উদ্বেগ বাড়িয়ে বাংলায় খাতা খুলল কোভিডের ‘ডেল্টা প্লাস’, দুই জেলায় আক্রান্ত ২
Delta Plus: ডেল্টা প্লাস নিয়ে চিকিৎসকরাও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। করোনা ভাইরাস খুব দ্রুত নিজের চরিত্র বদল করে ফেলছে।
কলকাতা: এবার বাংলাতেও ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক দেশের ডেল্টা প্লাসে আক্রান্তের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে বাংলার দু’জনের শরীরে এই ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মিলেছে। একজন হাওড়ার বাসিন্দা, অন্যজনের বাড়ি হুগলি। এতদিন বাংলায় করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, এবার উদ্বেগ বাড়িয়ে বাংলাতে হানা ডেল্টা প্লাসের। এখন প্রশ্ন উঠছে, ডেল্টা প্লাস কি আগের মতোই শক্তি নিয়ে ঢুকেছে? তেমনটা হলে তা যে যথেষ্ট উদ্বেগের তার আভাস দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের তা বুঝতে যেখানে এই সংক্রমণ হয়েছে, সেই এলাকার জিনোম সিকোয়েন্সের পরীক্ষাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
ডেল্টা প্লাস নিয়ে চিকিৎসকরাও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। করোনা ভাইরাস খুব দ্রুত নিজের চরিত্র বদল করে ফেলছে। এ কথা গবেষণার প্রথম থেকেই দাবি করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। গোটা বিশ্বকে এক লহমায় থামিয়ে দেওয়া করোনা ভাইরাসের নতুন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যে কতটা বিপদজনক হতে পারে তার প্রমাণও মেলে গবেষণায়। সম্প্রতি এক গবেষণা বলছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট B.1.617.2 অত্যন্ত বেশি সংক্রামক। দ্রুত রোগীর দেহ থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এখনও পর্যন্ত ভারত, ইংল্যান্ড এবং আমেরিকায় করোনা ভাইরাসের সবচেয়ে ডমিন্যান্ট স্ট্রেন হিসেবে ব্যখ্যা করা হয়েছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলেই ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের একে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন ওরফে ভিওসি নামকরণ করা হয়েছে। উপসর্গ দেখা দেওয়ার দু’দিনের মধ্যে টেস্ট করালেই পজিটিভ দেখা যাচ্ছে অনেকের।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী, এই ভাইরাস নিজের প্রতিলিপি বা অনুলিপি তৈরি করে, যা একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এই পরিবর্তনকেই মিউটেশন বলে। একটি ভাইরাসের এক বা একাধিক মিউটেশনকে মূল ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট বলা হয়। SARs-COV-2-এর বহুবার মিউটেশন হয়েছে। বহু স্ট্রেনে ভেঙে গিয়েছে। গবেষকদের দাবি, আজ পর্যন্ত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই সবথেকে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে।
এটি কতটা মারাত্মক তা বলতে গিয়ে মার্কিন এই স্বাস্থ্য সংস্থা তুলনা টেনেছে স্মল পক্স বা গুটি বসন্তের। ঠিক যে ভাবে স্মল পক্স ছড়ায় সে ভাবেই এই ভ্যারিয়েন্ট শরীরে ছড়িয়ে পড়ে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। ইউএস হেলথ অথরিটির অপ্রকাশিত এক রিপোর্ট নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশে বিশেষ চর্চা শুরু হয়েছে।
কেরলের করোনা পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই উদ্বেগ বাড়িয়েছে দেশবাসীর। ওনাম উৎসবের পর হু হু করে যে ভাবে কোভিড সংক্রমণ বেড়েছে তা নিঃসন্দেহে চিন্তার। চলতি মাস থেকেই বাংলাতেও উৎসবের মরসুম শুরু। গণেশ পুজো, বিশ্বকর্মা পুজোর পরই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। এর পর একে একে লক্ষ্মীপুজো, দীপাবলী, ভাইফোঁটা — তালিকা দীর্ঘ। আইসিএমআরের ডিজি ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন, এড়িয়ে চলতে হবে ভিড়।
রাজ্য এখনও অবধি লোকাল ট্রেন বন্ধ রেখেছে। রাত ১১টা পর্যন্ত স্বাভাবিক জনজীবনে ছাড় থাকলেও কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে যে সমস্ত জায়গায় জমায়েত হয়, সেখানে। ৫০ জনের বেশি অনুষ্ঠান বাড়িতে কোনও ভাবেই থাকতে পারবেন না। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। অর্থাৎ একসঙ্গে বহু মানুষের জমায়েত হতে পারে এমন সমস্ত ক্ষেত্রেই একটা নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য। তবে হাওড়া ও হুগলি জেলার সংক্রমণের চিত্রটাও গত দুই ঢেউয়ে খুব একটা স্বস্তির জায়গায় রাজ্যকে রাখেনি। ফলে এই ডেল্টা প্লাসের বঙ্গে প্রবেশ নিঃসন্দেহে চিন্তার।
বাংলায় ডেল্টা প্লাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। অনেকেই ভাবছেন টিকার দুই ডোজ় নিয়ে সুরক্ষিত। এমনটা ভাবলে ভুল হবে। সতর্ক থাকতেই হবে। আরও পড়ুন: ‘মূর্তিতে আবার কেউ দড়ি ধরে টান না মেরে দেয়’, ‘দুর্গতিনাশিনী’ মমতায় কটাক্ষ দিলীপের