JU Student Death: দারিদ্রের সঙ্গে লড়াইয়ে অস্ত্র ছিল মেধা, যাদবপুরে ঢুকতেই সব শেষ? কী বলছেন নাসিম-হিমাংশু-সত্যব্রতর পরিজনেরা?
JU Student Death: যাদবপুরকাণ্ডে এখনও পর্যন্ত পুলিশের জালে ১৩। তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে নতুন নতুন তথ্য। বাড়ছে অভিযুক্তদের নামের তালিকাও।
কলকাতা: র্যাগিংয়ের শিকার। যাদবপুরে (Jadavpur University) বছর সাতেরোর ছাত্রের মৃত্যুতে তোলপার গোটা রাজ্য। বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে। রাজনীতিও হচ্ছে। তার মধ্যেই তদন্তের গতি বাড়ছে। ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় আরও ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, নাসিম আখতার, হিমাংশু কর্মকার ও সত্যব্রত রাই। এর মধ্যে ২ জন প্রাক্তন ও ১ জন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পড়ুয়া। টিভি নাইন বাংলা প্রতি ছাত্রের বাড়ি গিয়ে জানার চেষ্টা করেছে তাঁদের ব্যাকগ্রাউন্ড কি? দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে, মেধাকে হাতিয়ার করে যাদবপুরের মতো শ্রেষ্ঠ ক্যাম্পাসে পৌঁছেছেন। ব্যতিক্রম নন নাসিম আখতার, হিমাংশু কর্মকার, সত্যব্রত রাই। যাদবপুরে ব়্যাগিং রোগের কথা টিভির পর্দায় দেখেছিলেন। কিন্তু, সেই অভিযোগে যে ছেলেদের নাম উঠে আসবে সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারেরনি সত্যব্রত, হিমাংশু ও নাসিমের পরিবার।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া সত্যব্রত রাই। নদিয়ার হরিণঘাটার সন্তোষপুরে নিম্নবিত্ত পরিবারের মেধাবী ছেলে হিসাবেই এলাকায় পরিচিতি। বাবা ফল বিক্রি করেন, মা সেলাইয়ের কাজ করে কোনওরকমে দিন গুজরান করেন। কিন্তু, তাঁদের সন্তানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন দু’জনে। সত্যব্রতর মা রুমা রাই, আমরা তো মনে করছি আমার ছেলে নির্দোষ। ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত হোক ও এখানে কোনওভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। বাবা প্রদীপ রাই বলছেন, আমার ছেলে কেমন তা পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বললেন জানতে পারবেন। সত্যব্রতর কাকা সুব্রত রাই বলছেন, আজ পর্যন্ত কোনও খারাপ কাজ করেনি। এখন জানি না ওখানের পরিস্থিতি কী। যদি কোনও ঘটনা ঘটে তাহলে তো সবার আগে কর্তৃপক্ষকে দায় নিতে হবে।
শুধু নদিয়ার হরিণঘাটাই নয়। উদ্বেগের মেঘ জমেছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতেও। কারণ, যাদবপুরকাণ্ডে গ্রেফতার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র নাসিম আখতার। তাঁর পড়াশোনা কেমিস্ট্রি নিয়ে।
বারুইগ্রামেই বাস নাসিমের। এলাকায় পড়াশোনার জন্য নাসিমের পরিবারের সুখ্যাতি রয়েছে। সেই পরিবারের ছেলের ব়্যাগিংকাণ্ডে নাম জড়িয়ে যাওয়ায় স্তম্ভিত এলাকার বাসিন্দারা। ছেলের গ্রেফতারিতে ষড়যন্ত্র দেখছে নামিসের পরিবার। নাসিম আখতারের মামা মিজাজুল হক বলছেন, নাসিম কোনওভাবেই যুক্ত নয় এ ঘটনার সঙ্গে। ওকে ফাঁসানো হচ্ছে। নাসিম আখতারের বোন সাহেরি আখতার বলছেন, “অসম্ভব ভাল ছাত্র ও। ওকে ফাঁসানো হয়েছে বলেই গ্রেফতার করা হয়েছে।” শুধু পরিবারই নয়। প্রতিবেশীরাও নাসিমের গ্রেফতারিতে হতবাক। নাসিমের প্রতিবেশী বলছেন, ও তো আমাদের গর্ব। ও ভাল ছেলে। ওর মতো ছেলে আমাদের গ্রামে আর একটাও নেই। ওদের খুব পরিবার খুবই শিক্ষিত। ওরা পড়াশোনা নিয়েই থাকে।
সত্যব্রত, নাসিমের সঙ্গে প্রথম বর্ষের ছাত্রমৃত্যুতে গ্রেফতার হয়েছেন যাদবপুরের আরও এক প্রাক্তনী হিমাংশু কর্মকার। বাড়ি মুর্শিদাবাদে সামশেরগঞ্জের দুর্গাপুর কর্মকার পাড়ায়। হিমাংশুর গ্রেফতারির পর তাঁর বাড়িতে গেলে দেখা যায় বাইরে থেকে তালা বন্ধ অবস্থায় রয়েছে তাঁদের বাড়ি। হিমাংশুর গ্রেফতারিতে হতবাক এলাকাবাসী। পাড়ারই এক বাসিন্দা বলছেন, আমরা খুবই অবাক। শুনে তো খুবই খারাপ লাগছে। ছোট থেকেই পড়াশোনাতে খুব ভাল। যাদবপুরকাণ্ডে এখনও পর্যন্ত পুলিশের জালে ১৩। তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে নতুন নতুন তথ্য। বাড়ছে অভিযুক্তদের নামের তালিকাও। মৃতের পরিবার চাইছে, দোষীদের শাস্তি হোক। আর ধৃতদের পরিবার বলছে, ষড়যন্ত্রের শিকার। সত্যিটা কী? কাদের দোষে ঝড়ে গেল এক তরতাজা প্রাণ? উত্তরের অপেক্ষায় গোটা বাংলা।