এক রাতের বৃষ্টিতেই জল থইথই মহানগর! জল যন্ত্রণা কাটাতে দাওয়াই নগরায়ন বিশেষজ্ঞদের
বৃষ্টি (Rain) থামার পর অনেকটা সময় কেটে গেলেও আলিপুর, তারাতলা, বেহালা, খিদিরপুরে শনিবারও যত দূর চোখ গিয়েছে শুধুই জল। কলকাতা যেন সত্যিই ভেনিস।
বৃষ্টি থামার পর অনেকটা সময় কেটে গেলেও আলিপুর, তারাতলা, বেহালা, খিদিরপুরে শনিবারও যত দূর চোখ গিয়েছে শুধুই জল। কলকাতা যেন সত্যিই ভেনিস। বর্ষা আসে, বর্ষা যায়। কিন্তু জমা জলের নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলে না কলকাতার মানুষের। রাতভর ঝমঝমে বৃষ্টি মানেই কোথাও গোড়ালি ডোবা আবার কোথাও হাঁটু ছাপিয়ে জল। সেই জল নামতে নামতে দু’দিন পার। সে ক্ষেত্রে টানা বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই! কিন্তু কেন বছর বছর এই দুর্ভোগ শহরবাসীর?
নগরায়ন বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর সিনহার মতে, এর একটা কারণ অবশ্যই ভৌগলিক। দীপঙ্করবাবু জানান, “কলকাতার কিছু জায়গা যেমন নিচু বলা হয়। তার পাশে এমন জায়গাও রয়েছে যেটা উঁচু। এই উঁচু জায়গার জলটা যদি গালিপিট দিয়ে ঠিকমত না নামে তা হলে জলটা টপকে নিচু জায়গায় চলে আসে। কিন্তু নিচু জায়গায় চলে আসা মানে নিকাশি ব্যবস্থার উপর চাপ পড়া। তার ক্ষমতার থেকে অতিরিক্ত জল বের করতে গেলেও সমস্যা হয়ে যায়।”
আরও পড়ুন: West Bengal Weather: সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ, আজও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস! হতে পারে অতি ভারী বৃষ্টিও
তবে অবস্থানগত কারণ যেমন তাৎপর্যপূর্ণ, একই ভাবে নিকাশি ব্যবস্থা ও পরিকল্পনার ত্রুটিও আড়াল করা যায় না। বৃষ্টির জমা জল গঙ্গায় বেরোনোর জন্য কলকাতায় সাতটি লকগেট রয়েছে। জোয়ারের সময় এগুলি বন্ধ রাখতে হয়। জোয়ার-ভাটা মিলিয়ে ৪ ঘণ্টা লকগেটগুলি বন্ধ থাকে। সেই সময় যদি বৃষ্টি হয় তা হলে জল জমা অবশ্যম্ভাবী। শহরের জমা জল বের হয় ১০-১২টি খাল দিয়ে। যার ৮০ শতাংশই বেহাল। পলি পড়ে খালগুলি মজে গিয়েছে। নিয়মিত ড্রেজিং না হওয়ায় খালের জলস্তর বেশি থাকে। ফলে পাম্পিং স্টেশনের জল বের হতে পারে না। আবার কলকাতার পাঁচটি পাম্পিং স্টেশনের পাম্পগুলিও বেশ পুরনো। ফলে কর্ম ক্ষমতা কমেছে তাদেরও। অতি বৃষ্টিতে যে পরিমাণ জল জমে, তা পাম্প করে বের করাও চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়।
তাজ বেঙ্গলের উল্টোদিকে ও কেওড়াতলা শ্মশান লাগোয়া এলাকায় আরও দু’টি লকগেট রয়েছে। অথচ এগুলি এতদিন ব্যবহারই হয়নি। ফলে দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার জল এতদিন পাম্প করেই বের করা হত। এই দু’টি লকগেট কাজ শুরু করলে দক্ষিণের সমস্যা মিটতে পারে।
শহরের বেশির ভাগ রাস্তার গালিপিটের মুখ প্লাস্টিক পড়ে বন্ধ। ফলে গালিপিট দিয়ে জল বেরোতে পারে না। KEIIP-এর অধীনে যাদবপুর-বেহালায় ২০০০ কোটির নিকাশি পরিকাঠামোর কাজ চলছে। ২০২০ সালে তা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও তা সম্পূর্ণ হয়নি। ফলে বেহালা-যাদবপুর যেন একটু বেশিই জল যন্ত্রণার শিকার।
এসব সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন যথোপযুক্ত পরিকল্পনা। নগরায়ন বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর সিনহার কথায়, “যে কাজগুলি দ্রুত করা যায় তা সেরে একটু স্বস্তির পথ খোঁজা যেতে পারে। আর যে গুলি ধাপে ধাপে করতে হবে সেগুলির দিকেও ফোকাস করা দরকার। এখানে সময়টা খুব তাৎপর্যপূর্ণ। তাই রাতারাতি তো ভাল হয়ে যাবে না। তবে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ করা গেলে আগামী দিনটা ভাল হবে।”
আরও পড়ুন: Malda Murder: ‘হত্যাপুরী’তে ‘জঙ্গিযোগ’? পুলিশের তদন্তে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য
তবে শুধু সরকারি উদ্যোগই নয়, মানুষের সচেতনতাও দরকার। প্লাস্টিক-আবর্জনা ফেলে যে ভাবে যত্রতত্র ড্রেন, খাল, পুকুরগুলির সর্বনাশ করা হয়, তাতে আসলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শহরের নিকাশি ব্যবস্থা। তাই প্লাস্টিক ব্যবহারে সতর্কতা আনা দরকার। কোনও ভাবেই গালিপিটের মুখ যেন বন্ধ না হয় তা দেখার দায়িত্ব মহানগরবাসীরই। তা না করে শুধু সরকারের ঘাড়ে দায় চাপালে জলযন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলা দুষ্কর।