পর পর দু’দিন বিধায়কদের দলত্যাগ! বিজেপির শমীকের চ্যালেঞ্জ, ‘যে কোনও মূল্যে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর হবে’
BJP: পাল্টা তৃণমূলের মুখপাত্র তোপ দাগেন, ভোটের আগে যোগদান মেলা করার সময় বিজেপির এগুলি মনে ছিল না?
কলকাতা: পর পর দু’দিন দল ছাড়লেন বিজেপির দুই বিধায়ক। শুধু দলত্যাগই নয়, রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে শাসকদলের পতাকাও হাতে তুলে নেন তাঁরা। সোমবারই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ, মঙ্গলবার ‘ঘর ওয়াপসি’ হয় বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের। যদিও এই দু’জনই বিজেপির টিকিটে জেতা বিধায়ক হলেও তাঁরা তৃণমূল থেকেই পদ্ম শিবিরে যান। এর আগে মুকুল রায়ও বিজেপির টিকিটে জিতে বিধায়ক হয়ে পরে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। ভোটের আগে ঠিক যে ভাবে ‘দল বদলের রাজনীতি’ শুরু হয়েছিল, ভোটের ফল প্রকাশের চার মাসের মধ্যেই ফের সেই একই ছবি বঙ্গ রাজনীতিতে। এ নিয়ে আপাতত রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে। মঙ্গলবার বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য রীতিমতো হুঁশিয়ারি দেন, এ রাজ্যে দলত্য়াগ বিরোধী আইন কার্যকর তাঁরা করেই ছাড়বেন। পাল্টা তৃণমূলের কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ভোটের আগে যোগদান মেলার কথা এত সহজে বিজেপি কী করে ভুলে গেল!
মঙ্গলবার বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য তীব্র কটাক্ষের সুরে বলেন, “বিজেপি তৃণমূলের অত্যচারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। অনেকেই সেই লড়াইয়ে শামিলও হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু তেমনটা হয়নি। সেই কারণেই এখন ওরা দল বদল করছে। তবে ভুললে চলবে না বিজেপি একটা সর্বভারতীয় দল। আমাদের একটা নির্দিষ্ট মার্গ দর্শন রয়েছে। আমরা নির্দিষ্ট নীতি নিয়ম মেনে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে দলের জন্য কাজ করি। তাই কারা বিজেপির প্রকৃত কর্মী, কারা যাচ্ছে সবই মানুষ বিচার করবেন।”
শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, “এদের ছাড়াই বিজেপি এতগুলি আসন পেয়েছে। কেউ চলে গেলে কিছু করার নেই। এরা শাসনের অলিন্দে থাকতে চায়। লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিত আলদা। যারা দল থেকে চলে যাচ্ছেন যে কোনও মূল্যে তাদের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন আমরা কার্যকর করে দেখাব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে কাউন্সিলর নির্বাচনও জিতবে না এরা। এরা হয় বিজেপি, নয় মমতায় ভর দিয়ে জেতে। একা কেউই জেতে না। উন্নয়ন করতে শাসক দল থাকতেই হয় বলছে ওরা। তার মানে বিরোধীদের কোনও জায়গা নেই।”
এ প্রসঙ্গে পাল্টা তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “এখন অনেকেই অনেক কথা বলবেন। সে সব গুরুত্ব দিয়ে লাভ নেই। তৃণমূল থেকে ভয় দেখিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে যখন বিধায়ক ভাঙাতেন তখন কেন এই কথাগুলো মাথায় আসেনি। এখন মনে পড়ছে? যোগদান মেলা মনে পড়ছে না?”
অন্যদিকে সোমবারই তন্ময় ঘোষ বিজেপি ছাড়ার পর বিষ্ণুপুরে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, পদ্মফুলের প্রতীকে মানুষ যাঁকে জেতাল, দল বদলে ফেলেছেন। কিন্তু দল বদলানোর হলে আগে বিজেপির টিকিটে পাওয়া বিধায়ক তকমাটা ছেড়ে দেওয়া উচিৎ ছিল। সেটা যখন তন্ময় ঘোষ করেননি, তখন আইন মেনে যা করার বিজেপি সেটাই করবে। শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, বিধানসভা ভোটের আগে হঠাৎ করে তন্ময় ঘোষ বিজেপিতে যোগ দেন। অনেক যোগ্য প্রার্থীর মধ্যে থেকেও তাঁকে দল বিষ্ণুপুরের মুখ করেছিল। পদ্মফুল প্রতীকে দাঁড়িয়ে ভোটেও জেতেন। তাই দল ছাড়ার সময় ওনার বিধায়ক পদটাও ছেড়ে দেওয়া উচিৎ ছিল।
এদিনই শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, এই দলত্য়াগী বিধায়কদের বিরুদ্ধে সংসদীয় পথে হাঁটতে চলেছেন তাঁরা। এর আগে মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে যে ভাবে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিযোগ জানিয়ে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করার দাবিতে বিজেপি সরব হয়েছিল, এবারও তেমনটাই হবে বলে জানান তিনি। তবে মঙ্গলবারের পর থেকে যে শুধু তন্ময় ঘোষই নন, বিশ্বজিৎ দাসকে নিয়েও একই চিন্তাভাবনা করবে দল তা এক প্রকার স্পষ্ট। আরও পড়ুন: বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরলেন বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, ৬ মাসের জল্পনা মিটিয়ে বললেন ‘ঘরের ছেলে, ঘরে ফিরে এসেছি’