CPIM: কেন আইএসএফের সঙ্গে জোট, কোথায় সিপিএমের খামতি ছিল; ‘উপলব্ধি’র প্রকাশ সূর্যকান্তের

সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অংশের জন্য, তাঁদের নিয়ে সামাজিক বৈষম্য দূর করার লড়াই সিপিএম কতটা লড়তে পেরেছে, সংগঠনে ও সংগ্রামে সব অংশের যথাযথ অংশীদারিত্ব সুনিশ্চিত করতে পারছে কি না, সেই আত্মসমীক্ষা দলকে করার পরামর্শ দিয়েছেন এই বাম নেতা।

CPIM: কেন আইএসএফের সঙ্গে জোট, কোথায় সিপিএমের খামতি ছিল; 'উপলব্ধি'র প্রকাশ সূর্যকান্তের
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 19, 2021 | 5:48 PM

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ: ভোটের মুখে আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফের সঙ্গে হঠাৎ কেন জোট করতে গেল সিপিএম? একুশের ভোটে কেনই বা মুখ থুবড়ে পড়ল জোটের রাজনীতি। ২ মে’র পর থেকে এরকমই একাধিক প্রশ্নে জর্জরিত রাজ্য সিপিএম। দলের রাজ্য কমিটির বৈঠক থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক, সর্বত্রই এ নিয়েই চলেছে ময়না তদন্ত। এবার এই সমস্ত প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তবে কোনও বৈঠক বা আলোচনা সভায় নয়। ‘পরিবর্তন উপলব্ধি করেই অগ্রগতি সম্ভব’ শীর্ষক একটি লেখায়।

সিপিএমের রাজ্য কমিটির তরফে প্রকাশিত মার্কসবাদী পথ (৪১ বর্ষ, ১ম সংখ্যা, আগস্ট ২০২১) পুস্তিকায় সূর্যকান্ত মিশ্রের একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক লিখেছেন, বিধানসভা উপনির্বাচন, পুরসভা ও শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি জোরদার করতে হবে। নির্বাচনী বোঝাপড়া ও প্রার্থী নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব করতে হবে। সর্বস্তরে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও সক্রিয় কর্মীদের দায়িত্ব দিয়ে সামনে নিয়ে আসতে হবে।

সূর্যকান্ত মিশ্রের পর্যবেক্ষণ, শুধু কেন্দ্রীয় কর্মসূচি নয়, প্রতিটি বুথ স্তরে স্থায়ী বুথ সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলতেই হবে। যার লক্ষ্য নির্বাচন নয়, অসংখ্য স্থানীয় দাবি আদায়ের সংগ্রামে জয়লাভের জন্য ঝাঁপানো। সূর্যকান্ত মিশ্রের লেখায় উঠে এসেছে আত্মোপলব্ধি, “দিদিকে বলোতে ফোন করে মানুষ আদৌ মুখ্যমন্ত্রীকে পাননি কিংবা সব ক্ষেত্রে সুরাহা হয়নি। দুয়ারে সরকারের সুবিধাও হয়তো অনেক মানুষ পাননি। কিন্তু আমরা কি দলমত নির্বিশেষে মানুষ যাতে এই সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পায় তার জন্য স্থানীয় স্তরে কোনও উদ্যোগ নিয়েছিলাম? আমরা যদি ইতিবাচক হস্তক্ষেপ করতাম, তাহলে মানুষ প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে বুঝতে পারতেন, শাসক দল কোথায় প্রাপ্য থেকে মানুষকে বঞ্চিত করছে, সেটা স্পষ্ট হতে পারত। এবারের বিধানসভা নির্বাচনের পর্যালোচনায় আমরা দেখেছি, কিছু বুথ এলাকায় যেখানে আমরা এই ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ করতে পেরেছিলাম, আমাদের প্রতি সমর্থন বেড়েছে।’

সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অংশের জন্য, তাঁদের নিয়ে সামাজিক বৈষম্য দূর করার লড়াই সিপিএম কতটা লড়তে পেরেছে, সংগঠনে ও সংগ্রামে সব অংশের যথাযথ অংশীদারিত্ব সুনিশ্চিত করতে পারছে কি না, সেই আত্মসমীক্ষা দলকে করার পরামর্শ দিয়েছেন এই বাম নেতা। এর সঙ্গেই সূর্যকান্তের সংযোজন, ‘এ কারণেই পলিটব্যুরোতে আলোচনাক্রমে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে সদ্য গড়ে ওঠা আইএসএফকে নির্বাচনী সংগ্রামে সামিল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বেশ কিছু এলাকায় তার ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া গিয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে আইএসএফের বোঝাপড়া না হওয়ার ফলে আসন বণ্টন ইত্যাদি প্রশ্নে জটিলতা নিরসনে যথেষ্ট সময় থাকলে নিঃসন্দেহে সমস্যা হত না। নির্বাচনোত্তর যৌথ গণসংগ্রামগুলিতে বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী সকল শক্তিগুলিকে যুক্ত করার এই প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে।’

দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রবীণ এই সিপিএম নেতার পরামর্শ, ‘পশ্চিমবঙ্গে সপ্তদশ বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে সিপিআইএম কর্মী ও বামপন্থীদের অনেকের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। হতাশা সমস্যার সমাধানের পথ দেখায় না, পথ খোলার ইচ্ছাটাই কেড়ে নেয়। কেন নির্বাচনে বামপন্থীদের পরাজয় ঘটেছে, তা নিয়ে নানা জনের নানা মত রয়েছে। নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় সম্পর্কে বোঝাপড়াকে সুদৃঢ় করতে এই আলোচনা বির্তকের নিশ্চয় প্রয়োজন আছে। কিন্তু নিস্ফলা বির্তক তো অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। আমাদের চিন্তার ঐক্য, ইচ্ছার ঐক্য ও কাজের ঐক্যে পৌঁছতে হবে।’ আরও পড়ুন: সর্বসম্মত রায় ‘সিবিআই তদন্ত’! তবে রাজ্যকে সম্পূর্ণ দোষী মানতে নারাজ, ভিন্ন পর্যবেক্ষণ দুই বিচারপতির