‘চুরি’ হল বলেই কি কলকাতায় ১২১ বছরে নজির গড়ল জানুয়ারির শীত!

শীতের শর্তই হল, ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যত কমবে, তত বেশি কাঁপুনি হবে। এ বার সেই তাপমাত্রার গড় দাঁড়িয়েছে ১৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। স্বাভাবিক ১৪ ডিগ্রি। অর্থাত্‍ দেড় ডিগ্রি বেশি।

'চুরি' হল বলেই কি কলকাতায় ১২১ বছরে নজির গড়ল জানুয়ারির শীত!
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Jan 31, 2021 | 7:49 PM

কমলেশ চৌধুরী: গোটা ইনিংসে ঠুকঠুক করে খেললে কী হয়? সহজ কথায়, আস্কিং রেট বেড়ে যায়। তখন স্লগ ওভারে চালিয়ে খেলেও ম্যাচ হাসিল করা যায় না।

এ বছরের শীতে (Winter) জানুয়ারির পারফরম্যান্সেও ঠিক যেন সেই ছবি। রবিবার ছিল মাসের শেষ দিন। আর সে দিনই কি না জানুয়ারির শীতলতম দিন। তাপমাত্রা নেমেছে ১২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, ১২ ডিগ্রির কম ঠান্ডা এ বার প্রাপ্তিই হয়নি কলকাতার। উল্টে ১১ জানুয়ারি পারদ চড়েছিল ২০.৯ ডিগ্রিতে। ৩১ দিনের অঙ্ক একজোট করে আবহবিদরা বলছেন, কলকাতায় এই জানুয়ারিই গত ১২১ বছরের মধ্যে চতুর্থ উষ্ণতম। অঙ্কে রাখা হয়েছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড়কে।

শীতের শর্তই হল, ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যত কমবে, তত বেশি কাঁপুনি হবে। এ বার সেই তাপমাত্রার গড় দাঁড়িয়েছে ১৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। স্বাভাবিক ১৪ ডিগ্রি। অর্থাত্‍ দেড় ডিগ্রি বেশি। আগে শুধু ২০০৯ (১৬.৭ ডিগ্রি), ২০০২ (১৬.১ ডিগ্রি), ১৯৫৭, ১৯৫৮ ও ২০১৬ (১৫.৮ ডিগ্রি)। সর্বনিম্ন তাপমাত্রাই শুধু বেশি ছিল, তা নয়। সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও চার দিন তিরিশের উপরে উঠে যায়। দু’দিন পারদ ছিল ৩০.৭ ডিগ্রিতে।

অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ

অথচ, দেশেরই উত্তর প্রান্তে গোটা শীত জুড়ে জবুথবু করে দেওয়া রেকর্ডভাঙা ঠান্ডা। ৭ বছরের রেকর্ড ভেঙে পয়লা জানুয়ারি দিল্লির তাপমাত্রা নামে ১.১ ডিগ্রিতে। শ্রীনগরের তাপমাত্রা তিন দশকের রেকর্ড ভেঙে নেমেছে মাইনাস ৮.৮ ডিগ্রিতে। বেশ কয়েকবার রাজস্থান, হরিয়ানার কিছু জায়গার পারদও নেমেছে শূন্যের নীচে। অথচ, এই প্রবল ঠান্ডার তেমন ছাপই পড়েনি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতে। মৌসম ভবন অবশ্য শীত পড়ার আগেই বলেছিল, এ বার হাড়কাঁপানো ঠান্ডা পড়বে উত্তর ভারতে। তুলনায় ঠান্ডার দাপট কম থাকবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। আবহবিদদের যুক্তি ছিল, প্রশান্ত মহাসাগরীয় লা নিনার প্রভাবে বায়ুপ্রবাহে যে পরিবর্তন হয়, তাতে উত্তর ভারতে প্রবল ঠান্ডা পড়ে। কিন্তু তা সীমাবদ্ধ থাকে নির্দিষ্ট কয়েকটি রাজ্যেই। পুবের তল্লাটে তেমন আঁচ পাওয়া যায় না। বাস্তবেও হয়েছে তাই।

কিন্তু কেন এমন হল?

হাওয়া অফিসের ময়নাতদন্তে উঠে আসছে বেশ কয়েকটি যুক্তি, জানুয়ারির অনেকটা সময় জুড়ে ‘চুরি’ হয়েছে উত্তরে-পশ্চিমী বাতাস। কোন অর্থে চুরি? দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তান, রাজস্থান থেকে হিম-বাতাসের একটা বড় অংশ চলে গিয়েছে আরব সাগরের দিকে। হিমেল বাতাসের জোগান কমে যাওয়ায় বিহার, ঝাড়খণ্ড, বাংলায় তুলনায় কম ঠান্ডা। অন্য কারণও রয়েছে। যার জানুয়ারির শুরুতে বাংলায় ঢুকছিল ‘ফেক’ উত্তরে-পশ্চিমী বাতাস। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এলেও আদতে তা ছিল বঙ্গোপসাগরের উষ্ণ বাতাস। এর নেপথ্যে অবস্থান বদলে ভিলেন হয়ে যাওয়া উচ্চচাপ বলয়। তৃতীয় কারণটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝাকে ঘিরে। ঝঞ্ঝা না এলে বরফ পড়বে না, পড়বে না ঠান্ডাও। কিন্তু দু’টি ঝঞ্ঝার মধ্যে সময়ের ফারাক না থাকলে থিতু হওয়ার সুযোগ পায় না শীত। এ বার অনেকটাই তাই হয়েছে। তাপমাত্রা কমতে না কমতেই বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে উত্তরে হাওয়া।

মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‌’গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দেখলে বোঝা যাচ্ছে, এ বার জানুয়ারিতে বেশি ঠান্ডা পড়েনি। পশ্চিমবঙ্গে ভাল শীত থাকে মূলত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে। এ বার জানুয়ারির প্রথম ১৫ দিন ঠান্ডাটা কম ছিল। শেষের দিকে এসে ঠান্ডাটা পাচ্ছি। এই যে ভ্যারিয়েশন তা আগে ছিল না, তা নয়। তবে গত দু’দশক ধরে এই ভেরিয়েবিলিটি বা পরিবর্তনশীতলতার হার বাড়ছে। এটাই আমাদের উদ্বেগের কারণ।’

আরও পড়ুন: ‘রুদ্র ভাল অভিনয় করে না, মমতার দয়ায় ১ লাখ টাকার চাকরি নিয়েছিল’, কটাক্ষ সৌগতর

আপাতত ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঠান্ডার এখনকার আমেজ বজায় থাকবে। তার পর ঠান্ডা কমতে শুরু করবে। একটা সময়ের পর ঠান্ডার জায়গা নিতে শুরু করবে গরম। তার পর ফের প্রতীক্ষা ডিসেম্বরের জন্য।