Women reservation bill: ‘সংসদে পড়বে শিষ’, মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে কী বলেছিলেন ইন্ডিয়া জোটের নেতারা?

Women reservation bill: বিল পেশ হতেই, মহিলা সংরক্ষণ বিল আনার কৃতিত্ব কার, এই নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। মোদী সরকার এই বিল পেশ করলেও, কংগ্রেসের দাবি, এই বিলটি তাদেরই আনা। কিন্তু, অতীতে এই বিলটি নিয়ে কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া জোটের দলগুলির নেতারা কী বলেছিলেন জানেন?

Women reservation bill: 'সংসদে পড়বে শিষ', মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে কী বলেছিলেন ইন্ডিয়া জোটের নেতারা?
প্রতিশ্রতি রাখেননি সনিয়া, বিলের বিরোধিতা করেছিলেন শরদ যাদব, মুলায়ম সিং যাদব, লালুপ্রসাদরা Image Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 19, 2023 | 6:13 PM

নয়া দিল্লি: মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর), লোকসভায় নারীশক্তি বন্ধন অধিনিয়ম পেশ করেছে কেন্দ্র। এই বিল পেশ হতেই, মহিলা সংরক্ষণ বিল আনার কৃতিত্ব কার, এই নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। মোদী সরকার এই বিল পেশ করলেও, কংগ্রেসের দাবি, এই বিলটি তাদেরই আনা। সনিয়া গান্ধী স্পষ্ট বলেছেন, “এটা আমাদের বিল।” লোকসভায় অধীর চৌধুরী দাবি করেছেন, রাজীব গান্ধীর সময় থেকেই এই বিল আনার চেষ্টা করা হয়েছে। সত্যিই কি কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল? তাহলে কেন একের পর এক দশক কেটে গেলেও এই বিল পাশ হল না কেন? ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যূত করতে জোট বেঁধেছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। আজ তাদের অনেকেই এই বিল আনার কৃতিত্ব দাবি করছেন। কিন্তু, অতীতে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের এই দলগুলির কী অবস্থান ছিল? আসুন জেনে নেওয়া যাক –

কংগ্রেস

ইন্ডিয়া জোটের সবথেকে বড় দল কংগ্রেস বরাবরই মুখে মহিলাদের সংরক্ষণের কথা বলেছে। কিন্তু, বিষয়টিকে তারা আদৌ কোনওদিন গুরুত্ব দিয়েছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। বস্তুত, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, কংগ্রেসের গেম প্ল্যান ছিল, মুখে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশের প্রতিশ্রতি দিয়েছে, আর কার্যক্ষেত্রে জোট-শরিকদের মাধ্যমে কিংবা নিজেদের সাংসদদের মাধ্যমেই বিরোধিতার পরিবেশ তৈরি করে বিলটি পাশ হওয়া ভেস্তে দেওয়া। আরজেডি, এলজেপি এবং সমাজবাদী পার্টির মতো দলগুলি বরাবরই এর বিরোধিতা করেছে। সিকে জাফর শরিফ, শাকিল আহমেদ খানদের মতো কংগ্রেস সাংসদরাও বারবার মহিলা সংরক্ষণ বিলের বিরোধিতা করেছেন। ২০১০-এ কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী নিজেই স্বীকার করেছিলেন, কংগ্রেসের দলীয় সদস্যদের বিরোধিতাতেই বিলটি পাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যা পায়নি কংগ্রেস।

জেডি(ইউ)

নীতিশ কুমারের জেডি(ইউ) দলের নেতা শরদ যাদবও এই বিলের বিরোধিতা করেছেন। ১৯৯৭ সালে লোকসভায় তিনি বলেছিলেন, এই বিলে শুধু ‘ছোট চুলের মহিলাদের’ লাভ হবে। ‘ছোট চুলের মহিলা’ বলতে তিনি অগ্রসর শ্রেণির মহিলাদের কথা বোঝাতে চেয়েছিলেন।

