Alipore Central Jail: বন্দিশূন্য ইতিহাস বিজড়িত আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার, নতুন ঠিকানা বন্দিদের
Alipore Central Jail: কিংবদন্তী সব স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরও এক সময়ের ঠিকানা ছিল এই আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারটি। এখানেই প্রায় ৯ মাস বন্দি ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র। সেই ঘটনাকেই সম্মান জানাতে সেখানেই আজ তৈরি হয়েছে 'নেতাজি ভবন'। এছাড়াও নেতাজির রাজনৈতিক গুরু চিত্তরঞ্জন দাসও ১৯৩৪ সালে চার মাস বন্দি ছিলেন এই জেলে।
কলকাতা: আলিপুর জাজেস কোর্ট রোডের দীর্ঘ বাড়িটি দেখলেই একই সঙ্গে হাতছানি দেয় আতঙ্ক এবং ইতিহাস। এখানেই এতদিন বাস করতেন বাংলা কাঁপানো সব দুর্ধর্ষ অপরাধীরা। পাশাপাশি ইংরেজ আমলে এই জেলেই বন্দি ছিলেন বাংলা তথা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে রাজনৈতিক বন্দীরা। কে ছিলেন না সেই তালিকায়। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাস, কানাইলাল, বিধানচন্দ্র রায় থেকে শুরু করে জওহরলাল নেহেরু পর্যন্ত। এখানেই ছিলেন খাদিম কর্তা অপহরণের অন্যতম আসামী তথা জঙ্গি আফতাব আনসারি। সেই আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারটি খালি করে দেওয়া হল মঙ্গলবার। এখানে বসবাস করা বন্দিদের নতুন ঠিকানা হল বারুইপুর জেল।
ইতিহাস অনুযায়ী আদি গঙ্গার পাড়ে ১৯০৬ সালে তৈরি হয়েছিল আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারটি। সেই সময় ইংরেজ শাসকদের পরিকল্পনা ছিল এই জেলটিকে নিশ্ছিদ্র নিরাপদ রাখা। সে কারণেই তারা এই জেলের মাঝখানে তৈরি করেছিল একটি টাওয়ার এবং সেই টাওয়ারকে ঘিরে বন্দিদের রাখার বিভিন্ন ওয়ার্ড। যাতে চুপিসাড়ে নজর রাখা যায় বন্দিদের উপর। পাশাপাশি যদি বন্দিরা বুঝতে না পারেন যে তাদের উপর নজর রাখা হচ্ছে, তাহলে তারাও থাকতে পারবেন অনেক খোলামেলা এবং পাশাপাশি তারা পরিবর্তন করতে পারবেন নিজেদের স্বভাবেও।
কিংবদন্তী সব স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরও এক সময়ের ঠিকানা ছিল এই আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারটি। এখানেই প্রায় ৯ মাস বন্দি ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র। সেই ঘটনাকেই সম্মান জানাতে সেখানেই আজ তৈরি হয়েছে ‘নেতাজি ভবন’। এছাড়াও নেতাজির রাজনৈতিক গুরু চিত্তরঞ্জন দাসও ১৯৩৪ সালে চার মাস বন্দি ছিলেন এই জেলে। ১৯৩২ সালের অক্টোবর মাস থেকে ১৯৩৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত এখানেই বন্দি ছিলেন যতীন্দ্রমোহন বাগচি। আলিপুরের এই সংশোধনাগারের এক তলার চার নম্বর ঘরে বহু বছর বন্দি ছিলেন বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ও।
১৯৩৪ সালে এই জেলে বন্দি হয়ে আসেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু। আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের যে বাড়িটিকে তিনি বন্দি ছিলেন সেই বাড়িটি বর্তমানে তাঁরই নামাঙ্কিত নেহেরু ভবন। শুধু বন্দি থাকাই নয় এই ইতিহাস বিজড়িত সংশোধনাগারটিতে ইংরেজ অত্যাচারে এবং ফাঁসিতে মৃত্যু হয়েছে বহু বহু বিপ্লবীর। সেই তালিকায় রয়েছেন অনন্তহরি মিত্র, প্রমোদরঞ্জন চৌধুরী, বিনয়-বাদল-দীনেশ-এর দীনেশ গুপ্ত, দীনেশ মজুমদার, রাধাচরণ পাল,অসিধারী ঘোষ, আম্বিকাচরণ বসু, ফণীন্দ্রলাল নন্দী প্রমুখ।
গত মঙ্গলবার এই জেলে থাকা ১১৮ জন বন্দিকে ১০টি গাড়িতে করে স্থানান্তরিত করা হল নতুন ঠিকানায়। এই ১১৮জন বন্দির মধ্যে ৭১জনই সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। এই সংশোধনাগারের ৩০জন বন্দিকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় জেলে এবং সম্প্রতি আসা ৪৭জন বন্দিকে পাঠানো হয়েছে বারুইপুরে। সূত্রের মোতাবেক প্রায় ২০০০ জন বন্দির ঠিকানা ছিল আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ২৫টি ওয়ার্ডে। মঙ্গলবার রাত পৌনে ন’টা পর্যন্ত বন্দিদের স্থানান্তকরণের এই প্রক্রিয়া চলে। এ ব্যাপারে কারামন্ত্রী উজ্বল বিশ্বাস জানিয়েছেন ইতিমধ্যেই জেলের ২৫টি ওয়ার্ড সম্পূর্ণ খালি হয়েছে। এবার সরকারের হাতে চাবি তুলে দেওয়া হবে।
গত 9 অক্টোবর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্যের সর্বোচ্চ স্তর। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে শনিবার, ৩০ অক্টোবর আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের জমি (আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার প্রেস-সহ) জমি wbhidco কে হস্তান্তর করা হল আলিপুর এরিয়া ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের (area development project) জন্য। এই হস্তান্তর হয় বারুইপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সুপার অসিত বরণ নস্কর ও হিডকোর এজিএম হবিবুর রহমানের মধ্যে। শনিবার থেকে সংশোধনাগার কর্তৃপকক্ষের আর কোনও অধিকার রইল না আলিপুরের ওই জমির উপরে। তা চলে গেল হিডকোর অধীনে।এতদিন বারুইপুর সংশোধনাগারের অধীনেই ছিল আলিপুর তাই বারুইপুর সুপার এই আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।