AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Firhad Hakim: ‘বাকি আর ৫ শতাংশ’, পুজোর আগে তিলোত্তমার রাস্তার ‘শ্রী’ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী মেয়র

Firhad Hakim: সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার এক মেয়র পারিষদের ছেলের বন্দর এলাকায় খারাপ রাস্তার কারণে দুর্ঘটনায় কবলে পড়ে মৃত্যু হয়। সেই ঘটনা থেকে এখনও কলকাতা পুরসভা শিক্ষা নিতে পারেনি বলেই ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের।

Firhad Hakim: 'বাকি আর ৫ শতাংশ', পুজোর আগে তিলোত্তমার রাস্তার 'শ্রী' নিয়ে আত্মবিশ্বাসী মেয়র
| Edited By: | Updated on: Sep 20, 2022 | 7:30 PM
Share

সায়ন্ত ভট্টাচার্য

কলকাতা: বাকি আর মাত্র পাঁচ শতাংশ। সেই সংস্কারের কাজ শেষ হয়ে গেলেই কলকাতায় ১০০ শতাংশ রাস্তা মেরামতি সম্পূর্ণ হবে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম এবং মধ্য কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলির রাস্তার হাল হকিকত দেখে এমনই দাবি করলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পরিদর্শনের মাঝপথে কলকাতা পুরসভার জোকা এলাকার ১৬ নম্বর বরো অফিসে বসে তিনি জানালেন, কলকাতায় ৫৪৪৪ কিমি রাস্তা রয়েছে। যার মধ্যে বেশিরভাগ অংশই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রাস্তাগুলির হাল হকিকত দেখার জন্য তিনি পরিদর্শন করতে বেরিয়েছিলেন। রাস্তাগুলির হাল আগের তুলনায় অনেকটাই পরিবর্তন ঘটেছে। সব রাস্তার সংস্কার হয়েছে। ৯৫ শতাংশ রাস্তা সংস্কার করা সম্ভব হয়েছে। বাকি রয়েছে আর মাত্র ৫ শতাংশ রাস্তা। চেষ্টা করা হচ্ছে মহালয়ার কিছু পরে এবং পুজোর আগেই সেগুলি সম্পূর্ণ সংস্কার করে ফেলার। 

পুজোর আগে হাল ফিরবে বাইপাসের?

যদিও কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস নিয়ে তেমন কোনও আশাবাদী বক্তব্য দিতে পারেননি মেয়র। বাইপাসের বিস্তীর্ণ অংশ খানাখন্দে ভরা। যার কারণ হিসাবে তিনি মেট্রো রেলকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর কথায়, মেট্রো রেলের কাজ শেষ না হলে বাইপাসের অবস্থা ফিরবে না। রাস্তা যতই মেরামত করা হোক না কেন, জমা জল নিষ্কাশিত হতে পারছে না। যে কারণে জল দাঁড়িয়ে গিয়ে বাইপাসকে বেহাল করে তুলছে। যদিও প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, মেট্রো রেল, কলকাতা পুরসভা এবং সেচ দফতর, এই তিনজনের দড়ি টানাটানিতে বাইপাসের অবস্থা এবারও বেহাল হয়ে থাকল। প্রতিবছর দুর্গাপুজোর আগে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের অবস্থা ফেরানো হবে বলে আশ্বস্ত করে থাকেন কলকাতা পুরসভার সড়ক বিভাগের কর্তারা। কিন্তু এবার ঘটল তার ব্যতিক্রম। সরাসরি মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়ে দিলেন, ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের অবস্থা কোনওভাবেই ফেরানো যাবে না। যদিও ওই রাস্তার বিষয়ে তাঁর সঙ্গে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কথা হয়েছে বলেও তিনি জানান। কিন্তু কোনও আশ্বাসবাণী ইএম বাইপাস নিয়ে দিতে পারেননি ফিরহাদ হাকিম।

