‘বিজেমূল’ তত্ত্ব ভুল ছিল, সূর্য-বিমানরা স্বীকার করলেও ‘বিধি বাম’ সেলিম

'বিজেমূল' তত্ত্ব নিয়ে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র-মহম্মদ সেলিমের দ্বন্দ্বও চলে এল প্রকাশ্যে।

'বিজেমূল' তত্ত্ব ভুল ছিল, সূর্য-বিমানরা স্বীকার করলেও 'বিধি বাম' সেলিম
অলংকরণ-অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 06, 2021 | 12:37 AM

কলকাতা: রাজধানীতে গিয়ে বাংলার সিপিএম প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখ করেছিলেন, ‘ওদের ঠিক করতে হবে বড় শত্রু কে।’ লক্ষ্মীবারে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে বসে বাম নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিলেন, ‘বড় শত্রু’ বিজেপিই। বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ও বিজেপিকে একাসনে বসানো যে তাঁদের ভুল ছিল, সেটাও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় স্বীকার করে নিয়ে সূর্য-বিমানরা বললেন, তাঁরা এই দুই দলকে এক চোখে দেখেন না। মুজফফর আহমেদ ওরফে কাকাবাবুর জন্মদিনে সিপিএমের এই প্রধান দুই নেতা এটাও জানান, তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়েই দিল্লি থেকে বিজেপি হটানোর লড়াই লড়া হবে। তবে এ রাজ্যে আগের মতোই তাঁদের তৃণমূল বিরোধিতা চলবে। কিন্তু, বাকিদের থেকে যেন কিছুটা অন্য সুরে গাইলেন মহম্মদ সেলিম। ‘বিজেমূল’ তত্ত্ব নিয়ে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র-মহম্মদ সেলিমের দ্বন্দ্বও চলে এল প্রকাশ্যে।

বৃহস্পতিবার বামেদের অনুষ্ঠানে সবার প্রথম বক্তা ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। তিনি বক্তব্যের শুরুতেই স্বীকার করে নেন, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ‘ভয়ঙ্কর খারাপ, ধ্বংসাত্মক’ ফল হয়েছে। কাকাবাবুর উদাহরণ টেনে তাঁর মন্তব্য, “পার্টির জন্য যা দিয়েছেন, তা আমাদের শিখতে হবে।” দলে যে যুবাদের প্রয়োজন রয়েছে, সেই কথাও উল্লেখ করতে শোনা যায় বিমানবাবুকে। যে তরুণ-তরুণীরা দল করার জন্য আবেদন করছেন, তাঁদের বাছাই করে দলের অন্দরে নিয়ে আসার উপর জোর দেন বিমানবাবু।

দ্বিতীয় বক্তা সূর্যকান্ত মিশ্রও মেনে নেন, “ভুল হয়েছিল।” দলের অবস্থাও যে তথৈবচ, সেই স্বীকারোক্তিও ছিল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্যে। তিনি বলেন, “আমরা একটা সার্বিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।” সঙ্গে এটাও মনে করান, “আমাদের পথে ফুল বিছানো থাকবে না। কাকাবাবুর পথেই যেতে হবে।” তাঁর সংযোজন, “কোনও মানুষ নেই যার ভুল হয় না। মানুষ এগোতে এগোতে শেখে। বিপর্যয়ের ফল হয়েছে। নেতৃত্বে হিসাবে আমরা দায় অস্বীকার করি না। ফল নিয়ে কাল থেকে হওয়া কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিচার বিশ্লেষণ হবে। আত্মসমীক্ষা করা হচ্ছে।”

তৃণমূল ও বিজেপিকে এক ছাতার তলায় রেখে ভুল হয়েছিল, ঘুরপথে এটা স্বীকার করেও অবশ্য সূর্যবাবু এ দিন দাবি করেছেন, এই দুই দলকে তাঁরা এক চোখে দেখেন না। তাঁর কথায়, “এটা ঠিক আমরা একটা ভুল করেছি। তৃণমূল ও বিজেপিকে আমরা কখনও এক করে দেখিনি। কখনও সেটা মনে করি না। দেশের প্রেক্ষিতে সব বিরোধী দল এক হলে ভাল হবে। যদি সব বিরোধী দলকে এক হয়ে বিজেপিকে হারানো যায়, তাহলে আমরা এখানেও এক ধাপ এগোব।” তবে এই সমঝোতা যে কেবলই দিল্লির রাজনীতির স্বার্থে, সেটা সাফ করে সূর্য বলেছেন, “তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়ে দিল্লি থেকে বিজেপিকে সরাতে হবে। এ রাজ্যে তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধে যারা লড়তে চান, আসুন।”

বিমান ও সূর্যের কণ্ঠে নমনীয় সুর শোনা গেলেও বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে সংযুক্ত মোর্চার পুরোধা মহম্মদ সেলিম যেন এখনও আগের কট্টর অবস্থানেই রইলেন। ফলে জাতীয় স্তরে সম্ভাব্য জোটের মধুরণে সমাপয়েৎ আদৌ সম্ভব কি না, সেই প্রশ্নও জিইয়ে রইল। প্রত্যক্ষভাবে সূর্য-বিরোধী সুরে গেয়ে আবারও তৃণমূল এবং বিজেপি যে কার্যত এক গাছেরই ফল, সেটা বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। বলেন, “এখন অনেকে বলছেন বিজেমূল তত্ত্ব ভুল। নিজাম প্যালেস থেকে সিবিআই ইডি করে শঙ্কর প্রজাতির রাজনীতি ধরা পড়েনি। এদিক থেকে ওদিক যাচ্ছে না। বক কচ্ছপ আলাদা। কিন্তু সুকুমার রায় বকচ্ছপ শব্দটা উল্লেখ করেছেন। কংগ্রেস-নকশাল জয়েন্ট অপারেশনের সময় আমরা কংশাল শব্দটা প্রয়োগ করেছি। গরু এবং গাড়ি আলাদা হলেও দুটোর একটা জায়গায় মেশে গরুরগাড়ি হিসাবে। দুটো আলাদা উদ্দেশ্য হলেও বিষয়টা এক। ত্রিপুরায় মানিক সরকারকে সরাতে এক হয়নি? আজ আবার ২০২৩-এর আগে আলাদা হচ্ছে।” প্রসঙ্গত, নির্বাচনের আগে বারবার মহম্মদ সেলিমই ‘বিজেমূল’ শব্দটা উল্লেখ করেছিলেন।

ভুল হয়েছিল, এমন কোনও স্বীকারোক্তি থেকে তিনি দূরেই থেকেছেন। প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ মনে করেন, তৃণমূল ও বিজেপি দু’টি আলাদা দল হলেও একটা আদান-প্রদান আছেই। পরিকল্পিতভাবে কেউ কেউ এ রাজ্যের বামপন্থীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করছেন বলেও দাবি করেছেন প্রাক্তন সাংসদ। এমনকী, মমতাকে বিঁধে সেলিম বলেন, “তিনি তো আরএসএস-কে দেশপ্রেমিক বলেছেন, তাই বিজেপি এ রাজ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।” আরও পড়ুন: ‘দুয়ারে নর্দমার জল প্রকল্পের জন্য দায়ী অপদার্থ মুখ্যমন্ত্রী’, নমোকে চিঠি শুভেন্দুর