ক’দিন আর বাঁচবে! ‘বোঝা’ হয়ে ওঠা ঠাকুরদাসীর মৃত্যুই কি চাইছিল মেয়ে-বোনেরা?
Kolkata: শেষ ক'টা দিন কোথায় ছিলেন, কেউ খবর রাখেননি। উত্তরও পাওয়া যাবে না আর। এখনই শুধু দোষারোপের পালা।
কলকাতা: অবহেলায় অনেকেরই ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম। তবে জীবনের শেষ অঙ্কে ৭০ বছরের ঠাকুরদাসীর ঠিকানা হল না কোথাও। ভরা বর্ষায় রাতের পর রাত কাটল শহরের রাস্তায়। কাল রাতে রাস্তার ধার থেকে তুলে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল বৃদ্ধাকে। কিন্তু জরাজীর্ণ শরীরে আর কত সইবে? সকালেই চোখ বুজলেন তিনি। গতরাতের আগে কোথায় ছিলেন ওই বৃদ্ধা? কোন রাস্তায় ঘুরছিলেন? খাবার জুটেছিল? কেউ একটু জল দিয়েছিল? সে সব উত্তর জানার আর কোনও উপায় নেই। এখন শুধুই দোষারোপের পালা। তবে মনে মনে হয়ত চলে যাওয়াটাই চাইছিলেন তাঁর কাছের মানুষেরাও!
বুধবারের প্রবল বৃষ্টিতে আধা কলকাতা যখন জলমগ্ন, তখন রাতের অন্ধকারে কেউ দেখতে পান রাস্তার পাশে শুয়ে আছেন বৃদ্ধা। পড়ে থাকা প্লাস্টিকে শরীর ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা। খবর পেয়ে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন শান্তনু সেন। পুলিশ তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসে। সব শেষ হয়ে যাওয়ার আগে হয়ত এটুকুই যত্নই প্রাপ্য ছিল তাঁর। এটুকুর জন্যই হয়ত প্রাণটা অপেক্ষা করেছিল। কয়েক ঘণ্টা পরই সব শেষ।
বৃদ্ধাকে কলকাতায় ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর নিজের মেয়ে। কয়েকদিন পর বাড়ি থেকে বের করে দিলেন তাঁর নিজের বোন। কেন এত অবহেলা কাছের মানুষদের কাছ থেকে? ঠাকুরদাসীর মৃত্যুর পর তাঁর বোন বলেন, ‘দিদি তো আর ফিরে আসবে না। এখন যে যা বলবে, তাই শুনতে হবে। আমরা মেয়ের বাড়ি পাঠানোর জন্যই দিয়ে এসেছিলাম।’ কিন্তু স্টেশনে দিয়ে আসার পর দিদি কোথায় ছিলেন, সএই খবর রাখেননি তিনি। কোভিড পরিস্থিতিতে কোথায় ঘুরলেন ওই বৃদ্ধা, সেই খবর নেই। এ দিকে মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিকেলে ছুটে এসেছেন ঠাকুরদাসীর মে্যে পাপিয়া। কলকাতায় এসে মাসিদের ওপরেই ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। তাঁর দাবি, মাসিরা যদি চিকিৎসার ব্যবস্থা করত, তাহলে মায়ের মৃত্যু হত না।
স্থানীয়দের থেকে যা জানা যাচ্ছে, তাতে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির অবস্থা তেমন সচ্ছল নয়, জামাইয়ের রোজগারও খুব একটা ভালো নয়। তাই ক্রমশ ‘বোঝা’ হয়ে উঠেছিলেন ঠাকুরদাসী। তাই এক বছর ধরে মা’লে রাখার পর মাসিদের কাছে দিয়ে চলে যান পাপিয়া। কলকাতার এই বাড়িতে আবার ঠাকুরদাসীর শয্যাশায়ী মা। মা’লে সামলে দিদির চিকিৎসা তো দূর, তাঁর সামান্য সেবা কারর মতো পরিস্থিতিও ছিল না বোনেদের। সেই জন্যই মেয়ের বাড়ি পাঠানোর উদ্যোগ।
মনস্তত্ত্ববিদ বহ্নিশিখা ভট্টাচার্য বলেন, ‘যদি নিজে ভালো না থাকা যায়, তাহলে কখনই অন্য কতটা খারাপ আছে, তা দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে দুটি পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা নেই। তাই হয়ত এই স্বার্থপরতা।’ অর্থাৎ তাঁর কথায়, এ হল এক কঠিন বাস্তব, যেখানে মানুষ নিজের জন্য যা প্রয়োজন সেটা মেটাতে না পারলে, অন্যকে দেখার কথা ভাবে না, যে যতই নিজের মা হোক আর বোন হোক। মৃত্যু অনিবার্য জেনেই হয়ত দায় ঠেলে দিয়েছেন মে ও বোন! এমন অমানবিক ঘটনায় প্রশ্নগুলো সামনে আসবেই, বাড়বে বিতর্ক। অসহায়তা? নাকি স্বার্থপরতা? প্রশ্ন তুলে দিয়ে চলে গিয়েছেন ঠাকুদাসী। শুধু শেষ চিকিৎসাটুকু পাওয়া হল না তাঁর। আরও পড়ুন: রাজসভার কাচের দরজা ভেঙেছেন অর্পিতা, ভিডিয়ো সহ অভিযোগ জমা পড়ল তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে