গরমে আরও সেদ্ধ হবে কলকাতা, IPCC রিপোর্টে দহন-দুশ্চিন্তা

Kolkata: আর্বান হিট আইল্যান্ডের (Urban Heat Island) গেরোয় আশপাশের এলাকার তুলনায় দ্রুত তাপমাত্রা বাড়ছে কলকাতার। বৃদ্ধির অঙ্ক শুনলে চমকে যাবেন আপনি।

গরমে আরও সেদ্ধ হবে কলকাতা, IPCC রিপোর্টে দহন-দুশ্চিন্তা
অলংকরণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 09, 2021 | 9:19 PM

কমলেশ চৌধুরী: উষ্ণায়ন নিয়ে বড় বিপদে কলকাতা (Kolkata)। তার কারণ শুধু বিশ্ব জুড়ে গ্রিন হাউস গ্যাসের (Green House Gas) বেলাগাম নিঃসরণ নয়, দায়ী অপরিকল্পিত নগরায়ণও। আর্বান হিট আইল্যান্ডের (Urban Heat Island) গেরোয় আশপাশের এলাকার তুলনায় দ্রুত তাপমাত্রা বাড়ছে কলকাতার। বৃদ্ধির অঙ্ক শুনলে চমকে যাবেন আপনি।

১৯৫০ সাল থেকে ২০১৮-র মধ্যে কলকাতার গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা নিউ ইয়র্ক, সাও পাওলো বা সিডনিতে মাত্র ০.২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মস্কোয় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তেহরানে ২.৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার রাষ্ট্রপুঞ্জের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (IPCC) ষষ্ঠ রিপোর্টে উঠে এসেছে উদ্বেগের এই তথ্যই।

আরবান হিট আইল্যান্ড। এর জন্যই উষ্ণায়নের বিপদ গ্রামের চেয়ে বেশি শহরে, মহানগরে। আইপিসিসি রিপোর্ট বলেছে, শহরাঞ্চলে বায়ু চলাচলের সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে নগরায়নের বাড়াবাড়ি। সূর্যের তাপ ঢুকছে, কিন্তু সবটা বেরিয়ে যেতে পারছে না। মানুষের কাজকর্মের জন্যও বিপুল তাপ তৈরি হচ্ছে শহরের মধ্যে। চাষের জমি নেই, গাছপালা কম, জলাশয়ের অভাব। অথচ কংক্রিটের জঙ্গল আর বিভিন্ন ইমারতি পরিকাঠামো তাপ শুষে নিচ্ছে। ফলে গায়ে গায়ে বাড়ি, বহুতলের শহুরে জ্যামিতির জন্য তাপমাত্রা বেশিই থাকছে।

অফিস-কারখানা বা বাড়ির হিটিং, কুলিং সিস্টেম থেকে বেরোনো তাপও দায়ী। যেমন, এসি ঘর ঠান্ডা রাখে। কিন্তু গরম বাতাস ছাড়ে বাইরে। ফলে সার্বিক ভাবেই তৈরি হচ্ছে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। এখানেই থেমে থাকছে না বিপদ। প্রভাব পড়ছে জল-চক্রেও। কখনও অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টি শহর ভাসিয়ে দিচ্ছে। কখনও বিপত্তি বাড়াচ্ছে ‘আর্বান ড্রাইনেস আইল্যান্ড’, যাতে দেখা যাচ্ছে, গ্রামের চেয়ে শহরে আর্দ্রতা কম, কম বাতাসের গতিও।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ভূগোলের বিভাগীয় প্রধান, সৌমেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘কলকাতায় গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ দিক দিয়ে বাতাস বয়ে যায়, শীতকালে উত্তর দিক দিয়ে। কিন্তু বায়ুপ্রবাহের অভিমুখের কথা মাথায় রেখে নগরায়ন হয়নি। থার্মাল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কোনও নীতি নেই। সচেতনতা নেই। বাতাস চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় তাপ বেরোতে পারে না। গঙ্গার হাওয়া ঠিক মতো বইতে পারলে গরম এতটা বাড়তে পারত না।’ সৌমেন্দুবাবু নিজে কলকাতায় ‘আরবান হিট আইল্যান্ড’-এর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, “আমরা দেখেছি, মধ্য কলকাতায় বড়বাজার, ডালহৌসি, দক্ষিণ কলকাতায় বালিগঞ্জ, রাসবিহারীতে শহরের অন্য অঞ্চলের তুলনায় তাপমাত্রা অনেক বেশি। সল্টলেক বা পূর্ব কলকাতায় তাপমাত্রা তুলনায় কম।”

IPCC Reported that Kolkata Will be more hotter in near future

আইপিসিসি-র পর্যবেক্ষণ, গ্রামের চেয়ে শহরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা বেশি। তাই নগরায়নকেই আংশিক ভাবে দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীরা। গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার চেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে গড় তাপমাত্রায়। এর অন্যতম কারণ, শহরাঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অর্থাত্‍, রাতের তাপমাত্রা বাড়ছে।

একই পর্যবেক্ষণ আবহবিজ্ঞানী সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক বলছেন, ‘সব জায়গাতেই রাতের তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। শহরাঞ্চলে এই বৃদ্ধির প্রবণতা বেশি হতে পারে। দূষণ একটা কারণ হতে পারে। উপকূলের থেকে বেশি দূরে নয়, আবার পাশে নদী। ফলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। ধুলোরও অভাব নেই। ফলে সকালের দিকে ধোঁয়াশায় ঢাকা থাকে শহর। সেক্ষেত্রে যে তাপ দিনে ঢোকে, রাতে তা বেরোতে পারে না। ধোঁয়াশায় বাধাপ্রাপ্ত হয়।’

অতীত, বর্তমানের কথা তুলে ধরে ভয়ের ভবিষ্যতের কথাই শুনিয়েছে আইপিসিসি। রিপোর্টে সাফ বলা হয়েছে, আগামী দিনের নগরায়নের ফলে গড়় তাপমাত্রা আরও বাড়বে। তাপপ্রবাহ বাড়বে। বাড়বে গরমের দিন, উষ্ণ রাতের সংখ্যাও। নিয়তি হয়ে দাঁড়াবে সেদ্ধ হওয়া!

শুধু গরম নয়, দূষণ বাড়ার ইঙ্গিতও দিয়েছে আইপিসিসি। বিশেষ করে ওজোনের দূষণ নিয়ে আশঙ্কা। কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাইয়ের মতো উপকূলীয় শহরের বিপদ সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্যও। আইপিসিসি বলছে, উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রতলের উচ্চতা আরও বাড়বে, বাড়বে তাপমাত্রাও। ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা, ভরা কোটালের দাপট- সবেতেই বৃদ্ধির ইঙ্গিত। যেহেতু অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টির প্রবণতাও বাড়ছে, তাই বন্যা নিত্যসঙ্গী হতে পারে। ক্ষতি বাড়িয়ে দেবে বিপুল জনবসতিও। ইয়াস থেকে নিম্নচাপের দুর্যোগ- ইতিমধ্যেই যে দুর্যোগের সাক্ষী বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকা। আরও পড়ুন: হবু ডাক্তারদের আন্দোলনে উত্তাল আরজিকর, অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে চলছে বিক্ষোভ