এক্সক্লুসিভ: জেলখানার রাইটার হতে চেয়েছিলাম, হলাম লেখোয়াড়, তারপর বিধায়ক: মনোরঞ্জন ব্যাপারী

Manoranjan Byapari: "জেল হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়। না গেলে অক্ষরজ্ঞান হত না। তিন বেলা খাবারের চিন্তা করতে হত না। যে চিন্তা জেলের বাইরে করতে হত। সে চিন্তা দূর হয়েছিল। নিশ্চিত জীবন পেয়েছিলাম।''

এক্সক্লুসিভ: জেলখানার রাইটার হতে চেয়েছিলাম, হলাম লেখোয়াড়, তারপর বিধায়ক: মনোরঞ্জন ব্যাপারী
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 24, 2021 | 11:31 PM

কলকাতা: “জেল হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়। না গেলে অক্ষরজ্ঞান হত না। তিন বেলা খাবারের চিন্তা করতে হত না। যে চিন্তা জেলের বাইরে করতে হত। সে চিন্তা দূর হয়েছিল। নিশ্চিত জীবন পেয়েছিলাম।” কথাগুলি যিনি বলছেন তাঁর বর্তমান পরিচয় একজন তৃণমূল বিধায়ক। বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী (Manoranjan Byapari)। Tv9 বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন তাঁর জীবনের না বলা নানা কথা।

বাংলায় দলিত সাহিত্যের ধারা একই সঙ্গে সমৃদ্ধ এবং পুরনো। কিন্তু এতদিন সেই সাহিত্যকে আলাদা করে তুলে ধরার কোনও আয়োজন হয়নি। সেই ধারা বদলে যিনি অনন্য ভিমিকা নিয়েছিলেন তাঁর নাম মনোরঞ্জন ব্যাপারী। এহেন লেখোয়াড় এবং অধুনা তৃণমূল বিধায়কের অক্ষর পরিচয় ঘটেছিল জেলের ভিতরেই। কেমন সেটা?

মনোরঞ্জনের কথায়, “জেলের ভিতরে এক মাস্টারমশাই পেয়েছিলাম। যিনি যত্ন করে পড়াশোনা শিখিয়েছিলেন। এক পুলিশ অফিসারের চোখে এই চেষ্টাটা চোখে পড়েছিল। উনি চক এনে দিয়েছিলাম। হতে চেয়েছিলাম জেলখানার রাইটার। হলাম লেখোয়াড়!”

মনোরঞ্জনবাবুর কথায়, “যাঁর কাছে পড়াশোনা শিখছিলাম, উনি ওটাও বলেছিলেন। কঠিন কাজ না করে হালকা কাজ করতে পারবি। জেলের রাইটার হব ভাবতেই পারিনি। জেল থেকে বেরিয়ে রিকশা চালাতাম। বই পড়তাম। এক একটা বই আমার কাছে এক একটা পৃথিবীর দরজা খুলে যাবার মতো। এক একটা বই পড়ছি। এক একটা দিগন্ত খুলে যাচ্ছে। তারপর একটা বইতে পড়া জিজীবিষা শব্দের মানে খুঁজতে শুরু করেছিলাম। অনেককেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম। একদিন আমার রিকশায় সওয়ারি হয়ে উঠলেন উনি। মহাশ্বেতা দেবী। উনিই আমাকে নিয়ে এলেন লেখালেখির জগতে।”

জীবনের একটা অধ্যায়ে তিনি নকশাল আন্দোলন করেছেন তিনি। জেল খেটেছেন। পরবর্তীতে তিনিই হয়ে উঠেছেন সাহিত্যিক। একাধিক পুরস্কার ও সম্মানও রয়েছে। তবে অর্থের জন্য এখনও পরিশ্রম করে যেতে হয়েছে সত্তরোর্ধ্ব মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে। সেই তিনিই আজ বিধায়ক। টোটো রিকশা নিয়ে পৌঁছে যান মানুষের দুয়ারে। কেন তিনি তৃণমূল? মনোরঞ্জনের কথায়, “বাংলার মানুষ বিজেপিকে চেনে না। চিনলে একটি ভোটও পেত না। হাওয়া উঠেছিল বিজেপি আসছে। বিজেপি এলে কার কী ক্ষতি হবে জানি না, আমার তো হবেই। আবার হয়ত আমাকে ছত্তিসগঢ়ে যেতে হবে। লড়ে অন্তত হারব। তাই শেষ লড়াইটা লড়েছি।”

ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবনের লেখকের কথায়, “দুটো কারণে নিজেকে চণ্ডাল মনে হয়েছে। এক নিজে নমশূদ্র বলে। শূদ্র কথার অর্থ দাস। দাসের থেকে তো চণ্ডাল ভাল। ক্রোধ চণ্ডাল। আমি তো ক্রোধী। এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে পুষে রাখা রাখার জন্য। অনেক বার জেলে গিয়েছে, তা ক্রোধেরই বহিঃপ্রকাশ। অনেক লড়াই সমাজ বদলের এই রিকশা যাবি নাকি রে বলাও আমাকে আঘাত করত। পাল্টা বলতাম, ‘কোথায় যাবি রে।’ ঝগড়া লাগত, হাতাহাতি হত। দেখা যেত সে হয়ত কোনও নেতা বা পুলিশে ভাই। এভাবেই আমার জীবন।” বললেন ১ লক্ষ ৪ হাজার ভোট পেয়ে বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক হওয়া মনোরঞ্জন। আরও পড়ুন: সরকারি অফিসে তাণ্ডব, আধিকারিককে মারধর! গ্রেফতার মৎস্য মন্ত্রীর আত্মীয়