বাড়ল সাসপেনশন! ৬ মাসের জন্য নিলম্বিত অজন্তা, শাস্তি-সিদ্ধান্তে ‘অস্বস্তিতে’ সিপিএম
CPM: নানা টানাপোড়েনের পর শনিবার, প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়। যদিও তা নিয়ে জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদার-সহ জেলা নেতৃত্ব প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
কলকাতা: সিপিএম রয়েছে সিপিএমেই! অজন্তার ভাগ্যে ছিঁড়ল না শিকে! তৃণমূলের রাজনৈতিক মুখপত্রে প্রবন্ধ লিখে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে আগেই তিনমাসের জন্য সাসপেনশনের মুখে পড়েছিলেন অনিল-কন্যা অধ্যাপিকা অজন্তা বিশ্বাস (Ajanta Biswas)। এ বার সেই ‘শাস্তির’ মেয়াদ আরও ৩মাস বাড়ানো হল। আগামী ৬মাসের দল থেকে নিলম্বিত হলেন সিপিএমের প্রয়াত প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের কন্যা অজন্তা বিশ্বাস।
নানা টানাপোড়েনের পর শনিবার, প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়। যদিও তা নিয়ে জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদার-সহ জেলা নেতৃত্ব প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সিপিএমের জেলা কমিটি সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য জানিয়েছেন, এরিয়া কমিটি যা সুপারিশ করেছিল, জেলা কমিটির বৈঠকে সেই সিদ্ধান্তে কিছু রদবদল করা হয়েছে। অভিযুক্ত অজন্তা বিশ্বাসের সাসপেনশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। জেলা কমিটির এই সিদ্ধান্ত রাজ্য কমিটিকে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তার কোনও বদল হবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও, বামকর্মীদের অনেকেই বলেছেন, জেলা কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। প্রশ্ন, উঠছে তাহলে রাজ্য কমিটিকে কেন এই ঘটনায় টেনে আনা হচ্ছে, বিশেষ করে অজন্তা যখন স্বয়ং রাজ্য কমিটির সদস্য নন? পাশাপাশি, সিপিএমের কোনও এরিয়া কমিটির সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে প্রথমে তাঁকে শো-কজ করা হয়। পরে তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় ওই এরিয়া কমিটিই। পরে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য় তা জানানো হয় জেলা কমিটিকে। ওই সদস্য যদি নিজের দোষ স্বীকার করে নেন, তবে সেক্ষেত্রে, ওই সদস্যের ‘শাস্তি’ প্রদানও লাঘব করা হয় দলের পক্ষ থেকে। সেখানে অজন্তা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এভাবে সাসপেনশনের মেয়াদ একধাক্কায় তিন মাস বাড়িয়ে দেওয়া কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
সিপিএমের এক শীর্ষ সারির নেতৃত্বের সরস উক্তি, “আমাদের পার্টিতে তো ছোটখাটো ব্যাপার নিয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা হয়।সকলেই জানেনই তো সব! কবে যে পরিবর্তন হবে!” অন্য আরেক নেতার কথায়, “আমাদের পার্টির শৃঙ্খলা রয়েছে। নির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র রয়েছে। সেই সব অনুসারে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আলোচনা করতে হয়। তাই সময় লাগে। এটা কোনও একক পার্টি নয়। সবার মত শুনতে হলে সময় লাগবেই। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যম যা খুশি ব্যাখ্যা করতে পারে।”
উল্লেখ্য, ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’ শীর্ষক বিষয়ে তৃণমূলের মুখপত্রে গত ২৮ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই তিন কিস্তিতে অজন্তার প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। শেষ কিস্তিতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশস্তিও ছিল। যা দলের সদস্য হয়ে কাম্য় নয় বলেই দাবি বাম নেতৃত্বের। প্রাথমিকভাবে, সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদার তৃণমূলের মুখপত্রে অজন্তার উত্তর সম্পাদকীয় লেখাকে ‘খারাপ কাজ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, অজন্তা তাঁর রচনায়, সিঙ্গুর আন্দোলনকে গণবিক্ষোভ বলে উল্লেখ করেন, যা মূলত দলের বিচার ও ভাবধারার পরিপন্থী। দলের সদস্য হয়ে প্রতিপক্ষ দলের মুখপত্রে বিনা অনুমতিতে লেখা যে মেনে নেওয়া হবে না তখনই স্পষ্ট করে দেয় সিপিএম রাজ্য় নেতৃত্ব। অধ্যপকদের জন্য নির্দিষ্ট এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকেও অজন্তাকে শোকজ নোটিস দেওয়া হয়।
তবে, অজন্তা যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তাতে সন্তুষ্ট হয়নি এরিয়া কমিটি। টানা কয়েকদিন নিজের অবস্থানে অনড় থাকার পর অজন্তা জানিয়েছিলেন, তিনি এই ঘটনার জন্য দুঃখিত। তাঁর এই লেখায় কেউ যদি দুঃখ পেয়ে থাকে তা হলে তার জন্য তিনি ক্ষমা চাইছেন। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে তিনি সতর্ক থাকবেন। ঘটনায়, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছিলেন, অজন্তা ইউনিটের সদস্য। যা পদক্ষেপ করার ইউনিট আগে করবে। পরে প্রয়োজনে জেলা কমিটি ও রাজ্য কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। সেক্ষেত্রে অজন্তার ‘অপরাধ’কে ‘গুরুতর অপরাধ’ বলেই চিহ্নিত করচে চাইছে সিপিএম? বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর পরাজয়ের কারণ যখন নিজেরাই মাঠে নেমে তত্ত্বতালাশ করছেন বাম নেতারা, সেখানে দলের সমালোচনা করলেই তা কেন মানতে পারছে না সিপিএম? কেনই বা বারবার প্রশ্নের বিরুদ্ধে ‘শাস্তির’ খাঁড়া ঝুলিয়ে দিচ্ছে দল? বিকল্পের নামে আদৌ কি ‘স্বৈরাচারিতাকেই’ প্রশ্রয় দিচ্ছে বাম শিবির? প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। আরও পড়ুন: রাখিবন্ধনে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে তৃণমূলের শোভাযাত্রা, নেপথ্যে অনুব্রত?