Explained: ১০০ ঘণ্টার বালি ব্রিজ অপারেশন- বদলে গেল ডানকুনি লাইনের খোলনলচে, কী কী কাজ হল?

Railway: চারদিন ধরে হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। তবে ওই সময়ের মধ্যে ডানকুনি লাইনে অনেক কিছু বদলে দিয়েছে রেল।

Explained: ১০০ ঘণ্টার বালি ব্রিজ অপারেশন- বদলে গেল ডানকুনি লাইনের খোলনলচে, কী কী কাজ হল?
Image Credit source: GFX- TV9 Bangla
Follow Us:
| Updated on: Jan 31, 2025 | 3:35 PM

শিয়ালদহ ডিভিশনের ডানকুনি লাইনে ১০০ ঘণ্টা ধরে বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। বন্ধ ছিল বালি ব্রিজের একাংশও। প্রায় ৪ দিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষ তথা নিত্যযাত্রীদের। রেলের তরফে জানানো হয়েছিল রেললাইনের মধ্যে থাকা ব্রিটিশ আমলের একটি ব্রিজ মেরামত করতেই বন্ধ করা হয় রেল লাইন। ওই কয়েকদিন নিত্যযাত্রীদের সমস্যা হলেও ঠিক ১০০ ঘণ্টা পরই খুলে দেওয়া হয়েছে রেলপথ ও সেতু। আবার আগেই মতোই স্বাভাবিকভাবে চলছে ট্রেন। কিন্তু মাঝের এই কয়েক ঘণ্টায় বদলে ফেলা হয়েছে অনেক কিছুই।

১০০ ঘণ্টা ‘ব্লক’ করা হলেও, আদতে কাজ হয়েছে ৯৬ ঘণ্টা। ৯৬ ঘণ্টায় ঠিক কী কী কাজ হল-

কার্যত ডানকুনি লাইনের খোল-নলচে বদলে ফেলা হয়েছে ৯৬ ঘণ্টায়। রেল লাইনের পাথর থেকে শুরু করে সিগন্যালিং সিস্টেমের ব্যাটারি, সব বদলে একেবারে ঝাঁ চকচকে করে ফেলা হয়েছে গোটা লাইন। রেল বলছে, যাত্রীরা যাতে নিশ্চিন্তে-নিরাপদে যাতায়াত করতে পারেন, তার সব ব্যবস্থাই করে ফেলেছে রেল।

পাতা হল লাইন, মেরামতি ক্রসিং-জয়েন্টের 

রেলের ভাষায় বলা হচ্ছে ‘ডিপ ক্লিন’। রেল ট্র্যাকের প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার অংশ একেবারে ‘নতুন’ করে ফেলা হয়েছে। রেল লাইনের নীচে যে পাথর ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, যাকে বলা হয় ‘ব্যালাস্ট’ সেগুলিও পরিষ্কার করা হয়েছে, যাতে সেগুলির স্থায়িত্ব বা জোর বাড়ে।

১.৬ কিলোমিটার লাইনের ট্র্যাক বদলে ফেলা হয়েছে। তুলে দেওয়া হয়েছে পুরনো ট্র্যাক। আরও বেশি মজবুত উপাদানে তৈরি ট্র্যাক বসানো হয়েছে, যাতে দীর্ঘদিন পর্যন্ত টিকে থাকে। ১১ কিলোমিটার ট্র্যাককে নতুন করে ‘অ্যালাইন’ করা হয়েছে, যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে।

লোকাল ও এক্সপ্রেস মিলিয়ে প্রতিদিন ওই রুটের উপর দিয়ে বহু ট্রেন যাতায়াত করে। এতদিন ‘লোড’ নেওয়ার পর যন্ত্রাংশগুলিও স্বাভাবিক নিয়মেই ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে। সমস্যা বাড়লে ঘটে যেতে পারে অঘটন। তাই বদলে ফেলা হয়েছে দুর্বল জয়েন্ট ও ক্রসিং।

সিগন্যালিং সিস্টেমে নতুন ব্যাটারি

রেল যাত্রীরা সবাই জানেন সিগন্যালিং সিস্টেমের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। ওই সিস্টেমে একটু গণ্ডগোল হলেই দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। একাধিক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই সিগন্যালিং সিস্টেমের সমস্যার কথা সামনে আসে বারবার। তাই সেই সিস্টেমও একেবারে বদলে দেওয়া হয়েছে।

বসানো হয়েছে, আধুনিক পয়েন্ট মেশিন। ট্র্যাকের মাঝে ট্রেনকে সঠিক পথে চালিত করে এই মেশিন। একাধিক জায়গায় ওই মেশিন বসানো হয়েছে। ওই রুটে যে সব পুরনো সিগন্যালিং কেবল বা জংশন বক্স ছিল, তা বদলে দেওয়া হয়েছে। সিগন্যালিং যাতে কখনও আটকে না যায়, তার জন্য অত্যাধুনিক ব্যাটারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বদলে গেল ছেঁড়া তার

ট্রেনের ওপরে থাকে ওভারহেড তার, যার মাধ্যমে ট্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়। ওভারহেড সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে মাঝপথেই দাঁড়িয়ে পড়ে ট্রেন। ৯৬ ঘণ্টার কাজের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রুটের ৬ কিলোমিটার জুড়ে বসানো হয়েছে নতুন ওভারহেড তার। এছাড়া ২৭৫৬ মিটার over-aged catenary wire বদলে দেওয়া হয়েছে। ৩৩২০ মিটার ছেঁড়া তার বদলে দিয়েছে রেল।

১০০ টি লোকেশনে ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম ঠিক করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, যে সব জায়গায় গাছের জন্য সমস্যা হচ্ছিল, সেখানে গাছগুলি কেটে ছোট করে দেওয়া হয়েছে।

নতুন রঙের প্রলেপ

শুধুমাত্র লাইন বা সিগন্যালিং-এর কাজ নয়। স্টেশনের চেহারাও বদলে ফেলা হয়েছে। ফুট-ওভার-ব্রিজের ওপর লাগানো হয়েছে নতুন রঙ। জং ধরবে না, এমন রঙ লাগানো হয়েছে। লাইনে ঢালা হয়েছে নতুন পাথর।

শিয়ালদহ ডিভিশনের শিয়ালদহ-ডানকুনি সেকশনে বালিঘাট এবং বালিহল্টের মধ্যে রেল ওভারব্রিজের পুরনো স্টিলের গার্ডার প্রতিস্থাপন করা হবে বলে এই ট্রেন বাতিলের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল রেলের তরফে। এই লাইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতু এটি। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ শাসনকালে নির্মিত হয়েছিল এই ব্রিজ। জানা গিয়েছে, ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছিল ব্রিজের স্টিলের গার্ডার। তাই তা প্রতিস্থাপন করা দরকার ছিল।