পুজোয় বৃষ্টি হলে রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা 

প্রশাসনিক মহলের কর্তাদের মতে, কলকাতার রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বৃষ্টি হলেই সেই নিম্নমানের উপাদান উঠে গিয়ে রাস্তাগুলির কঙ্কালসার চেহারা বেরিয়ে পড়ে। সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে দু-তিন মাসের বেশি নিয়ে নেয়। এদিকে দুর্গা পুজোয় বৃষ্টি হবে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহাওয়াবিদরা। সেই জায়গায় বৃষ্টি হলে কলকাতার রাস্তার বেহাল দৃশ্য আবারও প্রকট হয়ে উঠবে। তাই এক্ষেত্রে রাস্তা তৈরি বা প্রলেপ দিতে যে ধরনের উপাদান ও উপকরণ ব্যবহার করা হয় সেগুলি ভাল মানের হওয়া উচিত বলেই প্রশাসনিক মহলের কর্তাদের মত। এদিন কলকাতার মেয়র পুরভবন থেকে বেরিয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, শ্যামবাজার, মানিকতলা, কাঁকুড়গাছি, বেলেঘাটা মেন রোড, রাজাবাজার, পার্ক সার্কাস, গোলপার্ক, যাদবপুর থানা সংলগ্ন রাস্তা, লেক গার্ডেন্স, টালিগঞ্জ ফাঁড়ি, তারাতলা মোড়, জেমস লং সরণী, জোকা মেট্রো স্টেশন হয়ে খিদিরপুরে গিয়ে পরিদর্শন শেষ করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের ডিসি, কলকাতার একাধিক কাউন্সিলর এবং বরো চেয়ারম্যান। 

কেন মেরামতির কাজ করা যাচ্ছে না? 

সূত্রের খবর সড়ক বিভাগের কর্তারা মেয়রকে জানিয়েছেন, দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশ, হরিদেবপুর, কবরডাঙা, যাদবপুর, মুকুন্দপুরের বেশ কিছু অংশের রাস্তা এখনও বেহাল হয়ে রয়েছে। যার মধ্যে কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলার জন্য রাস্তা মেরামত করা এখনই সম্ভব হবে না বলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্তাদের দাবি। এদিন মেয়র নিজের সাংবাদিক বৈঠকে বিষয়টি মেনেও নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্প বা কে ই আই আই পি’ র কাজ যতদিন না শেষ হবে ততদিন এই চিত্রের পরিবর্তন ঘটবে না। তবে কলকাতার উত্তর দক্ষিণ এবং পূর্ব কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে যে জল জমার কারণে রাস্তার কঙ্কালসার চেহারা ফুটে ওঠে, সেই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সড়ক বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশের তরফে বেশকিছু বেহাল রাস্তার তালিকায় তুলে দেওয়া হয়েছিল মেয়র ফিরহাদ হাকিমের হাতে। পরিদর্শন কালে সেই রাস্তাগুলিকেও দেখে নেন মেয়র। পরে তিনি বলেন, “তালিকাভুক্ত রাস্তাগুলির মধ্যে বেশিরভাগই হাল ফিরে এসেছে। যেগুলি বাকি সেগুলি নিয়ে বৈঠক হয়েছে।”

তবে পুরসভার সড়ক বিভাগ সূত্রে খবর, যে রাস্তাগুলির হাল এখনও ফেরেনি, সেগুলি শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বলে পরিচিত। দুর্গাপুজোর আগে এই রাস্তাগুলির হাল ফেরানোর ব্যবস্থা না করলে সমালোচনার মুখে পড়তে পারে কলকাতা পুর প্রশাসন। মেয়র বলেন, “কলকাতার সংযুক্ত এলাকার বেহাল রাস্তাগুলি এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি।” কতদিনে সম্ভব হবে তা নিয়ে সড়ক বিভাগের ডিজির সঙ্গে তিনি কথা বলে নেন। তবে পুরসভার সড়ক বিভাগের অন্দরমহল সূত্রে খবর, ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে যে রায় রয়েছে, তা কার্যকর করতে গিয়ে রীতিমত ল্যাজেগোবরে হতে হয়েছে পুরসভাকে। যে কারণে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিকে তিন মাসে অন্তত ৭-৮ বার মেরামতের কাজ করতে হচ্ছে। সেই জায়গায় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে জোড়া তাপ্পির মাধ্যমে রাস্তা মেরামত করতে হচ্ছে। বৃষ্টি হলে সেই জোড়া তাপ্পি উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি করছে।

