Bengal School Enrolments: ‘মৃত্যু’ হতে চলেছে ৩ হাজার স্কুলের! সত্যিই কি শিক্ষার ‘অন্তর্জলি যাত্রার’ শুরু?

Bengal School Enrolments: দেখা যাচ্ছে বোর্ডের পরীক্ষায় গত বছরগুলির থেকে কমছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, যা স্কুলছুটের ইঙ্গিত দিচ্ছে! শিক্ষাবিদদের একাংশ বলছেন, সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলগুলির এই দশায় ক্ষয় ধরছে গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থায়।

Bengal School Enrolments: 'মৃত্যু' হতে চলেছে ৩ হাজার স্কুলের! সত্যিই কি শিক্ষার 'অন্তর্জলি যাত্রার' শুরু?
বন্ধ হতে চলেছে বাংলার ৩ হাজারেরও বেশি স্কুলImage Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 12, 2025 | 6:15 PM

কলকাতা:  প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী শ্রীঘরে। তাঁর সঙ্গীসাথীরা অর্থাৎ অধিকাংশ শিক্ষা দফতরের প্রাক্তন কর্তারাও জেলে। নিয়োগে দুর্নীতির ধাক্কায় শিক্ষক তো বটেই, গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি কর্মীদেরও চাকরি গিয়েছে অজস্র। আর তার সম্যক প্রভাব পড়ছে বাংলার শিক্ষাব্যবস্থায়। দেখা যাচ্ছে বোর্ডের পরীক্ষায় গত বছরগুলির থেকে কমছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, যা স্কুলছুটের ইঙ্গিত দিচ্ছে! শিক্ষাবিদদের একাংশ বলছেন, সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলগুলির এই দশায় ক্ষয় ধরছে গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থায়। আর রাজ্যের শিক্ষার এই হতশ্রী চেহারার মধ্যে কপালের ভাঁজ বাড়িয়েছে কেন্দ্রের অতি সাম্প্রতিক রিপোর্ট। রাজ্যের স্কুলগুলোর এমনই অবস্থা যে, রাজ্যের তিন হাজারেরও বেশি স্কুলে ছাত্রভর্তিই হচ্ছে না। গত শিক্ষাবর্ষে কোনও এনরোলমেন্টই হয়নি। রিপোর্টে আরও বলছে, বাংলায় প্রত্যেক স্কুলে গড় ছাত্র সংখ্যা ১৯২। প্রত্যেক স্কুলে গড় শিক্ষকের সংখ্যা ৬ জন। কোন পথে হাঁটছে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা?

ছাত্রহীন বাংলার ৩ হাজার স্কুল

ব্যতিক্রমী চিত্র বাংলার ৩২৫৪ টা স্কুলে। এই স্কুলগুলোতে গত শিক্ষাবর্ষে এক জন ছাত্রও ভর্তি হয়নি। ওই স্কুলগুলোতে বর্তমানে একজনও ছাত্র নেই। যা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অথচ অবাক করার ব্যাপার, ওই স্কুলগুলোতেই চাকরি করছেন ১৪,৬২৭ জন শিক্ষক।

উল্টোচিত্র! শিক্ষক-শূন্য ক্লাসরুম

অথচ তারই একটি উল্টো চিত্র। বাংলাতেই ৬ হাজার ৩৬৬টা এমন স্কুল, যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০র বেশি। আর তাতে শিক্ষক রয়েছেন স্কুল পিছু ১ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অসম বণ্টন বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় প্রশ্ন তৈরি করছে।

‘একীভূত’-উদ্যোগ

এই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই রাজ্য সরকার নতুন পদক্ষেপ করা হচ্ছে। যে স্কুলে কম ছাত্র, সেগুলিকে তার পার্শ্ববর্তী স্কুল, যেখানে বেশি ছাত্র রয়েছে, সেগুলিকে  জুড়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ দুই স্কুলের ছাত্রকে একই ছাদের তলায় নিসে আসা হবে।  একটা স্কুল করে দেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপে রাজ্যে বেশ কয়েক হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন. “আমরা ছাত্র শিক্ষক অনুপাত তৈরি করছি, সেই কাজ প্রায় শেষের পর্যায়ে। আমার দ্রুত শিক্ষক বদলি করে স্কুলগুলোকে বাঁচাব।”

উল্লেখ্য, রাজ্যে মোট সরকারি স্কুল রয়েছে ৯৩ হাজার ৯৪৫টা।  সব থেকে বেশি স্কুল রয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি, ৭৯ শতাংশ। প্রাইমারি স্কুল ৯ শতাংশ,  মাধ্যমিক স্তরের স্কুল রয়েছে ১১ শতাংশ।