সমাজবাদী পার্টি

একই ধরনের মতামত ব্যক্ত করেছিলেন সমাজবাদী পার্টির প্রয়াত নেতা মুলায়ম সিং যাদবও। তিনিও দাবি করেছিলেন, “বড় পরিবারের মহিলারাই এই বিলের সুবিধা পাবে, গ্রামের দরিদ্র মহিলারা নয়। কারণ, তাঁরা দেখতে আকর্ষণীয় নয়।” ২০১০ সালে চূড়ান্ত মহিলা-বিরোধী মন্তব্য করেছিলেন তিনি। মুলায়ম সিং যাদব বলেছিলেন, মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হলে সংসদে টিটকিরি দেওয়া এবং শিস দেওয়া শুরু হবে। মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হলে, তার মধ্যে মুসলিম মহিলাদের জন্য উপ-সংরক্ষণ চেয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৯ সালে তিনি বলেছিলেন বিলটি বর্তমান রূপে পাশ করা হলে, আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলিম, দলিত এবং অনগ্রসর শ্রেণীর প্রতি অবিচার করা হবে। ” সংখ্যালঘু, দলিত, অনগ্রসর শ্রেণিদের জনসংখ্যা অনুযায়ী তাদের মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেই, তবেই বিলটি আনা উচিত বল জানিয়েছিলেন তিনি। তবে, মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ নয়, মাত্র ১০ শতাংশ সংরক্ষণ চেয়েছিলেন তিনি।

রাষ্ট্রীয় জনতা দল

মহিলা সংরক্ষণ বিলের বিরোধিতা করে এসেছেন রাষ্ট্রীয় জনতা দল প্রধান লালুপ্রসাদ যাদবও। তিনি এই বিলকে ‘রাজনৈতিক ভুল’ বলেছিলেন। ১৯৯৮-এ মহিলাদের সংরক্ষণ, ‘সামাজিক ন্যায়বিচারের শক্তি’র প্রতি ‘গুরুতর হুমকি’ বলেছিলেন। ১৯৯৯-য়ে তিনি জানিয়েছিলেন, বিলটিকে দলিত ও সংখ্যালঘু বিরোধী। অনগ্রসর শ্রেণী এবং সংখ্যালঘু সমাজকে অগ্রাধিকার না দেওয়া হলে তারা বিলটিকে সমর্থন করবেন না বলে সাফ জানিয়েছিলেন।

শুধু মুখে নয়

কাজেই মহিলা সংরক্ষণ বিল আনার কৃতিত্ব কাদের, তা সাফ বোঝা যাচ্ছে। তবে শুধু মৌখিক বিরোধিতাই নয়, বিভিন্ন সময়ে সংসদের ভিতরে শারীরিকভাবেও বিলটির বিরোধিতা করেছে ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা। ১৯৯৮ সালে, তৎকালীন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী এম থাম্বি দুরাই বিলটি পেশ করার চেষ্টা করেছিলেন। আরজেডি সাংসদ সুরেন্দ্র প্রকাশ যাদব এবং অজিত কুমার মেহতা তাঁর হাত থেকে বিলের খসড়া ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। অধ্যক্ষের টেবিলে থাকা বিলটির যে কপিগুলি ছিল, সেগুলিও কেড়ে নিয়েছিলেন। সেই বছর রাজ্যসভায় বিলটি পেশ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। চূড়ান্ত হইহট্টগোল শুরু করেছিলেন আরজেডি সাংসদ সুভাষ যাদব, এলজেপি সাংসদ সাবির আলি, সমাজবাদী পার্টির বীরপাল সিং যাদব, নন্দকিশোর যাদব, আমির আলম খান এবং কামাল আখতাররা। যার দরে স্থগিত করে দিতে হয়েছিল রাজ্যসভার কার্যক্রম। ২০১০ সালে, ইউপিএ সরকার যখন বিলটি পেশ করতে গিয়েছিল। সমাজবাদী পার্টির সদস্য আবু আসিম আজমি, তৎকালীন আইনমন্ত্রী হংসরাজ ভরদ্বাজের হাত থেকে বিলটির খসড়া ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।