রাস্তা পরিদর্শনে ফিরহাদ

সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার এক মেয়র পারিষদের ছেলের বন্দর এলাকায় খারাপ রাস্তার কারণে দুর্ঘটনায় কবলে পড়ে মৃত্যু হয়। সেই ঘটনা থেকে এখনও কলকাতা পুরসভা শিক্ষা নিতে পারেনি বলেই ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের। যদিও মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র সচিবের ঘরে তাঁর সঙ্গে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। যেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী নভেম্বর থেকে বন্দর এলাকার অধীনস্থ রাস্তাগুলির মেরামতির কাজ শুরু হবে। এমনকি কলকাতার যে রাস্তাগুলি বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থাগুলির অধীনস্থ, সে রাস্তাগুলির মেরামতি করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। 

বেদখল নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ

তবে এদিনের মেয়রের গলায় আক্ষেপের সুর শোনা গেল শহরের ফুটপাতগুলির বেদখল নিয়ে। এমনকি কোথাও কোথাও ফুটপাত না পেলে যে কোনও দোকানের সামনে জবরদখল করে বসে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। এগুলি নিয়ে পুজোর পর ডি সি ট্র্যাফিক এবং কলকাতা পুলিশের শীর্ষক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন মেয়র।  রাস্তাগুলি নিয়ে স্থায়ী সমাধান চাইছেন মেয়র। যেটা আজ পরিদর্শনকালে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। তিনি স্পষ্ট বলেন, জবরদখল করা চলবে না। রাস্তার ফুটপাতগুলিকে মানুষ চলাচলের জন্য জায়গা দিতে হবে। এই জবরদখল নিয়ে আগামী কলকাতা পুরসভা কড়া পদক্ষেপ করবে বলেও তিনি জানান। তবে পুজোর মুখে মেয়র সব থেকে বেশি চিন্তিত ফুটপাতগুলিতে কালো প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে ব্যবসা করা মানুষজনকে নিয়ে। এদিন মেয়র বলেন, “আমি চিন্তিত এই প্লাস্টিকের ছাউনি নিয়ে। যদি গড়িয়াহাটের মতো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে যায় তাহলে তার দায় কে নেবে। এই প্লাস্টিকের ছাউনি সরাতেই হবে।” দুর্গাপুজোর পর এই প্লাস্টিকের ছাউনিগুলো নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন মেয়র।

এ প্রসঙ্গে তিনি হকারদের কাঠগড়ায় তুলে বলেন, “যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। নতুন নতুন স্টল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নানান অজুহাতে সেই স্টলগুলি ব্যবহার না করে ফের ফুটপাতের উপরে যাবতীয় মালপত্র রেখে ব্যবসা করেন দোকানদাররা। এভাবে ফুটপাতের উপর প্লাস্টিকের ছাউনি রাখা যাবে না।”  এদিন অবশ্য মেয়রের কাছে প্রশ্ন করা হয়, শহরের মূল রাস্তাগুলি নিয়ে ক্লিনচিট থাকলেও অলিগলির ভিতরে যে রাস্তাগুলি বেহাল হয়ে রয়েছে সেগুলির কি হবে? মেয়র বলেন, “এই বিষয়টি দেখছে কলকাতা পুরসভার সিভিল বিভাগ। তারা এ ব্যাপারে টেন্ডার ডেকে যাবতীয় বেহাল থাকা রাস্তাগুলি দ্রুত মেরামত করে দেবে। চেষ্টা করা হচ্ছে দুর্গাপুজোর আগেই বাকি থাকা কাজগুলি শেষ করা হবে। যাতে মানুষ কাজের জন্য বেরিয়ে ভোগান্তির শিকার না হন।”