Covid-19: ফুসফুস-লিভারের বিপদ তো ছিলই, এবার কোভিডের কু নজরে কিডনিও
গণদর্পণের প্রতিষ্ঠাতা ব্রজ রায়ের মরদেহে প্যাথলজিক্যাল অটোপসি করার পর দেখা যায় করোনার হানায় একাধিক পরিবর্তন হয়েছিল তাঁর কিডনিতেও।
কলকাতা: কোভিড জয়ী। কিন্তু করোনাকে হারালেও সুস্থতার ঠিকানায় পৌঁছতে পারেননি বহু মানুষ। বহু মানুষের ফুসফুস শেষ করে দিয়েছে এই মারণ ভাইরাস। সর্বনাশের হাত বাড়িয়েছে কিডনিতেও। নিঃশব্দে কিডনির ক্ষতি করছে করোনা। আমেরিকান সোসাইটি অব নেফ্রোলজির এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে এরকমই তথ্য।
আমেরিকান সোসাইটি অব নেফ্রোলজির এই রিপোর্ট বলছে, ব্যথাহীন উপসর্গ। তাই কিডনির সমস্যা বুঝতেও অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে। এই সুযোগে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যাচ্ছে। আমেরিকান সোসাইটি অব নেফ্রোলজির গবেষকদের দাবি, করোনা থেকে সেরে ওঠার পর কিডনির নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কোভিডে হাসপাতালে ভর্তি না হয়েও বিপদে পড়ছে কিডনি। এমনও বলা হচ্ছে, কিডনির সেই সমস্যা এমন অবস্থায় গিয়ে ধরা পড়ছে তা সামলাতে চিকিৎসা বিজ্ঞানও অসহায়।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কোভিডের পর ডায়ালিসিসের রোগী বেড়েছে আট শতাংশ। কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রবণতাও বেড়েছে আমেরিকায়। অবশ্য শুধু আমেরিকান সোসাইটি অব নেফ্রোলজির রিপোর্টই নয়, এর আগেও কোভিডে কিডনির বিপদ সামনে এসেছিল। গত বছর নভেম্বরে একটি জার্নাল প্রকাশিত হয় ক্লিনিকাল জার্নাল অব দ্য আমেরিকান সোসাইটি অব নেফ্রোলজিতে (CJASN)। সেখানে বলা হয়, শুধু ফুসফুস বা হৃদপিণ্ড নয়, করোনা ক্ষতি করছে কিডনিতেও। ৫ হাজার ২১৬ জনের উপর সমীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা দেখেন, অন্তত ১ হাজার ৬৫৫ জন অ্যাকিউট কিডনি ইনজিউরি নিয়ে ভুগছেন। তথ্য মেলে বাংলা থেকেও।
গণদর্পণের প্রতিষ্ঠাতা ব্রজ রায়ের মরদেহে প্যাথলজিক্যাল অটোপসি করার পর দেখা যায় করোনার হানায় একাধিক পরিবর্তন হয়েছিল তাঁর কিডনিতেও। এ বিষয়ে চিকিৎসক কাজলকৃষ্ণ বণিকের প্রতিক্রিয়া, “যখন সংক্রমণটা অ্যাকটিভ কেস হিসাবে আছে, তার তুলনায় অনেক বেশি প্রভাব ফেলছে পোস্ট কোভিডে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে আমাদের হৃদপিণ্ড, কিডনি, কোনও কোনও ক্ষেত্রে যকৃৎয়েও। আমাদের নার্ভাস সিস্টেমও বাদ যাচ্ছে না। এর সপক্ষে একাধিক বৈজ্ঞানিক তথ্যও গবেষণায় উঠে এসেছে। কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর অন্তত ৬ মাস সাবধানতা অবলম্বন করে চলতেই হবে।”
কোভিডে মৃতদের অটোপসি করিয়ে এমনই অনেক প্রয়োজনীয় অথচ চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসতে পারে বলেই মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যথাযথ নজরদারি প্রয়োজন পোস্ট কোভিড ক্লিনিকেও। করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও পুরোপুরি সুস্থ কি না তাও নজরে রাখা অত্যাবশ্যক। কোভিড মুক্ত হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেও বলছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রয়োজনীয় কিছু শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষাও করিয়ে নেওয়াও সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন। কোভিড পিরিয়ড কাটলেও খুব একটা শরীরকে স্ট্রেস দেওয়া ঠিক হবে না। চিকিৎসকদের পরামর্শ, অন্তত ১৫ দিন ঘরে বিশ্রাম নিতে পারলে থেকে ভাল। পাশাপাশি কোভিড-মুক্ত হলেও মাস ছ’য়েক নজর রাখতে হবে শরীরের দিকে। কোনও রকম সমস্যা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যাবশ্যক। আরও পড়ুন: Covid Vaccine: জেনে নিন কী ভাবে চিনবেন আসল কোভিশিল্ড-কোভ্যাকসিন