কিন্তু প্রকাশ্যে এসেছে কেন্দ্রের আরও রিপোর্ট। যেখানে দেখা যাচ্ছে, নবম দশম শ্রেণিতে এক লাফে ড্রপ আউটের সংখ্যা বেড়ে ১২ শতাংশের বেশি। বাংলার থেকে কম ড্রপ আউট উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানেও।  রাজ্যে ৬ হাজারেরও বেশি স্কুল চলছে, মাত্র এক জন শিক্ষকের ভরসায়। বন্ধ হওয়ার মুখে ১৭ হাজারেরও বেশি স্কুল। এমনই ভয়াবহ রিপোর্ট কেন্দ্রের।

কিন্তু নবম-দশম শ্রেণিতেই স্কুলছুটের প্রবণতা? 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অষ্টম শ্রেণির পর্যন্ত পাশ-ফেল নেই। একজন পড়ুয়া যখনই শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে ঢোকে, ক্লাস এইট পর্যন্ত উত্তীর্ণ হয়ে চলে যাবে। নবম শ্রেণি থেকে উঠে যাচ্ছে মিড ডে মিল। পড়াশোনার জন্য বাড়ি থেকেও একটা মোটামুটি অঙ্কের খরচ হয়।

করোনার পর সরকারি স্কুলগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিল স্কুলছুটের সংখ্যা। যার প্রভাব পড়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সংখ্যাতেও। স্কুলছুট কমাতে শিক্ষা দফতরের ভূমিকা নিয়ে এই সময় প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষক সংগঠনগুলির একাংশ। প্রাথমিক ভাবে স্কুল মনে করছে, সপ্তম শ্রেণিতে স্কুলছুটের হার ২-৩ শতাংশ। নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত সেই সংখ্যা আরও বেড়ে যাচ্ছে। তা আর কোনওভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

উদ্বেগজনক রিপোর্টে কী বলছেন শিক্ষাবিদরা? 

প্রধান শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি চন্দন মাইতি বলেন, “আমরা দেখেছি, এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে ২৫ লক্ষ ড্রপ আউট রয়েছে। মধ্য প্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে স্কুল বন্ধ হচ্ছে। আমাদের রাজ্য ব্যতিক্রমী ছিল, কিন্তু এবার তাতেও ঢুকে গিয়েছে। কেন্দ্র দেখছে ১২ শতাংশ ড্রপ আউট, কিন্তু আমরা দেখছি, তার থেকেও বেশি ড্রপ আউট হয়। মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড নেওয়ার পরও পরীক্ষা দেয় না। যে জন্য তাদের উৎসাহিত করা হয়, সেই টাকাটা সঠিক লোককে দেওয়া হচ্ছে কিনা, সরকার-শিক্ষা দফতরের উচিত রিভিউ নেওয়া। শিক্ষক সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করা। কোনও আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”

শিক্ষা সংসদের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে সেশনের শুরুতে ৩-৪ মাস যত সংখ্যক পড়ুয়া স্কুলে আসছে, ১০ হাজার টাকা অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করলে সেই সংখ্যা অনেকটাই কমে যাচ্ছে। সেই কারণেই দেখা যাচ্ছে উচ্চ মাধ্য়মিক পরীক্ষায় নাম নথিভুক্তই করছে না ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পড়ুয়া।  স্কুলছুট বৃদ্ধি পাচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও। একাদশ শ্রেণিতে ট্যাবের ১০ হাজার টাকা হাতে পাওয়ার পরও স্কুল ছাড়ছে অনেকে।

শিক্ষক নিয়োগেও সমস্যা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবম দশম শ্রেণিতে মিড ডে মিল দেওয়া হয় না, এটা ঠিক। কিন্তু ট্যাবের টাকা দেওয়া হয়, সবুজ সাথীর সাইকেল দেওয়া হয়। শিক্ষক নিয়োগ না হলে সমস্যা বাড়ছে স্কুলগুলোতে। যেখানে প্রতি বছর শিক্ষক নিয়োগ হত, সেটাই ফিরিয়ে আনতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্কুলে যদি শিক্ষকই না থাকে, তাহলে পড়ুয়ারা কেন যাবে? নিয়োগ দুর্নীতিতে বহু শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী চাকরি হারানোয় সঙ্কট ঘনীভূতই হয়েছে। বহু স্কুলে শিক্ষকদের এখন দরজা খোলা থেকে ঘণ্টা বাজানো— সবই করতে হচ্ছে।

শিক্ষাবিদ দেবাশিস সরকার বলেন, “কোনও রিপোর্টেরই প্রয়োজন পড়ে না। গত এক দশক ধরে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের এনরোলমেন্ট ফিগারটা দেখে আর বাংলার ডেমোক্রেটিক পপুলেশনের ফিগারটা দেখলেই বোঝা যাবে। মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকে এনরোলমেন্টের সংখ্যাটা কমছে।” অর্থাৎ নিয়োগ না হলে শিক্ষায় সঙ্কট থাকবেই! অনেকে কটাক্ষ করেই বলছেন, স্কুলের মূল সমস্যা না মিটিয়ে নীল-সাদা ইউনিফর্ম তৈরিই জরুরি মনে করলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার!