Weather News: বাঁকুড়া-ব্যারাকপুরে ৪০ ডিগ্রি! ‘ঠান্ডা’ পেতে যেতে হবে জয়সলমের?
Weather News: তাপপ্রবাহের ‘গড়’ রাজস্থানে চোখ রাখা যাক। রবিবার জয়সলমেরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের চেয়ে সাত ডিগ্রি কম। অথচ রবিবার বাঁকুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ের তাপমাত্রা ৪০.১ ডিগ্রি।
কলকাতা: এসো হে বৈশাখ! বাঙালির ‘টানে’ বছরের পয়লা দিনেই স্বমহিমায় হাজির বৈশাখ। কবি লিখেছিলেন, দারুণ অগ্নিবাণ। তার রূপ কেমন, চৈত্রেই বোঝানো শুরু করেছিল প্রকৃতি। মাঝে ছোট বিরতি। দক্ষিণবঙ্গে আবার শুরু দহন-দাপট। পয়লা বৈশাখেই চল্লিশ-পার পারদের। তুলনায় এখনও অনেক ‘ঠান্ডা’ রাজস্থান। মরুরাজ্যের জয়সেলমের বা জয়পুর, সব জায়গাতেই রবিবারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দক্ষিণবঙ্গের চেয়ে কম। চোখের পড়ার মতো কম। উত্তর-পশ্চিম ভারতের দিল্লি, অমৃতসর, গুরুগ্রামেও তাই। বলাই যায়, গরমের নিরিখে ‘এগিয়ে বাংলা’!
চলতি মরসুমে বাংলার ‘মেমোরিজ ইন মার্চ’ মোটের উপর মন্দ নয়। বারবার পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আসায় নিয়মিত বৃষ্টি, তার আশীর্বাদে গরম সে ভাবে মাথা তুলতে পারেনি। আশীর্বাদ একটু কমতেই মার্চের একেবারে শেষে ইনিংস শুরু করে গরম। বাঁকুড়ায় ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়ে ফেলে পারদ। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ জুড়ে গরমের প্রবল প্রতাপ। ৪২ ডিগ্রির দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় বাঁকুড়া, পানাগড়, মুর্শিদাবাদের তাপমাত্রা। তার পরই ‘জাদুকাঠি’ নিয়ে মেঘ-বৃষ্টির আবির্ভাব! সব জায়গায় ঝেঁপে বৃষ্টি না হলেও, কাজ হয় হাওয়াবদলে। কমে যায় গরম। ২৭-২৮ ডিগ্রিতেও নেমে যায় বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার তাপমাত্রা। কিন্তু চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়! সুদিন তো নয়ই। আবার হাওয়াবদল। আবার গরমের দাপট।
পূর্বাভাস ছিলই। সেই পূর্বাভাস অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে পয়লা বৈশাখেই ৪০ ডিগ্রি পার তাপমাত্রার। রবিবার বাঁকুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ের তাপমাত্রা ৪০.১ ডিগ্রি। কলকাতার কাছে ব্যারাকপুরেও ৪০ ডিগ্রির ঘরে পারদ। দমদমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮.৯ ডিগ্রি, আলিপুরে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা বেড়েছে উত্তরবঙ্গেও। পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে। বেশ কয়েকদিন গরম হাওয়ার হলকা সইতে হবে পশ্চিমাঞ্চলকে। কিছু জেলায় ফের তাপপ্রবাহের সতর্কতা।
এ বার তাপপ্রবাহের ‘গড়’ রাজস্থানে চোখ রাখা যাক। রবিবার জয়সলমেরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের চেয়ে সাত ডিগ্রি কম। রাজস্থানের চুরু এমন জায়গা, যেখানে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রিতে পৌঁছনোর নজির রয়েছে। সেই চুরুতে রবিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৪ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ ডিগ্রি কম। পঞ্জাবের অমৃতসর (৩০.৩ ডিগ্রি), হরিয়ানার গুরুগ্রামে (৩১ ডিগ্রি) তাপমাত্রা আরও কম। রাজধানীতেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে। রবিবার দিল্লির তাপমাত্রা ছিল ৩২.২ ডিগ্রি, যা কি না বাংলার ব্যারাকপুরের চেয়ে আট ডিগ্রি কম!
মাঝ-এপ্রিলেও উত্তর-পশ্চিম ভারত ‘ঠান্ডা’ কেন?
নেপথ্যে শক্তিশালী পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। মৌসম ভবন বলছে, ইরানের উপর একটি ঝঞ্ঝা রয়েছে। এর প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম রাজস্থানের উপর একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। উত্তর-পূর্ব রাজস্থানের উপর একটি ঘূর্ণাবর্তও রয়েছে। ঝঞ্ঝা আর ঝঞ্ঝার প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্তের জেরে উত্তর-পশ্চিম ভারত জুড়ে বৃষ্টিবাদলা হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যে খুব বেশি, এমন নয়। কিন্তু মেঘলা আকাশ আর বৃষ্টিতেই বাজিমাত। এপ্রিলের মাঝামাঝিও ‘গরমের দেশে’ কাবু গরম।
পশ্চিমী ঝঞ্ঝার আশীর্বাদ কি বাংলা পাবে না?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, উত্তরবঙ্গে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে। তবে দক্ষিণবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা খুবই কম। কেন কম? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা হাবিবুর রহমান বিশ্বাস বলছেন, ‘‘পশ্চিমী ঝঞ্ঝা দক্ষিণ অক্ষাংশে সরে এলে, তবেই দক্ষিণবঙ্গে জলীয় বাষ্প ঢুকে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে। এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা অনেকটা উত্তর অক্ষাংশ হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকে সরে যাবে।’’ তাই অসম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন। দক্ষিণবঙ্গকে আপাতত তীর্থের কাক হয়েই থাকতে হবে।
১৮ এপ্রিল আরও একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কাশ্মীর হয়ে ভারতে ঢুকবে। তার আশীর্বাদ কি পাবে বাংলা? উত্তর পাওয়ার আগে পর্যন্ত সেদ্ধ হওয়াই নিয়তি বঙ্গবাসীর।