আরও একটি উইকেট পড়ল বিজেপির, তৃণমূলে যোগ দিলেন কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক
দক্ষিণ দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায় শনিবার তৃণমূলের ভবনে গিয়ে দলীয় মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে যোগ দেন তৃণমূলে।
কলকাতা: মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগেই দিলীপ ঘোষকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। দেখানোর চেষ্টা হয়েছিল, বিজেপি সঙ্ঘবদ্ধ রয়েছে। ফাটলের কোনও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু সেই বৈঠকের দু’দিনের মাথায় আবারও একটি উইকেট পড়ল বিজেপির। পদ্মশিবির ছেড়ে ঘাসফুলে যোগ দিলেন কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক। উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায় শনিবার তৃণমূলের ভবনে গিয়ে দলীয় মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে যোগ দেন তৃণমূলে।
প্রায় দু’মাস আগে সৌমেন জেলা বিজেপির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর প্রথম এবং একমাত্র এই খবর করেছিল TV9 বাংলা, যে তিনি বিজেপি ত্যাগ করতে পারেন। খবর সম্প্রচারের পরই জেলাজুড়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়। পরে অবশ্য সৌমেন বিজেপিতেই আছেন বলে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। কিন্তু মাঝেমধ্যেই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে গুঞ্জন চলছিল বিজেপির অন্দরে। শেষ পর্যন্ত শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে সৌমেনের তৃণমূলে যোগ টিভিনাইন বাংলার খবরেই সিলমোহর দিল, এটা বলাই যায়।
সূত্রের খবর, যেদিন বাগদার বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস তৃণমূলে যোগ দেন, সে দিনই সৌমেন রায়েরও তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটু অপেক্ষা করেই তৃণমূলে যোগ দিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে, সৌমেন রায়ও আগে তৃণমূলেই ছিলেন। কিন্তু বাকি দলবদলুদের মতো ভোটের আগে তিনিও তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূলে শামিল হয়ে সৌমেন বলেন, “আমি ছাত্রজীবন থেকেই তৃণমূলে আছি। ঘটনাচক্রে আমি বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করি। কিন্তু আমার মন-প্রাণ তৃণমূল কংগ্রেসেই পড়ে ছিল।”
আজকের দলবদলের পরে বাংলার বিধানসভায় বিজেপির আরও শক্তিক্ষয় হল বলা চলে। কারণ বিধানসভা ভোটে ৭৭ আসনে জয়লাভের পর নিশীথ প্রামাণিক ও জগন্নাথ সরকার বিধায়ক পদ ত্যাগ করেন। এরপর প্রথমে মুকুল রায় ও পরবর্তী সময় তন্ময় ঘোষ ও বিশ্বজিৎ দাসও দলত্যাগ করেন। এ বার চলে এলেন সৌমেন রায়ও। ফলে বিজেপি যে আরও দুর্বল হল, তা বলাই যায়। ফলে বর্তমানে রাজ্য বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭৭ থেকে কমে হল ৭১।
প্রসঙ্গত, এর আগে সোম ও মঙ্গলবার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন দুই বিধায়ক। সোমবার প্রথমে তন্ময় ঘোষ, ও এরপর বিশ্বজিৎ দাস যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। এবার তালিকায় আরেকজন বিধায়কের নাম জুড়ল। ভোটের ৪ মাস কাটার মধ্যেই ৪ বিধায়ক হারাতে হল গেরুয়া শিবিরকে। এই ভাঙন যে দীর্ঘায়িত হতে পারে, সেই ইঙ্গিত শনিবার নিজেই দিয়েছেন পার্থবাবু। তাঁর কথায়, “আরও অনেকে রয়েছেন যারা ভুল বুঝে অন্য দলে চলে গিয়েছিলেন। তাঁরা এখন ধীরে ধীরে ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসছেন। আরও অনেকে আসবেন।” সৌমেনের সংযোজন, “দেখুন না এবার কী হয়।”
সৌমেন রায়ের দল পরিবর্তন নিয়ে অবশ্য বিজেপির কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে বিজেপি সূত্র বলছে, এই দলবদল নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্ব মাথা ঘামাচ্ছেন না। তাঁরা ধরেই নিচ্ছেন, যে সকল নেতারা তৃণমূল থেকে এসে বিধায়ক হয়েছেন, তাঁরা দলে ফিরে যাবেন। খানিকটা এমন ভেবে নিয়েই এবার সামনের দিকে এগোনোর পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির।
মুকুল দল ছাড়ার পরই বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বকে দাবি করতে শোনা গিয়েছিল, যারা যারা দল ছাড়ার তারা এখনই ছেড়ে চলে যাক। যদিও এক ধাক্কায় কেউই দল ছাড়েননি। বরং দেখা যাচ্ছে পদ্মকে ধাপে ধাপে ভাঙার পরিকল্পনা নিয়ে ঘাসফুল। যে কারণে একই সপ্তাহে বিজেপির তিন বিধায়ক দল ছাড়লেও তাঁদের অনুষ্ঠান পর্ব আলাদা আলাদা দিনে করল বিজেপি। আরও পড়ুন: ‘হঠাৎ ভবানীপুরেই কেন ভোট? কমিশন অবশ্যই প্রভাবিত হয়েছে’