একটা ঘটনাই বদলে দিল সব, হেস্টিংস থেকে ‘ঘর ওয়াপসি’ বঙ্গ বিজেপির
Bengal BJP: নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া কোনও নেতা আপাতত হেস্টিংসের ওই অফিসে বসবেন না।
অঞ্জন রায়: কয়েক সময় একটা দুর্ঘটনাই বদলে দেয় অনেক কিছু। ঠিক যেমনটা ঘটল বঙ্গ বিজেপিতে। যুব মোর্চার বৈঠকে হাতাহাতির জেরে অসুস্থ হয়ে পড়া রাজু সরকারের মৃত্যুর পর বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়ের একাংশ বন্ধ করে দেওয়া হল। নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া কোনও নেতা আপাতত হেস্টিংসের ওই অফিসে বসবেন না। শুধুমাত্র হল ঘর, আইটি বিভাগ এবং মিডিয়া সেলের উপস্থিতি সেখানে থাকবে। এ বাদে সবাই মুরলী ধর সেন লেনের পুরনো অফিসেই বসবেন।
যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি রাজু সরকারের মৃত্যুর পর থেকেই হেস্টিংসের আট তলা দফতরে বিজেপির সাংগঠনিক কাজকর্ম থমকে গিয়েছিল। এ বার পাকাপাকিভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই কার্যালয় সরিয়ে আনা হল দলের রাজ্য সদর দফতর মুরলিধর সেন লেনে। অর্থাৎ বঙ্গ বিজেপির সদর দফতরে। হেস্টিংস মোড়ের ওই বহুতলের পাঁচ তলার অডিটোরিয়াম এবং ন’তলার ঘরগুলি অবশ্য রেখে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যেখান থেকে মূল সাংগঠনিক কাজকর্ম চলত, সেই আটতলা পুরোপুরি ছেড়ে দিল বিজেপি। সহ সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী বা কোষাধ্যক্ষ সাবর ধনানিয়া– কেউই আর হেস্টিংস মোড়ের বহুতলে বসছেন না। তাঁরা আবার পাকাপাকিভাবে রাজ্য সদর দফতরেই বসা শুরু করলেন।
মূলত নির্বাচন পরিচালনার জন্যই হেস্টিংস মোড়ের আগরওয়াল হাউসের পাঁচটি তলা ভাড়া নিয়েছিল বিজেপি। মুরলিধর সেন লেনে দলের যে সদর দফতর, তা বহু পুরনো। বাড়িটিতে জায়গা কম। বাড়িটির খুব বেশি আধুনিকীকরণও সম্ভব নয়। নির্বাচনের সময় দলীয় দফতরে রোজ যে পরিমাণ ভিড় নেতৃত্বকে সামলাতে হচ্ছিল, পুরনো পার্টি অফিসে তার জন্য যথেষ্ট স্থান সঙ্কুলান হচ্ছিল না। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতা এবং সব রাজ্য নেতাদের ও বিভিন্ন জ়োনের পর্যবেক্ষকদের জন্য যে আলাদা আলাদা ঘরের দরকার ছিল, পুরনো অফিসে তাও দেওয়া যাচ্ছিল না। তাই হেস্টিংসে নির্বাচনী কার্যালয় খোলা হয়।
ভোট মিটে যাওয়ার পরেও হেস্টিংস অফিস প্রথমে বন্ধ করা হয়নি। নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য ছিল, ক্ষমতায় না এলেও দল বহরে অনেক বেড়েছে। তাই শুধুমাত্র রাজ্য সদর দফতর থেকে সব সামলানো সম্ভব নয়। নেতৃত্বের অন্য অংশের অবশ্য বক্তব্য ছিল, হেস্টিংস দফতরের আর কোনও প্রয়োজন নেই। অযথা অর্থের অপচয় না করে যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যকলাপ রাজ্য সদর দফতরে ফিরিয়ে আনা হোক।
ভোটের সময়ে একগুচ্ছ কেন্দ্রীয় নেতার জন্য অফিস দিতে হয়েছিল রাজ্য দফতরে। তাঁরা সব ফিরে যাওয়ায় মুরলীধর সেন লেনেও কিছু ঘর খালি হয়ে গিয়েছিল। বাড়িটির কিছুটা আধুনিকীকরণের ফলে বেশ কয়েকটা নতুন ঘরও বেরিয়েছিল। সেই মতো বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীদের জন্য নতুন ঘরের ব্যবস্থা হয় মুরলীধর সেন লেনে। সাধারণ সম্পাদকদের জন্য এবং সহ সভাপতিদের জন্যও ঘর নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। দিলীপ পাকাপাকিভাবে রাজ্য সদর দফতরেই ফিরে এসেছিলেন। সাধারণ সম্পাদকরাও সেখানেই বসতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু সহ সভাপতি তথা অফিস সংযোজক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় হেস্টিংস দফতরের আটতলা থেকেই কাজ চালাচ্ছিলেন। অমিতাভ চক্রবর্তী এবং সবর ধনানিয়া দুই দফতরেই যাতায়াত করছিলেন। ফলে ৯ তলায় আইটি সেল ও মিডিয়া সেলের অফিস, শুভেন্দু অধিকারী-সহ কয়েকজন নেতার ঘর এবং পাঁচ তলার অডিটোরিয়াম বাদে বাকি সব অফিস বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আটকেই ছিল।
রাজু সরকারের মৃত্যুর পরে পরিস্থিতি বদলে গেল। আট তলার অফিস পুরোপুরি বন্ধ করে দিল বিজেপি। সাংগঠনিক কার্যকলাপের একটাই কেন্দ্র থাকবে, কোনও সমান্তরাল দফতর থাকবে না, সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য বিজেপি।
হেস্টিংস কার্যালয়ে সোমবার সন্ধ্যায় যুব মোর্চার বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। বৈঠক থেকে বেরিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যুব মোর্চার রাজ্য সহ সভাপতি রাজু সরকার। তাঁকে দ্রুত পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে বেড মেলেনি। ফলে বিজেপি কর্মীরা রাজুকে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পথেই রাজুর মৃত্যু হয়। ঘটনার তদন্ত করতে মঙ্গলবারই পুলিশ গিয়েছিল বিজেপির হেস্টিংস কার্যালয়ে। বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। সে দিন থেকেই বিজেপির কোনও নেতা আর হেস্টিংস কার্যালয়ে বসছেন না। আটতলার কার্যালয় যে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, তাও বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও পড়ুন: একটা ঘটনাই বদলে দিল সব, হেস্টিংস থেকে ‘ঘর ওয়াপসি’ বঙ্গ বিজেপির