Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

ভানুয়াটুর নাগরিকত্ব পেতে পারেন আপনিও, বিনয় মিশ্রের কাছে তো মামুলি ব্যাপার

বিনয় (Binay Mishra) নাকি কলকাতা হাইকোর্টকে জানিয়েছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার খরচ করে ভানুয়াটুরের নাগরিকত্ব 'কিনেছেন'। সে সংক্রান্ত নথিও তিনি দাখিল করেছেন।

ভানুয়াটুর নাগরিকত্ব পেতে পারেন আপনিও, বিনয় মিশ্রের কাছে তো মামুলি ব্যাপার
অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Jun 07, 2021 | 3:49 PM

কলকাতা: প্রশান্ত মহাসাগরের কোলে প্রকৃতি তার সবটুকু উজার করে গড়েছে দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াটুকে (Vanuatu)। নীল আর সবুজের সমঝোতায় এ যেন এক টুকরো স্বর্গ। এ দ্বীপরাষ্ট্রের নাম যে খুব একটা শোনা যায় তেমনটা নয়। তবে হঠাৎই বাংলার সঙ্গে এক অদ্ভূত ভাবে জুড়ে গেল তার নাম। কয়েক হাজার কোটি টাকার কয়লা ও গরুপাচার কেলেঙ্কারির অন্যতম অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র নাকি এখন সে দ্বীপেই আত্মগোপন করেছেন। সেখানকার নাগরিকত্বও নিয়েছেন। এই নিয়ে রবিবার সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। একইসঙ্গে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে ভানুয়াটুকে নিয়েও। কেমন দেখতে, কী ভাবে পৌঁছনো যায় সেখানে, নাগরিকত্ব নেওয়াই বা কতটা সহজ উঠছে নানা প্রশ্ন।

আরও পড়ুন: চোকসি, মোদীর মতো ভিন দেশের নাগরিকত্ব বিনয় মিশ্রের! সিবিআই-র হাতে এল তথ্য

টাকা দিয়ে নাগরিকত্ব প্রদান নতুন কোনও ঘটনা নয়। বিনিয়োগের আশ্বাসে নাগরিকত্ব নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ একাধিক বার নিজেদের উদ্বেগের কথাও শুনিয়েছে। এমনটা হলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি তৈরি হয় বলেই দাবি তাদের। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক শক্তি কম হওয়ার কারণে এমন অনেকেই আছে যারা বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দিয়ে চলেছে। দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াটুও সে তালিকায় পড়ে। এই নাগরিকত্ব ‘বিক্রি’ করে প্রত্যেক অর্থবর্ষে মোটা টাকা আয় করে এখানকার সিটিজেনশিপ কমিশন।

অজানা ভানুয়াটু

ভানুয়াটু অনেকটা ইংরাজি অক্ষর ‘ওয়াই’-এর মত। ৮০ থেকে ৮৩টি দ্বীপের সমন্বয়ে তৈরি এই দ্বীপপুঞ্জের ৬৫টি বা তার কিছু বেশি দ্বীপে মানুষের বসবাস। বাকিগুলিতে প্রকৃতির লীলাখেলা চলে। ঘূর্ণিঝড়ের হুমকিতে পর্যুদস্ত এই দ্বীপরাষ্ট্র। জনবসতিও বেশ হালকা। তিনটি ভাষার চল এখানে — বিসলামা, ফার্সি এবং ইংরাজি। অর্থনৈতিক ভাবে খুব একটা উন্নত নয় এখানকার মানুষ। তবে পর্যটন ব্যবসার এখানে বেশ রমরমা। ফলে বিদেশি মুদ্রার আদান প্রদান ভালমতই চলে। এ দেশে ব্যবসা করতে চাইলে সব থেকে বড় সুবিধা হল, কোনও রকম আয়কর লাগে না। শুধু আয়করে ছাড়ই নয়, অন্যান্য নানা করে ছাড় দেয় তারা।

