Anis Khan Death : ‘সিটে ভরসা নেই’, সিবিআই তদন্তের দাবিতে ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছে আনিসের পরিবার

Anis Khan Death : হাইকোর্টের রায়ের পর সালেম খান বলেন, "আমতা থানার পুলিশ রাতের অন্ধকারে এসে আমার ছেলেকে মারল। আমার বুকে বন্দুক ঠেকাল। সিটের তদন্তে ভরসা নেই।"

Anis Khan Death : 'সিটে ভরসা নেই', সিবিআই তদন্তের দাবিতে ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছে আনিসের পরিবার
কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছে আনিসের পরিবার
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 21, 2022 | 6:49 PM

কলকাতা ও আমতা: সিবিআই তদন্ত নয়। আমতার ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যুতে সিটের তদন্তেই আস্থা রেখেছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার সিঙ্গল বেঞ্চের এই রায়ে অসন্তুষ্ট আনিস খানের পরিবার। আজ হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের পর তারা জানিয়ে দিল, এই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানাবে তারা। আনিস খানের বাবা সালেম খান বলেন, “সিটের উপর আশা নেই। ভরসা নেই। শাসকদলের নিচুতলার কর্মীরা খুশিতে রয়েছেন।” রাজ্যের পুলিশের বিরুদ্ধে সিট কীভাবে তদন্ত করবে সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে হাওড়ার আমতার ছাত্রনেতা আনিস খানের বাড়িতে যায় পুলিশ। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, আনিসকে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়। তার জেরেই মৃত্যু হয়েছে আনিসের। মামলার তদন্তে রাজ্য সরকার স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম তৈরি করে। এই মামলায় পুলিশ অভিযুক্ত বলে সিবিআই তদন্তের দাবি জানায় আনিসের পরিবার। সিবিআই তদন্তের দাবিতে হাইকোর্টে আবেদন জানান আনিস খানের বাবা সালেম খান।

মঙ্গলবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে আনিস খানের মামলার রায়দান ছিল। বিচারপতি বলেন, সব কিছু বিচার করে রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে মনে হচ্ছে না এই মামলায় সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। বরং সিট যেভাবে তদন্ত করছে সেটাই সঠিক। সিটকে দ্রুত এই মামলায় চার্জশিট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি।

হাইকোর্টের রায়ের পর সালেম খান বলেন, “আমতা থানার পুলিশ রাতের অন্ধকারে এসে আমার ছেলেকে মারল। আমার বুকে বন্দুক ঠেকাল। সিট আমাকে বারবার জ্বালাতন করার পর কিছু গোপন জবানবন্দি বাড়িতে বসে দিয়েছিলাম। উলুবেড়িয়া আদালতে গোপন জবানবন্দিও দিয়েছি। কিন্তু, সিট কিছুই আদালতকে দেখায়নি। আসামিরা আমার চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।” তিনি জানিয়ে দেন, আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। আনিস খানের দাদা সাবির খানও বলেন, রাজ্যের পুলিশ আনিসকে মেরেছে। তারা কী করে তদন্ত করবে।

আনিস খানের এক প্রতিবেশী বলেন, “রাজ্যের পুলিশই আনিসকে মেরেছে। আবার পুলিশই তদন্ত করবে। তাই এই তদন্তে আস্থা রাখতে পারছি না।” আনিসের পরিজনদের অভিযোগ, সিবিআই তদন্ত চাইলে খুন করা হবে বলে তাঁদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে।

আনিস খানের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সিপিএম । হাইকোর্টের রায় নিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আনিসের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আজ শিলিগুড়িতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “এই রায়ে খুনির মুখরক্ষা হল। ন্যায় হল না আনিসের পরিবারের প্রতি। তাদের পাশে রয়েছি।” আনিসের মৃত্যুর পর তাঁদের আমতার বাড়িতে গিয়েছিলেন সেলিম। পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছিলেন। আজ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক প্রশ্ন তোলেন, যে পুলিশ খুনে অভিযুক্ত, তারা কীভাবে সঠিক তদন্ত করবে? মুখ্যমন্ত্রী কেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বাড়ি গিয়েছিলেন, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আজ দক্ষিণ দিনাজপুরে বলেন, “আনিসের পরিবার সিবিআই তদন্ত চেয়েছিল। তাই আমরা সিবিআইয়ের পক্ষে ছিলাম। তবে আদালত সিটকেই দায়িত্বভার দিয়েছে। সেই জায়গা থেকে যে পরিবার তার সন্তানকে হারিয়েছে তারা যেন সঠিক বিচার পান তার দ্বায়িত্ব বিচার ব্যবস্থার।”

হাইকোর্টের রায় নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমি আদালতের পর্যবেক্ষণ নিয়ে কিছু বলব না। তবে আমি আনিস খানের বাবার বক্তব্য দেখেছি। তিনি অত্যন্ত হতাশ। তিনি ডিভিশন বেঞ্চে যাবেন বলে স্থির করেছেন। আমি একটা কথা নির্দিষ্ট করে বলে দিতে চাই। এই ঘটনার সঙ্গে ওই এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব, আমতার তৃণমূল বিধায়ক, ওই এলাকায় তৎকালীন পুলিশ সুপার, ডেপুটি পুলিশ সুপার জড়িত। নবান্ন থেকে নির্দেশ দিয়েছিল এই ঘটনা ঘটিয়ে দেওয়ার জন্য। আমরা আনিস খানের পরিবারের সঙ্গে রয়েছি। অভিযুক্তদের শাস্তি হবেই।”

বিরোধী দলগুলিকে এই নিয়ে আক্রমণ করলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “আনিসের মৃত্যু নিয়ে নিয়ে সিটে আস্থা রেখেছে হাইকোর্ট। তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো যে এত হইহল্লা করল, তারা এখন কি বলবে? আমরা প্রথম থেকেই বলছিলাম, যে কোনও মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক।”

আনিস খানের মৃত্যুতে বিচার ও সমস্ত দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে ৩০ জুন আমতা থানার সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আমতা ২ এর বিডিও-কে তাঁরা স্মারকলিপিও দেবেন।