায়। এই পরিমাণ বৃদ্ধি আটকে দিতে সক্ষম আইভারমেকটিন। হোম আইসোলেশনের রোগীর জন্যও কাজ করছে এই ওষুধ। তাই আইভারমেকটিনকে একেবারে ছুড়ে ফেলা যায় না।”

চিকিত্‍সক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত, বেশ কিছু ট্রায়ালে কিন্তু দেখা গিয়েছে, আইভারমেকটিন রোগ আটকাচ্ছে কিংবা রোগের দাপট কমাচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তির প্রবণতা কমাচ্ছে। কোনও কোনও ট্রায়ালে আবার দেখা গিয়েছে, বিশেষ কোনও উপকারিতা দেখা যায়নি। তবে এটা বলা যায়, এই ওষুধ প্রয়োগ করলে কোনও ক্ষতি হয় না রোগীর। সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে বমি, ডায়েরিয়া বা চুলকানির মতো সমস্যা হতে পারে। এছাড়া আইভারমেকটিন পুরোপুরি নিরাপদ।

চিকিত্‍সক জয়ন্ত দাসের বক্তব্য, “আইভারমেকটিন ১০০ শতাংশ সফল, এরকম বলা যায় না। গোটাটাই ট্রায়াল অ্যান্ড এররের ভিত্তিতে চলছে। তবে ওষুধটি সত্যিই উপকার করছে। যে কারণে সরকারি গাইডলাইনে ওষুধটির কথা সুপারিশও করা হয়েছে। একটা কথা বলাই যায়, আইভারমেকটিন ব্যবহার করলে ক্ষতির আশঙ্কা নেই।”

আরও পড়ুন: অনুমোদনহীন টিকাকেন্দ্রে নাম নথিভুক্ত না করেই চলছে টিকাকরণ, দ্রুত তদন্তের নির্দেশ

মূলত কৃমি, উকুনের ওষুধ হিসেবে আইভারমেকটিন এতদিন ব্যবহার করা হত। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে বিতর্কের পর কোভিড চিকিত্‍সায় এই ওষুধ ব্যবহারের চল বাড়ে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সং,স্থার সুপারিশ ঘিরেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে চিকিত্‍সকদের পর্যবেক্ষণ থেকে স্পষ্ট, এই ওষুধটি ব্যবহার বন্ধের সম্ভাবনা কম। শহরের এত চিকিত্‍সক বলেই দিচ্ছেন, “কোভিড-১৯ নিয়ে হু-র সুপারিশ কেউই গুরুত্ব দিয়ে শুনছে না। বরং, বিভিন্ন দেশের ট্রায়ালের তথ্যই গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি।”