নজিরবিহীন! ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন আরও এক বিচারপতি

Calcutta High Court: যেভাবে ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তাতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ভূমিকায় সরাসরি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য।

নজিরবিহীন! ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন আরও এক বিচারপতি
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 19, 2021 | 11:38 PM

কলকাতা: ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের ভূমিকায় ‘ক্ষুব্ধ’ কলকাতা হাইকোর্টের আরও এক বিচারপতি। বিচারপতি অরিন্দম সিনহার পর এ বার ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। যে মামলা শুনানির সময় বারংবার লিঙ্ক বিছিন্ন হওয়ায় বিরক্ত হয়ে দায়িত্বে থাকা অফিসারকে তিনি শো-কজ করেছিলেন, সেই মামলাই তাঁর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ডিভিশন বেঞ্চে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যেভাবে ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তাতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ভূমিকায় সরাসরি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য।

একইসঙ্গে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। যেভাবে তাঁর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও মামলা অন্য ঘরে সরানো হয়েছে, তা নজিরবিহীন আখ্যা দিয়েছেন হতবাক বিচারপতি। প্রসঙ্গত, নারদার বর্তমান মামলার সময় একইভাবে বিচারপতি অরিন্দম সিনহা প্রতিবাদ করেন বিন্দলের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি একটি মামলায় ভার্চুয়াল শুনানির সময় ইন্টারনেট সংযোগে ব্যাঘাত ঘটায় সেন্ট্রাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটরকে ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। আজই সেই শো-কজের জবাব দেওয়ার ছিল। কিন্তু সোমবার তিনি জানতে পারেন যে, মামলাটি তাঁর এজলাস থেকে সরিয়ে অন্য একটি ডিভিশন বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও ওই জাতীয় মামলাগুলি এখনও তাঁর বিচার্য বিষয়ের এক্তিয়ারভুক্ত। তারপর এই ক্ষোভপ্রকাশ করেন বিচারপতি।

একটি মামলার নির্দেশনামার পর্যবেক্ষণে ছত্রে ছত্রে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। বিচারপতি ভট্টাচার্য উল্লেখ করেন, “প্রধান বিচারপতি বিচার্য বিষয়ের কর্তা হতে পারেন। কিন্তু তিনি যা দেখছেন বা পর্যবেক্ষণ করছেন, তারও কর্তা তিনিই হবেন, এই দুটো বিষয় সমার্থক নয়।” এমনকী, জনসমক্ষে এই ধরনের অশান্তি করে সুবিধাবাদীদের দুর্নীতি করতে সাহায্য করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিচারপতি ভট্টাচার্যের আরও বক্তব্য, এই জাতীয় মামলাগুলি কলকাতা হাইকোর্টের নিয়ম অনুসারে সিঙ্গেল বেঞ্চে শুনানি হয়। কিন্তু কেন তা হঠাৎ করে ডিভিশন বেঞ্চে পাঠানো হল তা স্পষ্ট নয়। একবারও ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বা রেজিস্ট্রার জেনারেল তাঁকে কিছু জানাননি। তাঁর সন্দেহ হচ্ছে, আদালতে স্বচ্ছতা কি আদৌ বজায় আছে? তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি হাইকোর্টের বেশকিছু শূন্যপদে কর্মী নিয়োগের কথা ছিল। কিন্তু অজানা কারণে তা বন্ধ। সবশেষে কৌশলগত অবস্থান বজায় রেখে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, “সমস্ত মোমবাতি নৈশভোজের টেবিলে জ্বলে না, কিছু মোমবাতি প্রতিবাদে ও জ্বলে।”

হাইকোর্টের অন্দরেই ভারপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে অন্য় বিচারপতির ক্ষোভ উগরে দেওয়ার এই ঘটনাকে এককথায় নজিরবিহীন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। পাশাপাশি এই ঘটনা ফিরিয়ে আনছে ২০১৮ সালের স্মৃতি। যখন সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বিরুদ্ধে প্রথা না মেনে কাজ করার অভিযোগ তুলেছিলেন বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ, বিচারপতি জাস্তি চেলমেশ্বর, বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও বিচারপতি মদন বি লোকুর। কলকাতা হাইকোর্টের এই ছবিটার সঙ্গে যেন তিন বছর আগের পরিস্থিতির মিল পাচ্ছে আইনজীবী মহল। আরও পড়ুন: মামলাকারীর গালিগালাজ শুনছেন আইনজীবীরা, দুই হাইভোল্টেজ মামলায় নাজেহাল দশা হাইকোর্টের