Madhyamik Examination: মাধ্যমিকের প্রশ্ন কি আদৌ ‘কঠিন’? নাকি পড়ুয়াদের অনভ্যাস? কী বলছে শিক্ষক মহল…
Madhyamik History Question Paper: পরীক্ষার প্রশ্নপত্র 'কঠিন' কি না - এই বিষয়টি কিন্তু ভীষণই আপেক্ষিক। কীসের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে প্রশ্নপত্র কঠিন? না কি টানা প্রায় দুই বছর ধরে সরাসরি ক্লাসরুমে বসে পড়াশুনো না হওয়াতেই এই বেহাল দশা পড়ুয়াদের?
কলকাতা : রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা (Madhyamik Examination 2022) চলছে। কিন্তু কেমন হচ্ছে শিক্ষাজীবনের জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা? পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কিন্তু একটি ক্ষোভ জন্মাতে দেখা যাচ্ছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের একাংশের বক্তব্য, ইতিহাসের প্রশ্নপত্র ভীষণ ‘কঠিন’ হয়েছে। অনেকেই অভিযোগ তুলছেন, এই ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছে কেবল মেধাবী পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখেই। তবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ‘কঠিন’ কি না – এই বিষয়টি কিন্তু ভীষণই আপেক্ষিক। কীসের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে প্রশ্নপত্র কঠিন? না কি টানা প্রায় দুই বছর ধরে সরাসরি ক্লাসরুমে বসে পড়াশুনো না হওয়াতেই এই বেহাল দশা পড়ুয়াদের?
কোভিডকালে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ঘরে বসেই অনলাইনে পড়াশুনা চলেছে পরীক্ষার্থীদের। অনলাইনে ক্লাস হয়েছে, তাই অনলাইনেই পরীক্ষা নিতে হবে – এমন দাবি সাম্প্রতিক অতীতে একাধিকবার দেখা গিয়েছে পড়ুয়াদের মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে তা মেনেও নেওয়া হয়েছে। এমনকী স্কুলগুলিতে পাশ না করানোয় বিক্ষোভের নজিরও রয়েছে। কোভিড কালের দোহাই দিয়ে এই বিক্ষোভ করেই পরবর্তী ক্লাসে উঠে গিয়েছে অনেক পড়ুয়াই। সেই কারণেই কি পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া পরীক্ষায় বসার আত্মবিশ্বাস?
প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজার মতে এই প্রশ্নপত্র কঠিন লাগার কারণ হল, দীর্ঘদিনের অনভ্যাস। পড়াশোনা ঠিকভাবে হয়নি পড়ুয়াদের। অনলাইন ক্লাস সেভাবে অনেকে করতে পারেননি। আর অনলাইন ক্লাস করলেও তা সেভাবে হয় না। মোটের উপর পড়াশুনার অভাব এবং লেখার অভ্যাসের অভাব। দীর্ঘদিন ধরে পড়ুয়াদের বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় নেই বললেই চলে। এমনটাই মনে করছেন তিনি। তাহলে কি সেই কারণেই সাধারণ প্রশ্নকেই বেশি কঠিন লাগছে পড়ুয়াদের? সুপ্রিয় বাবু জানান, যদি পড়াশুনা না থাকে, তাহলে সাধারণ মানের প্রশ্নও বেশি কঠিন লাগবে। তিনি আরও বলেন, “গত বছর তো কোনও পরীক্ষাই হয়নি। সেটাও একটা কারণ। পড়ুয়াদের মধ্যে পরীক্ষা দেওয়ার সেই অভ্যাসটাও ছিল না।”
বিশিষ্ট মনোবিদ সুবর্ণা সেন জানিয়েছেন, “মুশকিলটা হল, দুই বছর ধরে অনলাইনে পড়াশুনা হওয়ার ফলে এখন অফলাইন সবকিছুতেই সমস্যা হচ্ছে। দুই বছর ধরে যে পরিস্থিতি ছিল, অনলাইনে ক্লাস হয়েছে, অনলাইনে পরীক্ষা হয়েছে। এবার অনলাইনে পরীক্ষা হওয়ার ফল কী হয়েছে, তা কারও অজানা নয়। যখন অফলাইনে পরীক্ষা হবে তখন আমার কাছে অনেকে এসে বলছে, স্কুল তো খুলে গেল। পরীক্ষা তো অফলাইনে হবে। কিন্তু ক্লাস তো অনলাইনে হয়েছে। এমনকী মা-বাবাদের পর্যন্ত বলতে শুনেছি, তাঁরা পরীক্ষার সময় ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেন। কারণ, ঘরে থেকে ছেলে-মেয়ে বই খুলে পরীক্ষা দিচ্ছে, তা দেখতে খুব খারাপ লাগত। কিন্তু কী করব, নাও করতে পারতাম না। সবাই তো এভাবেই দিচ্ছে। তাহলে তো ওই সবথেকে কম নম্বর পাবে।”
আবার অন্য এক প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতিও স্বীকার করে নিয়েছেন দুই বছর ধরে পড়াশোনার থেকে দূরে থাকাটা একটি অন্যতম কারণ। তবে তিনি সেই সঙ্গে এও বলেন, “প্রশ্নকর্তাদেরও মনে রাখা উচিত যে প্রায় দুই বছর স্কুল হয়নি। প্রি-ম্যাচিওর পরিস্থিতিতে পড়ুয়ারা আছেন। প্রশ্ন করার সময় সেই বিষয়টির দিকে নজর রাখা উচিত কি না? পড়ুয়াদের যে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই এটা বলতে তো কোনও বিশেষজ্ঞ লাগবে না। প্রতিটি কোর্সের একটি টাইম শিডিউল থাকে শেখানোর জন্য। সেটা না করেই পরীক্ষার নামে যদি প্রহসন চলছে।”