Rammohan Library: নোবেল প্রাপ্তির পর রবি ঠাকুরের প্রথম সম্বর্ধনা এখানেই, অর্থের অভাবে ধুঁকছে ঐতিহ্যবাহী রামমোহন লাইব্রেরি

Rammohan Library: বাংলার বহু মনিষীর নাম জড়িয়ে আছে শহরের এই লাইব্রেরিতে। টাকার অভাবে সে সব নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

Rammohan Library: নোবেল প্রাপ্তির পর রবি ঠাকুরের প্রথম সম্বর্ধনা এখানেই, অর্থের অভাবে ধুঁকছে ঐতিহ্যবাহী রামমোহন লাইব্রেরি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 26, 2022 | 10:47 AM

কলকাতা: বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে ধ্বংসের প্রহর গুনছে বাঙালির নব জাগরণের ইতিহাস আঁতুরঘর রামমোহন লাইব্রেরি। সদ্য় ২৫০ তম জন্মবার্ষিকী পেরিয়েছে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী এই পাঠাগার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা জগদীশ চন্দ্র বসুর স্মৃতি যেখানে জড়িয়ে আছে সেই পাঠাগার এখন ধুঁকছে অর্থের অভাবে। রবীন্দ্রনাথের পাণ্ডুলিপি বা ভগিনী নিবেদিতার লেখে চিঠির মতো দুষ্প্রাপ্য জিনিস অচিরেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পাঠাগার কর্তৃপক্ষ।

যে কোনও মুহূর্তে হারিয়ে যেতে পারে বাংলার নবজাগরণের দুষ্প্রাপ্য নথি, পুঁথি, বই, দলিল। নীল চাষ মামলার নথি, সুইডেনের সংবিধানের ছাপানো প্রথম খণ্ডের মতো অনেক নথি রয়েছে সেখানে। এখন পাঠাগারের ছাদ ভাঙা। জল পড়ছে। অর্থের অভাবে ধুঁকছে রামমোহন লাইব্রেরি। অর্থ না জোগাড় করতে পারলে বাঙালির ইতিহাসের একটা বড় অংশ মুছে যেতে পারে সকলের চোখের সামনেই। অদ্ভুত ভাবে চুপ করে রয়েছে সরকার।

রাজ্যের ক্লাবগুলি সরকারের আর্থিক অনুদান পেলেও রামমোহন লাইব্রেরি পায়নি ছিটেফোঁটাও। উল্টে সরকারি টাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছে কয়েক বছর আগেই। তবুও বাংলার ইতিহাস বুকে আগলে রেখে বাঁচার চেষ্টা করছে এই জীবন্ত ইতিহাসের ভবন।

বাইরের দিকে দেওয়ালে ফাটল। কংক্রিটের চাঙড় খসে পড়ছে। বিদ্যুতের বিল মেটানোর পয়সা নেই। এসি বন্ধ। বই সংরক্ষণের খরচ মেটানোর সামর্থ্য নেই। লাইব্রেরিয়ান, কর্মীর অভাব বেড়েছে ক্রমশ। সব মিলিয়ে ধুঁকছে বাঙালির গর্ব। ১৭৮০ সাল থেকে সংগ্রহে থাকা দুষ্প্রাপ্য বই বাঁচানোর চেষ্টা চলছে লাইব্রেরির নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে। সেখানেও অভাবের ছাপ স্পষ্ট।

রয়েছে ফ্রি রিডিং রুম। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য বই ছাড়াও চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির ব্যবস্থা রয়েছে। রাজাবাজার, খাল পাড় বস্তি, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ বস্তির বাসিন্দা হতদরিদ্র পড়ুয়ারা এখানে পড়াশোনা করেই কেউ শিক্ষক হয়েছেন, কেউ বা ভাল চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটে থাকা এই পাঠাগারে আলো কতদিন জ্বলবে সেটাই মূল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একসময় এই লাইব্রেরির সভাপতি ছিলেন জগদীশ চন্দ্র বসু। দীর্ঘদিন সহ সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ভগিনী নিবেদিতা সহ বাঙালি মনীষীরা।

নোবেল প্রাপ্তির পর দুটি গণসম্বর্ধনা নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। একটি শান্তিনিকেতন আর অন্যটি ছিল রামমোহন লাইব্রেরির প্রেক্ষাগৃহে। বাংলার নবজাগরণ থেকে শুরু করে বাঙালি সংস্কৃতির ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই লাইব্রেরি। এখানেই যখন সম্বর্ধনা নিতে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তখন তাঁর গীতাঞ্জলির কবিতা মনে পড়ছিল না। লাইব্রেরিতে থাকা গীতাঞ্জলি এনে দেওয়া হলে রবীন্দ্রনাথ পাঠ করেন, “রাত্রি যখন আঁধার হল”।

আঁধার কি ঘুচবে? সাধারণ মানুষ এগিয়ে এলে সব সম্ভব। বলছেন, বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা লাইব্রেরিকে বাঁচানোর লড়াইয়ের একনিষ্ঠ কর্মী সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার মনীষী, নথি বাঁচাতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার উদাসীন। আর্থিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসুন।” লাইব্রেরির পরিচালক মণ্ডলীর সদস্য সজল মিত্র বলেন, ‘দরিদ্র পড়ুয়াদের আলো দেখাচ্ছে এই লাইব্রেরি। এখানে বিশিষ্ট মানুষ থেকে শুরু করে তরুণ প্রজন্ম শ্রম দিচ্ছেন বিনা পারিশ্রমিকে।’

ইতিমধ্যেই লাইব্রেরি আর বাঙালির ইতিহাস বাঁচাতে আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টরা। ভবন, প্রেক্ষাগৃহ এবং গ্রন্থাগার সংস্কারে অর্থ সাহায্যের আবেদন রেখেছেন তাঁরা। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, তিলোত্তমা মজুমদারদের মতো সাহিত্যিক, অভিজিৎ রায়, প্রণবেশ চক্রবর্তীর মতো শিক্ষাবিদ, চন্দন সেন, কল্যাণ সেন বরাট, কৌশিক সেন, বাদশা মৈত্রের মতো শিল্পীরাও রয়েছেন এই বিদ্বজ্জনদের তালিকায়। রয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়, বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচাৰ্যরা।