সব থেকে কম সময়ে নাগরিকত্ব দেয় ভানুয়াটু

অত্যন্ত কম খরচে এ দেশের নাগরিক হতে পারেন কেউ। ভারতীয় মুদ্রায় এই অঙ্কটা ৯৫ লক্ষ টাকার আশেপাশে। একইসঙ্গে নাগরিকত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি সময় এখানে থাকার সুযোগ মেলে। অথচ নাগরিকত্ব পাওয়া যায় সবথেকে কম সময়ের মধ্যে। আবেদন করার ২ মাসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায়। ১০ বছর সেই পাসপোর্টের মেয়াদ। সঙ্গে রাখা যায় আইনসম্মত সঙ্গী, ২৬ বছরের কম বয়সী সন্তান ও ৫০ বছরের বেশি বয়সী বাবা-মাকে।

১৩০টি দেশে ভিসা-ফ্রি ভ্রমণ

শুধু আয়করে ছাড়ই নয়, এ দেশের নাগরিকত্ব থাকলে ১৩০টি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে সেঙ্গেন স্টেট, গ্রেট ব্রিটেন, হংকং, সিঙ্গাপুর। ব্রিটেনে টানা ৬ মাস থাকা যায়।

দিতে হয় না ভাষার পরীক্ষা

ভানুয়াটুর নাগরিক হতে গেলে কোনওরকম ভাষার পরীক্ষা দেওয়ারও ব্যাপার নেই। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে যেমন ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট দিতে হয় কিংবা শিক্ষা, ম্যানেজমেন্ট এক্সপেরিয়েন্স দরকার হয়, এখানে সে সব ঝামেলা নেই।

সহজেই নাগরিকত্ব

বিনিয়োগের মাধ্যমে এখানকার নাগরিক হতে গেলে ‘হোম কান্ট্রি’ বা নিজের দেশের কোনও নথি দেখানোর প্রয়োজন নেই। নিজের দেশে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুন নাগরিকত্ব নিতে হয় না। কোনও রকম জমিজমা বা বাড়িঘর না থাকলেও ভানুয়াটুতে নাগরিকত্ব মেলে।

অর্থনৈতিক সুবিধা

থাকা কিংবা আয়ের জন্য কোনও রকম কর দিতে হয় না। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রেও সবরকম স্বাধীনতা পাওয়া যায়।

আবেদন পদ্ধতি

প্রথম ধাপে নমিনেশন ফর্ম, পরিচয়পত্রের জেরক্স, পাসপোর্ট, জন্মসূত্রে যে দেশের নাগরিক সেখানকার পুলিশ রেকর্ড, সিভি, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও এমপ্লয়মেন্ট হিস্ট্রি জানাতে হয়। পরবর্তী ধাপে নমিনেশন ফর্মের পুরোপুরি ডকুমেনটেশন, জন্মপঞ্জী, মেডিক্যাল শংসাপত্র, ব্যাঙ্কের তথ্য, ৮ কপি ছবি জমা দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীর সশরীরে উপস্থিতিরও প্রয়োজন নেই। তবে আবেদনের সময় আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের বেশি এবং ৬৫ বছরের কম হতে হবে।

অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, অর্থের ছলছলানি থাকলে সে দেশের নাগরিক হওয়া হাতের ধূলোর মত। আর কয়লাকাণ্ডের অন্যতম চক্রী হিসাবে সিবিআইয়ের খাতায় নাম থাকা বিনয় মিশ্রর টাকার অভাব নেই। ফলে তিনি চাইলেই এই দ্বীপরাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারেন। এখনও অবধি যা খবর তাতে ২০১৮ সাল থেকে বিনয় নাকি দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী। সেক্ষেত্রে ভানুয়াটুর বাসিন্দা তিনি আজ থেকে নন।

বিনয় নাকি কলকাতা হাইকোর্টকে জানিয়েছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার খরচ করে ভানুয়াটুরের নাগরিকত্ব ‘কিনেছেন’। সে সংক্রান্ত নথিও তিনি দাখিল করেছেন। একইসঙ্গে বলেছেন, ভারতীয় নাগরিকত্ব ছাড়ার পর দুবাইয়ে ভারতীয় দূতাবাসে তাঁর পাসপোর্টও জমা রাখা আছে। তবে প্রশ্ন একটাই, সিবিআইয়ের মত দুঁদে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে এত সহজে কী ভাবে ঘোল খাওয়ালেন এই যুবক? নাগরিকত্ব ছাড়ার বিষয়টি তারা ঘুণাক্ষরে জানতেও পারল না?