Weather Update: স্বাভাবিকের বেশি বৃষ্টির ইঙ্গিত দেশে,তবুও দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে বিমাতৃসুলভ আচরণ কেন?

Weather Update: বঞ্চিত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ! ৪ মাসের বর্ষা-শেষে এমনই বিশেষণ বসাতে হতে পারে। সৌজন্যে, মৌসুমি বায়ুর বিমাতৃসুলভ আচরণ!

Weather Update: স্বাভাবিকের বেশি বৃষ্টির ইঙ্গিত দেশে,তবুও দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে বিমাতৃসুলভ আচরণ কেন?
ছবি - বর্ষায় কেমন বৃষ্টির সম্ভাবনা বঙ্গে ?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 01, 2022 | 1:16 AM

কমলেশ চৌধুরী

কলকাতা: মঙ্গলবার একাধিক সুখবর শুনিয়েছে নয়াদিল্লির মৌসম ভবন। জুন থেকে সেপ্টেম্বর, ৪ মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ৩% বেশি বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যদি পূর্বাভাস মেলে, তাহলে একটানা চার বছর স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের বেশি বৃষ্টি হবে দেশে। ২০০৫ থেকে ২০০৮ সালের পর আবার। ২০১৯ সালে ১০% বেশি, ২০২০ সালে ৯% বেশি বৃষ্টির পর গত বছরও স্বাভাবিক বর্ষণ হয় দেশে। বাইশেও এক আভাস। চাষের জন্য এর চেয়ে ভাল খবর আর কী হতে পারে! 

উত্তরবঙ্গ নিয়েও সুখবর দিয়েছেন আবহবিদরা। এপ্রিল থেকেই প্রবল বৃষ্টি চলছে উত্তরের জেলায়। এ বার ২-৩ দিনের মধ্যে মৌসুমি বাতাসও ঢুকে পড়তে চলেছে। সময়ের চেয়ে অনেকটা আগেই। সাধারণত, জলপাইগুড়িতে বর্ষা ঢোকে ৭ জুন নাগাদ, শিলিগুড়িতে ৮ জুন।

বর্ষায় বঞ্চনা, কিন্তু কেন?

এর মধ্য়ে দুঃসংবাদ শুধু দক্ষিণবঙ্গের জন্য বরাদ্দ! মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার ৪ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টির সম্ভাবনা। বেশিরভাগ জেলাতেই আশঙ্কা ঘাটতি বর্ষার। হাতে গোনা কিছু জেলায় স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। মৌসুমি বাতাস বিমুখ হতে পারে গোড়া থেকেই। জুনেও দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ তল্লাটে বৃষ্টির ঘাটতির আশঙ্কা। 

কিন্তু দেশ বা উত্তরবঙ্গ যদি বেশি বৃষ্টি পায়, দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে বিমাতৃসুলভ আচরণ কেন?

মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘জোরালো দখিনা-পশ্চিমী বাতাস উত্তরবঙ্গে গেলেই পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে বৃষ্টি হয়। কিন্তু গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ভাল বৃষ্টির জন্য আমাদের রাজ্যের উপকূলে নিম্নচাপ বা গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন। মৌসুমি অক্ষরেখাও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর থাকা দরকার। পূর্বাভাস দেখে বলা যায়, এ বার সম্ভবত আমাদের উপকূলে নিম্নচাপ বা গভীর নিম্নচাপ কম হতে পারে।’ গত বছর পরের পর নিম্নচাপের ঠেলায় ২৬% বেশি বৃষ্টি হয়েছিল গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। এ বার তার ঠিক উল্টোটা ঘটতে পারে, আশঙ্কা এমনই। 

আরও একটি কারণ থাকতে পারে। যাকে আবহবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, নেগেটিভ ইন্ডিয়ান ওশন ডাইপোল। সঞ্জীববাবুর ব্যাখ্যা, ‘নেগেটিভ ডাইপোলের অর্থ, ভারত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে জলতলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে থাকবে। আর বেশি থাকবে পূর্বপ্রান্তে। ফলে আরব সাগর বা বঙ্গোপসাগর কিছুটা কম সক্রিয় থাকতে পারে। যদিও প্রশান্ত মহাসাগরে লা নিনা রয়েছে, যা বর্ষার পক্ষে সহায়ক।’ 

আসলে শর্ত অনেক। কোনওটা কাছের, কোনওটা দূরের। এর উপরই নির্ভর করে বর্ষার ভাগ্য। আর তার উপর নির্ভর করে চাষিদের ভাগ্য। গোটা দেশের নিরিখে কতটা বৃষ্টি হল, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বর্ষার বণ্টন ঠিক ভাবে হল কি না। শুধু জায়গা অনুযায়ী বিস্তার নয়, সময়ও গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাত্‍, নিয়মিত বর্ষণ জরুরি। দক্ষিণবঙ্গে যে ঘাটতি বর্ষার আশঙ্কা, এর মানে এই নয় যে কোনও না কোনও সময় প্রবল বৃষ্টি হবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে, একটানা অনেকদিন বৃষ্টি হচ্ছে না, হঠাত্‍ ২-৩ দিনে বেশ কয়েকদিনের বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। তার ফলে বন্যা হচ্ছে, চাষেরও ক্ষতি হচ্ছে। মোদ্দা কথা, লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। পুণের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথু কলের মন্তব্য, ‘এই ধরনের প্রবণতায় খরা এবং তার পরপরই বন্যা, যুগপত্‍ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এই সম্ভাবনা বাড়ছে।’ 

ফলে ঘাটতি-বর্ষার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে দক্ষিণবঙ্গে চাষিদের। জুলাই-অগস্ট আমন ধান রোপণের সময়। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেও যদি পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হয়, তাহলে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন চাষিরা। গত এক বছরে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় ধান থেকে আলু, সব্জি থেকে আম– সবেতেই বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এ বারও যদি বর্ষা ভোগায়, তাহলে শিরে সংক্রান্তি!